প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বলকান সমস্যাকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে ? অথবা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বলকান সমস্যার তাৎপর্য কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বলকান সমস্যাকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে ? অথবা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বলকান সমস্যার তাৎপর্য কী ছিল?

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বলকান সমস্যাকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে ? অথবা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বলকান সমস্যার তাৎপর্য কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বলকান সমস্যাকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে ?

তুরস্কের শাসন ক্ষমতার জন্য তরুণ তুর্কীদের সঙ্গে সুলতানের বিরোধের সুযোগে বসনিয়া ও হার্জিগোভিনা প্রদেশ দুটিকে অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয় । অস্ট্রিয়ার এই কাজে জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংলন্ডের সমর্থন করেছিল । এতে স্লাভরাজ্য সার্বিয়া প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় । অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার এই দ্বন্দ্বের ফলেই পরবর্তীকালে মহাযুদ্ধের সূত্রপাত হয় । তুরস্কের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইতালি তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে (১৯১১ খ্রিঃ)। বলকানের জাতিগুলিও এই সুযোগে সঙ্ঘবদ্ধভাবে তাদের স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্কল্প নেয়। বলকান জাতিগুলি একথা উপলব্ধি করে যে, বৃহৎ শক্তিগুলি তাদের স্বাধীনতা লাভে সাহায্য করবে না । বলকানের জাতিগুলিকে নিজ চেষ্টায় স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে । এমতাবস্থায় তুর্কী সুলতানের অত্যাচার প্রতিরোধ ও নিজেদের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠার জন্য ভেনিজোলেস (Venizoles) নামে এক গ্রীক রাজনীতিবিদ বলকান জাতিগুলিকে তাদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে সক্ষম হন । এর ফলে ১৯১২ খ্রিঃ সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং গ্রীস ঐক্যবদ্ধ হলে 'বলকান লীগ' গঠিত হয় । এই সঙ্ঘের লক্ষ্য ছিল তুরস্কের হাত থেকে বলকান জাতিগুলির মুক্তি অর্জন করা ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

ইতিমধ্যে উগ্রপন্থী জাতীয়তাবাদী তরুণ তুর্কীদের দ্বারা ম্যাসিডোনিয়ার অধিবাসীরা নির্যাতিত হয় । বলকান লীগ দাবী জানায় যে, তুর্কী সুলতানকে' ম্যাসিডোনিয়ায় উদারনৈতিক শাসন ও অন্যান্য প্রতিশ্রুত সংস্কার চালু' করতে হবে । তুর্কী সরকার এই দাবী অগ্রাহ্য করলে বলকান লীগ তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে (অক্টোবর, ১৯১২খ্রিঃ ) । গ্রীস, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও মনিটনেগ্রো বলকান লীগের এই চার সদস্য তুরস্ককে চারদিক থেকে আক্রমণ করায় তুরস্কের শোচনীয় পরাজয় ঘটে । এই যুদ্ধের নাম ছিল প্রথম বলকান যুদ্ধ (১৯১২ খ্রিঃ) । তুর্কী সরকার 'লন্ডনের সন্ধি' (৩০ মে, ১৯১৩ খ্রিঃ) দ্বারা প্রথম বলকান যুদ্ধের অবসান ঘটান । কনস্টান্টিনোপল ও থ্রেস বাদে বলকানের অপর সকল অঞ্চল থেকে তুরস্ক তার অধিকার প্রত্যাহার করে নিলে ঐ সমস্ত বলকান অঞ্চল স্বাধীনতা লাভ করে । এর ফলে তুরস্কের ইওরোপীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে ৷

বলকানে তুর্কী সাম্রাজ্য ধ্বংসের ফলে ইউরোপের শক্তিসাম্যের ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা দেয় । কারণ তুরস্কের অধীনতা থেকে মুক্ত বিরাট ভূভাগের আধিপত্য এখন বলকান লীগের ওপর বর্তায় ।তুরস্কের হাত থেকে বলকানকে মুক্ত করার পর ( ১৯১৩ খ্রিঃ) বলকান লীগের সদস্যদের মধ্যে' মুক্ত অঞ্চলের অধিকার' নিয়ে ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ঈর্ষা দেখা দেয় । তুরস্ক যে সকল স্থান বলকান লীগের হাতে ছেড়ে দেয়, তার অধিকার নিয়ে সার্বিয়া ও বুলগেরিয়ার মধ্যে ভয়ানক বিবাদ আরম্ভ হয় । ম্যাসিডোনিয়ার কর্তৃত্ব নিয়ে সার্বিয়া ও বুলগেরিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকেই এই যুদ্ধের সূত্রপাত । লণ্ডন চুক্তি অনুসারে আলবেনিয়া সার্বিয়ার হস্তচ্যুত হয় । এই কারণে সার্বিয়া ম্যাসিডোনিয়া দখল করে তার ক্ষতিপূরণ চায় । সার্বিয়া ছিল সমুদ্র সংযোগহীন রাজ্য । সুতরাং সার্বিয়া দাবী করে যে, মুক্তিপ্রাপ্ত মাসিডোনিয়ায় বৃহৎ অংশ সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলে সার্বিয়া ঈজিয়ান সমুদ্র পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। কিন্তু বুলগেরিয়া, সার্বিয়ার এই দাবী অগ্রাহ্য করে । এদিকে ম্যাসিডোনিয়ায় সার্ব, বুলগার ও গ্রীক জাতির লোক বাস করত । এই কারণে এই জাতিগুলি ম্যাসিডোনিয়ার ব্যবচ্ছেদ দাবী করে । বুলগেরিয়া এই দাবীকে অগ্রাহ্য করে ।

১৯১৩ খ্রিঃ বুলগেরিয়ার সেনাদল গ্রীস ও সার্বিয়াকে অক্রমণ করলে দ্বিতীয় বলকান যারা শুরু হয় । বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত গ্রীস ও সার্বিয়ার সঙ্গে রুমানিয়া ও মন্টিনেগ্রো যোগ দেয় । সম্মিলিত আক্রমণের ফলে বুলগেরিয়া পরাস্ত হয়ে ‘বুখারেষ্ট্রের সন্ধি' (১০ আগস্ট,১৯১৩ খ্রিঃ) স্বাক্ষর করে । বুখারেষ্টের সন্ধির দ্বারা ম্যাসিডোনিয়ার বৃহৎ ভাগ সার্বিয়া, গ্রীসও মন্টিনেগ্রো পায় । বুলগেরিয়া, রুমানিয়াকে দোবরুজা ও সিলিষ্টিয়া ছেড়ে দেয় । তুরস্কএ্যাড্রিয়ানোপল পায় । দুই বলকান যুদ্ধের ফলে তুরস্কের ইওরোপীয় সাম্রাজ্য চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয় তুরস্ক অতঃপর একটি এশিয় শক্তিতে পরিণত হয় । বলকান যুদ্ধের ফলে সার্বিয়া প্রবল হয়ে ওঠে । বুলগেরিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষুব্ধ বুলগেরিয়া অস্ট্রিয়া – জার্মান শিবিরে যোগ দেয় । তুরস্ক অনেক আগেই এই শিবিরে যোগ দিয়েছিল । তুরস্ক দুর্বল হওয়ায় এই দেশ জার্মানির তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।

জার্মানির সঙ্গে তুরস্কের সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে 'বার্লিন-বাগদাদ রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা সহজ হয় । জার্মানির উচ্চাকাঙ্খা অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারের আশাও ফলবতী হয় । শক্তিশালী সার্বিয়া বসনিয়া ও হার্জেগেভিনা উদ্ধারের জন্য অষ্ট্রিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে প্রবৃত্ত হয় । বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ছিল স্লাভ অঞ্চল । সার্বিয়া নিজেকে 'স্লাভ জাতিদের নেতা' মনে করত । বলকান যুদ্ধ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাস্তাবনা বিশেষ । এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত অষ্টো-সার্বিয়া দ্বন্দ্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে । বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে জনৈক সার্বিয় গুপ্তঘাতকের হাতে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফ্রান্সিস ক্যার্ডিন্যান্ড নিহত বলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟