কোন্ পরিস্থিতিতে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখো। অথবা,স্বদেশী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখো

 কোন্ পরিস্থিতিতে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখো। অথবা,স্বদেশী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখো

কোন্ পরিস্থিতিতে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখো। অথবা,স্বদেশী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখো

 ১৯০৫ খ্রিঃ জুলাই মাসে বড়োলাট লর্ড কার্জন বাংলাকে বিভক্ত করার। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথেই বাংলার সর্বত্র বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। বাংলার মুকুটহীন রাজা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই আন্দোলন দ্রুত প্রসার লাভ করে। 'দি বেঙ্গলি' পত্রিকায় তিনি বঙ্গভঙ্গকে 'এক গুরুতর জাতীয় বিপর্যয়' বলে মন্তব্য করেন। এর সাথেই দেখা দেয় স্বদেশী আন্দোলন।


 বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ক্রমে গণ আন্দোলনে পরিণত হতে থাকে। এই আন্দোলন দুটি পর্যায়ে সংঘটিত হয় 'বয়কট' ও 'স্বদেশি' আন্দোলন। বিলাতি পণ্য সামগ্রী বর্জন ছিল বয়কট আন্দোলনের উদ্দেশ্য। এই লক্ষো সমস্ত স্তরের মানুষ বিশেষ করে ছাত্রসমাজ বিপুল উদ্যমে বয়কট আন্দোলনে সামিল হয়। ছাত্ররা দোকানের সামনে পিকেটিং করে ক্রেতাদের বিলাতি পণ্য না কেনার জন্য অনুরোধ করেন। এমনকি নাপিত, ধোপা, মুচি প্রভৃতি পেশার মানুষ ইংরেজদের কোনো কাজ না করার সংকল্প গ্রহণ করে।


 ছাত্রসমাজ বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলন অধিক সংখ্যায় অংশগ্রহন করায় তৎকালীন মুখাসচিব কার্লাইল একটি সার্কুলার জারি করে ছাত্র- ছাত্রীদের রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ করেন। এটি কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গের আদেশ যেদিন কার্যকর হয় সেদিন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। বাংলার ঘরে ঘরে পালিত অরছন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিকল্পনায় পালিত হয় রাখিবন্ধন উৎসব। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসাবে একে অপরের হাতে রাখি বেঁধে দেয়।



 বয়কট আন্দোলন ক্রমে স্বদেশি আন্দোলনে পরিণত হয়। বিলাতি দ্রবা বয়কটের সাথে সাথে শুরু হয় স্বদেশি দ্রব্যের ব্যবহার, স্বদেশি শিক্ষা ও শিল্পের বিকাশ। এভাবে বয়কটের নেতিবাচক কর্মসূচি পরিণত হয় স্বদেশির ইতিবাচক কর্মসূচিতে। স্বদেশি আন্দোলন ক্রমে বাংলার বিভিন্ন স্থানেই নয় সার ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। সর্বত্র বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহার করার শপথ নেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে কুটির শিল্প ও বড়ো বড়ো কারখানা গড়ে ওঠে। এই কারখানাগুলিতে স্বদেশি বস্ত্র, লবণ, চিনি, সাবান প্রভৃতি উৎপাদন কর হতে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জামদেশপুরে জামশেদজি টাটা প্রতিষ্ঠিত লৌহ-ইস্পাত কারখানা।


 কেবল শিল্প কারখানাই নয়, স্বদেশি আন্দোলনের যজে স্বদেশি শিক্ষারও প্রসার ঘটে। গঠন করা হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। এই পরিষদের তত্ত্বাবধানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।  বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলনে 'সন্ধ্যা', 'যুগান্তর', 'বন্দেমাতরম' প্রভৃতি সংবাদপত্রও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। সংবাদপত্রগুলির ক্ষুরধার লেখনি জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল।


 বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলনে বাংলার কবি ও সাহিত্যিকেরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। কবি মুকুন্দদাসের 'ছেড়ে ফেল রেশমী চুড়ি বঙ্গ নারী', রজনীকান্তের 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই', রবীন্দ্রনাথের 'বাঙালীর ঘরে যত ভাইবোন এক হও এক হও' প্রভৃতি গান ও কবিতা বাংলার মানুষকে দেশপ্রেমের আবেগে উদ্বুদ্ধ করেছিল। স্বদেশি ও বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অশ্বিনীকুমার দত্ত, লিয়াকৎ হোসেন, মুকুন্দ দাস প্রমুখ।


 বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের তীব্রতা যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ব্রিটিশ সরকারের দমননীতিও তত বাড়তে থাকে। এত সত্ত্বেও স্বদেশি আন্দোলনের চাপে বিট্রিশ সরকার ১৯১১ খ্রিঃ ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করে। একই সাথে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।


স্বদেশী আন্দোলনের গুরুত্বঃ


 স্বদেশি বা বয়কট আন্দোলনে ছাত্র, যুবা, নারী, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত প্রভৃতি সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা পরবর্তীকালের ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের সূচনাও হয়েছিল এই স্বদেশি আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে। বাংলায় গড়ে ওঠে 'অনুশীলন সমিতি', 'যুগান্তর' নামে দুটি গুপ্ত সমিতি।


 এই বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করেই জাতীয় কংগ্রেসে চরমপন্থী মতবাদের প্রসার ঘটে এবং ১৯০৭ খ্রিঃ সুরাট কংগ্রেসের অধিবেশনে কংগ্রেস দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বাংলার সাহিত্য ও লোকসংগীত, শিল্পকলা ও বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও স্বদেশি আন্দোলনের অপরিসীম প্রভাব ছিল।


ব্যর্থতার কারণঃ

এই আন্দোলন পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট ও সংগঠিত পরিকল্পনার অভাব ছিল। 

কৃষক, শ্রমিকরা সেই অর্থে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি ৷

মুসলিম সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ আন্দোলনকারীদের হিন্দুয়ানী ও জবরদস্তির ফলে এই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল।

 বয়কট আন্দোলনে মাড়োয়াড়ি ও সাহা বণিকরা অংশ গ্রহণ করেনি।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟