সঙ্গম সাহিত্য বা সঙ্গম যুগ বলতে কী বোঝো

সঙ্গম সাহিত্য বা সঙ্গম যুগ বলতে কী বোঝো

 সঙ্গম সাহিত্য বা সঙ্গম যুগ বলতে কী বোঝো


সঙ্গম সাহিত্য বা সঙ্গম যুগ বলতে কী বোঝো



সঙ্গম সাহিত্য বা সঙ্গম যুগ বলতে কী বোঝো

দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে সংগম যুগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ড. কে. কে. পিল্লাই-এর মতে, প্রথমদিকে তামিলদের ইতিহাসে সংগম একটি উল্লেখযোগ্য সংস্থা। সংগম যুগের নামের সঙ্গে ধ্রুপদী সাহিত্যের বহু গ্রন্থের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যার ফলে সংগম যুগও সংগমসাহিত্য গৌরবজনক অধ্যায় হিসেবে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে। সংস্কৃত শব্দ সংঘের তামিল প্রতিশব্দ সংগম যার অর্থ হল সমিতি বা কতিপয় ব্যক্তির দ্বারা গঠিত কোনো সংস্থা। তামিল সংগম ছিল সাহিত্য অনুশীলনের জন্য কবি ও চারণকবিদের মিলনস্থল। পান্ডরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পৃথকভাবে বিভিন্ন সময়ে স্বতন্ত্রভাবে গড়ে উঠেছিল।


প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী প্রথম সংগম ঋষি আগন্তের দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল এবং এর কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ মাদুরাই। কথিত আছে যে, দক্ষিণ মাদুরাই পরবর্তীকালে সমূত্রে ডুবে যায়। প্রথম সংগমের উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন-আগস্ত, মন্ত্রগরেন, মোদিনগরার প্রমুখ পণ্ডিতগণ। প্রায় ৪,৪৪৯ জন কবি ও চারণকবি প্রথম সংগমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায়ই ১০০০ বছর পর্যন্ত এর আয়ুসকালের মধ্যে এই সংস্থা ৪,৯৫০ জন রাজা পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। প্রথম সংগম সুতোর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি হল অগাথিয়ন, পরিপাদল, কলাবিয়া ধরল প্রভৃতি। দ্বিতীয় সংগমের কেন্দ্র ছিল পাণ্ডুদের দ্বিতীয় রাজধানী অবোবপুরম্ নামক স্থানে।


দ্বিতীয় সংগমের উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন আগন্ত, চৌলকাপিয়ান, পান্ডুয়ান, ভেল্লুর কাপিয়ান প্রমুখ ব্যক্তিগণ। ৩৭০০ জন কবি এই সংগমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ৫৯ জন রাজার পৃষ্ঠপোষকতা তাঁরা লাভ করেছিলেন। ৩৭০০ বছর এই সংগম স্থায়ী হয়েছিল। দ্বিতীয় সংগমের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি হল-কার্লি, ভূত, পরণাণ, পুরুকু, ভেন্ডালী প্রভৃতি। তৃতীয় সংগমের কেন্দ্রস্থল বর্তমান তামিলনাড়ুর মাদুরাই। ৪৪৯ জন কবি এই সংগমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-লোকিলার, কোপিলার, পরাসর, সত্ত্বানর, ইম্বিকিয়ায় প্রভৃতি।


১৮৫০ বছর এই সংগম স্থায়ী হয়েছিল এবং ৪৯ জন রাজা এর পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তৃতীয় সংগমের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি হল-নেদুই থোকাই, পুরস্ থোপাই, নাজ্বিনাই, হারিপরিপাদল প্রভৃতি। তবে এই তিনটি সংগমের মধ্যে একমাত্র তৃতীয় সংগমকে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে এই সংগম গড়ে উঠেছিল বলে মনে করা হয়। সংগমসাহিত্য যে যুগে গড়ে উঠেছিল তাকে সংগম সাহিত্যযুগ বলা হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থার কথা এই সাহিত্যে উল্লেখ করা হয়েছে।


দক্ষিণ ভারতের ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, খ্রিস্টীয় শুরু হওয়ার অনেক পূর্বে ও পরে বেশ কয়েক শতাব্দী যাবৎ সংগম যুগ দ্বায়ী হয়েছিল। খ্রিস্টীয় শতাব্দীর প্রথমদিকে সংগমসাহিত্য সূচির বুর্গ বলে চিহ্নিত করার প্রধান কারণ হল খ্রিস্টীয় শতাব্দীর প্রথমদিকে গ্রিস ও রোমের গ্রুপদী লেখকগণ দক্ষিণ ভারতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে পল্লবযুগের সূচনার সময় থেকে যে নিরবচ্ছিন্ন সংস্কৃতির উন্নতি শুরু হয়। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তারা কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি।


তবে সংগমযুগের সাহিত্যে কালানুক্রম স্থির করা খুবই কঠিন। আধুনিক যুগের পণ্ডিতগণ প্রথম ও দ্বিতীয় সংগমযুগকে কাল্পনিক বলে মনে করে। বিশেষত অতিপ্রাকৃত শক্তিতে সংগম সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত পাণ্ড্যরাজাদের দীর্ঘকাল অবিশ্বাস্য রাজত্ব কাহিনি এবং সংগনযুগের অবিশ্বাস্য ব্যাপ্তি নিঃসন্দেহে সংগমযুগের ঐতিহাসিক সত্যতার ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে। তৃতীয় সংগমযুগের ব্যাপ্তি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে তৃতীয় খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে ড. পিল্লাই সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত সংগমযুগ বিস্তৃত ছিল বলে মনে করেন। কিন্তু ড. এম. পি. চক্রবর্তী মনে করেন, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত সংগমযুগ বিস্তৃত ছিল। গণপতিরাও ও অন্যান্য অনেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার ওপর ভিত্তিরূপে সংগমযুগকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মনে করেন। মাদুরাই-এর সংস্কৃত কেন্দ্র কামরূপ থেকে শুরু করে রোমান্টিক সাহিত্য পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য গ্রন্থ প্রকাশ করে। সামাজিক, রাজনীতি, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে লৌকিক দেবদেবী, সমরবিদ্যা, বৈদেশিক বাণিজ্য ও দর্শনশাস্ত্র ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে লেখকগণ উৎসাহ প্রদান করেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সংগমযুগের পণ্ডিতগণ খুব প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করেন। বিশিষ্ট সাহিত্যকীর্তি ছাড়াও সয়ত্বে সেগুলির সম্পাদনা করেন এবং উপযুক্তভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এইসব কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য একটি স্থায়ী সংস্থা গঠন করা হয়েছিল। সেযুগে ভারতে কোথাও সাহিত্য-সংস্কৃতি রক্ষার জন্য এইরূপ সুষ্ঠু ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সঙ্গম সাহিত্য বা সঙ্গম যুগ বলতে কী বোঝো এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟