সিন্ধু সভ্যতা অথবা হরপ্পা সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
সিন্ধু সভ্যতা অথবা হরপ্পা সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু প্রদেশের নারকানা জেলার একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার খুঁজতে গিয়ে প্রায় ঐতিহাসিক পাথরের শিলা থেকে অনুমান করেন যে সেখানে মাটির তলায় প্রাচীন সভ্যতার বহু ধ্বংসাবশেষ আছে এই জায়গাটির নাম মহেঞ্জোদার বা মিথের স্তুপ। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মহেঞ্জোদারো থেকে ৪৪০ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাবির মনটেগুমারী জেলা হরপ্পা নামক স্থানে এরকম সভ্যতা নিদর্শন পান বিশেষ আবিষ্কারের ফলে সে হিন্দু সভ্যতার বিশেষ কতগুলি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা যায় ৷
পরিকল্পিতভাবে নবনির্মাণে হরপ্পা সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ৷ ঐতিহাসিক মার্টিমার হুইলার মনে করেন যে মহেঞ্জোদারো নগরের পতনের সময় নগর পরিকল্পনা পরীক্ষার নিরীক্ষা পর্যায়ের অতিক্রম করে উন্নতির চরমসীমায় উপনিত হয় এবং হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নিদর্শন পাওয়া যায় ৷ নগরগুলি কত অংশে বিভক্ত ছিল ৷ একটি অংশ অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং সেই উঁচু অংশে একটি দুর্গ অবস্থিত ছিল সেখানে নগরের কর্তৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিগন বসবাস করত ৷ নগরীর নিচু অংশে বসবাস করত দরিদ্রগন অনেক সময় নগরের দুর্গের চারিদিকে এঁটে তৈরি প্রাচীরও থাকতো।
মহেঞ্জোদারো হরপ্পা দুটি শহরের আয়তন প্রায় ১ বর্গমাইল ৷ নগরীর উত্তর দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম দিকে সমান্তরাল ভাবে কয়েকটি রাস্তা চলে গেছে যা গাড়ি চলাচলের উপযোগী ছিল ৷ রাস্তাগুলোই ছিল ৯ থেকে ৩৪ ফুট চওড়া ৷ রাস্তা গুলি থেকে অসংখ্য গলি, গলি গুলির দু'পাশে নাগরিকদের ঘরবাড়ি ৷ বাড়িগুলি পুরা মাটির তৈরি এবং অনেক বাড়ি দুতলা এবং তিন তলা ৷ প্রত্যেক বাড়ির প্রশস্ত উঠান,স্নানাগার ও নর্মদার ব্যবস্থা ছিল ৷ বাড়ির নোংরা জল নর্মদা গিয়ে পড়তো ৷ নর্মদা গুলি পরিষ্কারের ব্যবস্থা ছিল ৷ ডঃ.এ.এল. ব্যাসাম বলেছেন,"রোমান সভ্যতার পূর্বে অপর কোন ছোট প্রাচীন সভ্যতা প্রণালী ব্যবস্থা অন্যান্য সভ্যতা থেকে হরপ্পা সভ্যতা থেকে পৃথক করেছেন৷"
মহেঞ্জোদারো দৈর্ঘ্যের নিকট একটি বৃহৎ স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়েছে স্নানাগারটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৮০ ফুট ৯৯ ফুট চওড়া ২৩ ফুট এবং প্রস্ত ছিল ১৩৫ ফুট ৷ জলাশয়টির গভীরতা ৮ ফুট জলাশয়ে জল প্রবেশ ও নিষ্কাশনের সুব বন্দোবস্ত ছিল ৷ মার্টিমার হুইলার মনে করে," রানাঘাট টি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো এবং সংনিহিত ছোট ছোট ঘর গুলি ছিল পুরোহিতের বাসস্থান"
দুর্গের নিকট বিরাট একটি শস্যাগার ছিল (১৬৯×১৩৫ ফুট ) ৷ সংখ্যায় বিরাট চাতালে শস্য ছাড়াই মাড়াই করা হতো। ডঃ. এ.এল ব্যাসাম, "এটিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন" ৷ মার্টিমার হুইলার বলেছেন যে ,"যে পঞ্চম শতকের পূর্বে এই ধরনের বিশাল শস্যাগার পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায়নি" এই সভ্যতা পৌড়াসভার অস্তিত্বের কথা প্রমাণ করেন ৷ অধ্যাপক গার্ডেন চাইল্ড বলেছেন যে ,"হরপ্পার সভ্যতা পৌর শাসকদের গৃহ নির্মাণের সংক্রান্ত আইন মেনে চলতেন ৷"
সিন্ধু নগর গুলিতে কি ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সে সম্পর্কে কোন প্রমানিক তথ্য নেই ৷ ডঃ এ.কে সরস্বতী বলেছেন যে ,"হরপ্পা নগর গুলি সংগঠনের দেখে মনে হয় এখানে একটি কেন্দ্রীভূত প্রশাসন প্রচলিত ছিল"। ডক্টর কোশাম্বির মতে," প্রজাতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র যাই হোক না কেন এখানে একটি কেন্দ্রীয় শক্তি ছিল"৷ অনেকের মতে এখানে একটি প্রজাতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল ৷ মার্টিমার হুইলার এর মতে," সিন্ধু অঞ্চল ছিল একটি সাম্রাজ্য এবং এখানে একটি ধর্মাশয়ী শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল"
সর্বশেষে বলা যায় রক্ষণশীলতা সিন্ধু সভ্যতার আরো একটি বৈশিষ্ট্য মহেঞ্জোদারোতে ৯টি দালাল কোটা পাওয়া গেছে। একবার প্লাবনের ফলে ধ্বংসাবশেষের উপর গৃহস্থ রাস্তাঘাট নির্মিত হয় কিন্তু প্রত্যেক বাড়ির নির্মিত ও পরিকল্পনা ছিল একই রকম ৷ হরপ্পা সভ্যতা রক্ষণশীলতা দেখে ডঃ টি.গার্ড মন্তব্য করেছেন যে," এই সাংস্কৃতি অপরিবর্তনশীল ধর্মীয় ঐতিহ্যের দ্বারা প্রভাবিত ছিল"৷