একাদশ শতকে গজনীর ভারত আ আক্রমণের প্রকৃতি আলোচনা কর
অথবা,
একাদশ শতাব্দীর গজনীর সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণের চরিত্র বিশ্লেষণ কর
একাদশ শতাব্দীতে গজনির সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণ এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ৷ খাইবার গিরিপথ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের প্রধান । মাহমুদ পৈতৃক সূত্রে গজনি ও সেরোসা লাভ করেন ৷ তাছাড়া ও তিনি মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল অধিকার করেন ৷ তবে প্রধানত ভারতের শস্য শ্যামলা ভূমি ও রাশি রাশি ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন ৷ মামুদের ভারত আক্রমণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে ৷ তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ প্রধানত ইসলাম ধর্মের প্রচারকে প্রধান বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এই মতকে সমর্থন করে না তারা মনে করেন ভারতের ধনসম্পদ লুটের জন্য তিনি বারবার আক্রমণ করতেন ৷ তিনি ১০০০ খ্রিস্টাব্দে থেকে একটানা ২৬ বার ভারত অভিযান করেছিলেন ৷
সুলতান মামুদ ভারতের সাম্রাজ্য স্থাপনের কোনো চেষ্টায় করেননি তিনি ভারতীয় রাজাদের বস্ত্রতা লাভ ও তাদের কাছ থেকে নিয়মিত রাজস্র আদায়ের কোন চেষ্টাও করেননি ৷ তিনি নিজস্ব দিক থেকে ভারতের রাজস্ব স্থাপনের কোন আগ্রহই দেখা দেয় নি । পাঞ্জাব সুলতান নিতান্তই প্রয়োজনবশত তিনি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । ডক্টর রোমেলা থাপার মনে করেন সুলতান মাহমুদ ভারত আক্রমণ করেছিলেন এদেশের অঢেল ঐশ্বর্য ও উর্বর পাঞ্জাবে সমভূমির টানে ৷ তাদের পার্বত্য অনুর্বর অঞ্চলে অপেক্ষা পাঞ্জাবের সমভূমি অত্যন্ত লোভনীয় ও শষ্য শ্যামলা মনে হতো ৷ এছাড়াও তিনি সমর কুশলী যোগ্য ও অভিনয়ক হলেও তার মধ্যে সাংগঠনিক অভাব ছিল ৷ এছাড়াও চীন ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল গুলি থেকে বাণিজ্য করে প্রচুর অর্থ লাভ করলেও মধ্য এশিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে তিনি অধিকতর আকর্ষিত ছিলেন ৷
Related Posts
১০০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিন্ধু প্রদীপ জয় করেন ৷ ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুনরায় পর্বত অভিযান করেন ৷ তিনি নগর কাটা ও কাঁকড়া লুট করেন ৷ তিনি থানেশ্বর আক্রমণ করে মন্দির লুট করেন ৷ এরপর তার মূল লক্ষ্য ছিল কনৌজ ও মথুরা নগরী লুট করা ৷ তার অভিযানের অন্যতম দৃষ্টান্ত গুজরাটের সোমনাথের মন্দির ৷ এটি ছিল তার উল্লেখযোগ্য এবং সর্বশেষ অভিযান এরপর তিনি মধ্য এশিয়ার মননিবেশ করেন ৷
সুলতান মামুদ ইরাক থেকে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত একটি বিস্তৃত ভাগ জয় করেন ৷ ভারত আক্রমণ করলেও আর কোনো স্থায়ীকাল ছিল না তার ভারত অভিযান ছিল সামরিক দলের মতো । ভিন্সেন্স স্মিথ সুলতান মামুদকে এক ক্ষমতাশালী লুণ্ঠনকারী দস্যু হিসাবে অভিহিত করেছেন ৷ তার লুঠের মনোভাব ছিল অবাধ ৷ মূলত তিনি ছিলেন একজন লুঠো রাজ শাসক ৷
তিনি একজন দুক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবেও যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি ৷ তিনি যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা শাসনতান্ত্রিক অনভিজ্ঞতা কারণে রক্ষা করতে পারেননি ৷ সুলতান মামুদকে বর্বর ধর্মান্ধ তুর্কি আক্রমণকারী বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তবে তিনি মোটেও বর্বর প্রকৃতির লোক ছিলেন না ৷ তিনি ভারত লুট করে নির্বিচারে গণহত্যা করলেও বুঝিনি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন সুলতান মাহমুদ ভারত অভিযান হিসাবে ভারতের সামরিক শক্তি ভয়ংকর দুর্বলতা প্রকাশ পায় । ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় পাঞ্জাব ও সুলতান মাহমুদের সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ায় ভারতের ভবিষ্যৎ আক্রমণের পথ খুলে যায় । তবে এই আক্রমণের ফলে ভারতে একটি মিশ্র সংস্কৃতি দেখা যায় ৷
পরিশেষে বলা যায় মামুদের অসাধারণ রনকৌশল ও তাদের অশ্বরোহী সেনার শ্রেষ্ঠত্ব তার অভিযানকে সফল করেছিল ৷ হিন্দু রাজাদের একতার অভাব তাদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে কাজ ৷ তাই এই লুন্ঠান ও ধ্বংসলীলা ভারতীয় রাজাদের নৈতিক শক্তি ও তাদের মনোবল নষ্ট করে দেয় ৷