চৌরিচৌরা ঘটনা এবং এর তাৎপর্য লেখো

চৌরিচৌরা ঘটনা এবং এর তাৎপর্য লেখো

চৌরিচৌরা ঘটনা এবং এর তাৎপর্য লেখো

চৌরিচৌরা ঘটনা এবং এর তাৎপর্য

৯২২ সালের চৌরিচৌরা ঘটনাটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের চৌরিচৌরা শহরে ঘটেছিল। ঘটনাটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিণতি করেছিল এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতাদের কৌশল ও মনোভাবের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।


১৯২২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি, মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একদল বিক্ষোভকারী চৌরিচৌরায় জড়ো হয়। অসহযোগ আন্দোলন ছিল একটি শান্তিপূর্ণ আইন অমান্য অভিযান যার লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনকে প্রতিহত করা এবং ভারতের জন্য স্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জবাবে পুলিশ জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এর পরের বিশৃঙ্খলায়, বিক্ষোভকারীরা চৌরিচৌরা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে ভিতরে আটকে থাকা ২২ জন পুলিশ কর্মকর্তার মৃতু হয়। সহিংসতার এই কাজটি মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের নীতির বিরুদ্ধে গিয়েছিল, যা তাকে ১২ই ফেব্রুয়ারী, ১৯২২-এ অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করতে প্ররোচিত করেছিল ।


গান্ধীজীর এই সিদ্ধান্তকে সেদিন জাতীয় কংগ্রেসের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। সুভাষচন্দ্র বসু একে "এক জাতীয় বিপর্যয়" বলে আখ্যায়িত করেন। সাধারণ মানুষও গান্ধীজীর সিদ্ধান্তে হতাশ হন। মতিলাল নেহেরু মনে করেন চৌরিচৌরার ঘটনায় মুষ্টিমেয় জনতার তাৎক্ষণিক উত্তেজনার জন্য তিনি সমস্ত জাতিকে শাস্তি দিলেন। তবে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে এই চৌরিচৌরার ঘটনার তাৎপর্য বা গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়।


ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই চৌরিচৌরার ঘটনা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। সংগ্রামের প্রতি গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে অহিংসা এবং নাগরিক অবাধ্যতার প্রতি তার অঙ্গীকার কে শক্তিশালী করেছিল এই ঘটনাটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্যে আত্মদর্শন এবং পুনর্গঠনের বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলেছিল। আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভারতীয়দের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তা তারা ফুটিয়ে তুলেছিল জনমানসে । বাস্তবে এই ঘটনা ভারতের স্বাধীনতার খোঁজে অহিংস শৃঙ্খলা বজায় রাখার গুরুত্বের স্বাক্ষর হিসেবে কাজ করেছিল ।

গান্ধীজী তাঁর ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় লেখেন এই আন্দোলন স্থগিত না করলে আরো মর্মান্তিক কিছু ঘটনা ঘটে যেত। সারাদেশ এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ হত। তবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এটি একটি বিতর্কিত বিষয় যে গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন কেন! বা তার এই সিদ্ধান্ত চরম ভুল ছিল কিনা ৷


ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকার এই ঘটনার পর ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন কে আরো কঠোরভাবে দেখে অসংখ্য নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয় তারা জনগণের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা সম্পর্কে সচেতন হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে অহিংসার প্রতি মহাত্মা গান্ধীর বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে যা স্বাধীনতা সংগ্রামে চরম প্রভাব ফেলে।


তবে এ কথা ঠিক যে, এই ঘটনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে স্পষ্ট হয়েছিল যে শুধুমাত্র আবেদন নিবেদন করেই কোনদিন ভারতেকে স্বাধীন করা যাবেনা, এই ঘটনার মাধ্যমে ভারতবাসী বৃহত্তর কোন জাতীয় আন্দোলন সংগঠনে মুখর হয়েছিল, আন্দোলনে গান্ধীজীর সিদ্ধান্তকে সবাই মেনে না নেওয়ায় তার জনপ্রিয়তা একদিকে যেমন কমে গিয়েছিল তেমনি গান্ধীজীর সঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মলোমালিন্য শুরু হয়েছিল ৷ তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চৌরিচৌরার ঘটনা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে ।


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ চৌরিচৌরা ঘটনা এবং এর তাৎপর্য লেখো এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟