লর্ড ডালহৌসির সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা কর লর্ড ডালহৌসি কে ছিলেন অথবা লর্ড ডালহৌসি সম্পর্কে আলোচনা কর Lord Dalhousie

লর্ড ডালহৌসির সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা কর লর্ড ডালহৌসি কে ছিলেন অথবা লর্ড ডালহৌসি সম্পর্কে আলোচনা কর Lord Dalhousie

লর্ড ডালহৌসির সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা কর লর্ড ডালহৌসি কে ছিলেন অথবা লর্ড ডালহৌসি সম্পর্কে আলোচনা কর 

লর্ড ডালহৌসি কে ছিলেন অথবা লর্ড ডালহৌসি সম্পর্কে আলোচনা কর

সাম্রাজ্যবাদ নীতির জন্য কুখ্যাত হলেও তাঁর শাসনকাল নানা প্রশাসনিক ও জনহিতকর সংস্কারের জন্য উল্লেখযোগ্য। ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে বেন্টিস্কের নীতি গ্রহণ করেন এবং তা আরও জোরদার করতে প্রয়াসী হন । বেন্টিদের মতো তিনিও পাশ্চাত্য আদর্শের ভিত্তির ওপর ভারতীয় শাসনব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে যত্নবান হন । ভালহৌসী প্রশাসনকে কেন্দ্রীভূত করে এবং শাসনযন্ত্রের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ সুরক্ষিত করতেই প্রয়াসী হয়েছিলেন । ঐতিহাসিক স্পীয়ার-এর মতে রাজ্যজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ডালহৌসী ভারতবাসীর প্রতি সরকারের নৈতিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কেও সচেতন ছিলেন।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত গভর্নর-জেনারেল তাঁর কাউন্সিলের প্রধান দায়িত্ব ছিল প্রশাসনিক সড়োর বাংলার শাসনকার্য পরিচালনা করা । কলে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বালার গুরুত্বই ছিল বেশী। ডালহৌসীর আমলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

১৮৫৩ ব্রীষ্টাব্দের সনদ-আইন (Chater Act) অনুসারে ভারতের শাসনের ব্যাপারে কয়েকটি সুপারিশ কার্যকর করা হয়, যথা- (ক) বাংলার সুশাসনের জন্য একজন লেফটেনান্ট-গভর্নর নিয়োগ করা হয়। (খ) কেন্দ্রে একটি আইন পরিষদ গঠন করে সমগ্র ভারতের জন্য আইন রচনার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে অর্পণ করা হয়। (গ) কেন্দ্রীয় আইন-পরিষদে প্রাদেশিক সরকারের প্রতিনিধিকে যোগ দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়; (ঘ) ব্রিটিশ-শাসিত সমগ্র ভাবতকে কতকগুলি জেলায় ভাগ করা হয় এবং সেগুলিকে পুনরায় ভাগ করে তহসিলদার, মামলাদার প্রমুখ ভারতীয় কর্মচারিদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়, (৩) ইংল্যান্ডে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে ভারতের প্রশাসনের জন্য কর্মচারি নিয়োগ করে ভবিব্যতে ইঞ্জিয়ান সিভিল সার্ভিসের (ECS) ভিত্তি রচনা করা হয়।

বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার মত মাদ্রাজের কয়েকটি অঞ্চলে পলিগারদের সঙ্গে চিরস্থায়ী-বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু মাদ্রাজের যে সব অঞ্চলে পলিগারদের অস্তিত্ব ছিল না. সেখানে কৃষকদের সঙ্গে 'রায়তওয়ারী-বন্দোবস্থ' প্রবর্তন করা হয়। এই প্রথা অনুসারে নির্দিষ্ট রাজস্বের বিনিময়ে প্রতিটি কৃষকের সঙ্গে জমি বন্দোবস্ত করা হয় এবং কৃষক জমির স্বত্ব লাভ করে। সাধারণত ত্রিশ বছরের মেয়াদে জমি বন্দোবস্ত করা হয়। ১৮২০ খ্রীস্টাব্দে রায়তওয়ারী-বন্দোবস্ত বোম্বাই প্রেসিডেন্সীতেও প্রবর্তন করা হয়।

রায়তওয়ারী-বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হলেও প্রজাদের মালিকানাস্তত্ব স্বীকার করা হয়নি। বহু জমিদারদের পরিবর্তে এক বিরাট জমিদারের অর্থাৎ সরকারের নিয়ন্ত্রণে কুরকদের রাখা হয়। সাধারণ জমিদারসের তুলনায় সরকারী জমিদারিতে গাজনার পরিমাণ বেশী ধার্য করা হয় যা অনেক সময় কৃষকদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ছিল।

গাঙ্গেয় উপত্যকায় সরকার ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি কৃষকের পরিবর্তে প্রতিটি গ্রামের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রাজস্ব বন্দোবস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। রাজস্ববোর্ডের তদানীন্তন সচিব ম্যাকেনজি (Mackenzie)-র ১৮১১ খ্রীষ্টাব্দের সুপারিশ অনুসারে গাঙ্গেয় উপত্যকায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। সরকার ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দের নিয়ম-বিধি (Regulation of 1822) জারী করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যে রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন তা মহলবাড়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হল এই যে, (১) সরকার কোন কৃষক বিশেষের সঙ্গে জমির বন্দোবস্ত না করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তা করেন; (২) প্রতিটি গ্রামের রাজস্বের পরিমাণ মোট হিসারে স্থির করা হয় এবং তা গ্রামের কোন এক দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাধ্যমে আদায় করার ব্যবস্থা করা হয় এবং (৩) প্রতি ৩০ বছর অন্তর জমির খাজনা পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রাখা হয়। এই বন্দোবস্ত অনুসারে ব্যক্তিগতভাবে কৃষকদের ওপর করের বোঝা বেড়ে যায়। গ্রামের সম্পদ সঞ্চয় ও গ্রামবাসীর বৈষয়িক উন্নয়ন ক্ষুন্ন হয় ৷

নতুন এই সব ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নানা পরিবর্তন আসে। ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ও সেই সঙ্গে নতুন প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় ভারতের পূর্বতন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর (যেমন-জমিদারা, কৃষক ও পঞ্চায়েত) ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার বিনাশ ঘটে। এর ফলে প্রাচীন গ্রামীণ সামাজিক সংগঠন ভেঙে পড়ে। এই সংগঠনগুলি ছিল কৃষি সম্প্রদায়ের ধারক। নতুন ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা কৃষকদের পক্ষে মোটেই লাভজনক হয়নি। জমি খরিদ-বিক্রি করার, বন্ধক দেওয়ার ও অন্যান্যভাবে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কৃষকদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে ওঠে। এতকাল পর্যন্ত গ্রামীণ জীবনে যে সামাজিক বন্ধন ছিল-তা বিপর্যস্ত হয়। যৌথ পরিবার প্রথা ও পঞ্চায়েতের ওপর চরম আঘাত আসে। গ্রামীণ জীবনে সহযোগিতার পরিবর্তে আসে প্রতিযোগিতা। পঞ্চায়েতের প্রভাব-প্রতিপত্তির পরিবর্তে আসে মহাজনদের অত্যাচার। মহাজনদের কাছে দরিদ্র কৃষকদের জমি বন্ধক দেওয়ার রেওয়াজ ক্রমেই কৃষকদের সামাজিক। ও আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ-জীবনে কৃষকদের পরিবর্তে মহাজন, বণিক ও সরকারী কর্মচারিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়।

১৭৭৩ খ্রীষ্টাব্দের রেগুলেটিং আইন (Regulating Act) অনুসারে ১৭৭৪ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতায় একটি সুপ্রীম কোর্ট স্থাপন করা হয়। এর অনুকরণে মাদ্রাজ (১৮০১ খ্রীঃ) ও বোম্বাইতেও (১৮২৩ খ্রীঃ) সুপ্রীম কোর্ট স্থাপন করা হয়। কলিকাতা সুপ্রীম কোর্টের প্রথম বিচারপতি ছিলেন স্যার এলিজা ইম্পে। ১৮৫৩ ব্রীষ্টাব্দে এই আদালতগুলির এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা সুনির্দিষ্ট করা হয়। একমাত্র ব্রিটিশপ্রজা, উপরিউক্ত তিনটি শহরের বাসিন্দা ও কোম্পানির কর্মচারিদেরই সুপ্রিম কোর্টগুলির এক্তিয়ারভুক্ত করা হয়। এই আদালতগুলির রায়ের বিরুদ্ধে স-পারিষদ ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর কাছে আপীল করা যেত।

১৮৫৪ খ্রীষ্টাব্দে আইন-কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ভারতীয় হাইকোর্ট আইন (Indian High Courts Act) রচিত হয়। ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে এই সুপারিশ সরকার গ্রহণ করেন এবং পূর্বতন সুপ্রীম কোর্ট ও সদর-দেওয়ানি আদালতের পরিবর্তে কলিকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই হাইকোর্টের প্রতিষ্ঠা হয় ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟