গান্ধীজী কেন অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেণ?
অসহযোগ আন্দোলনঃ
ভূমিকাঃ ১৯২০ সালে কংগ্রেসের কলকাতার বিশেষ অধিবেশনে গান্ধিজী, অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ওই বছর নাগপুরে কংগ্রেসের বাসিন অধিবেশনে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী উন্ন নেতৃত্বই বিভেদ ভুলে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্যঃ
১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন পাশের মাধ্যমে ভারতীয়দের সর্বপ্রকার বাক্তি স্বাধীনতা হরণ করে। বিনা বিচারে যে- কোনো বাক্তিকে আটক রাখা যাবে এবং অভিযুক্ত বাক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের বা আইনজীবী নিয়োগেরও কোনো অধিকার থাকবে না। এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এই কালাকানুন প্রত্যাহার করানো।
রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নিরস্ত্র মানুষের সমাবেশে ইংরেজ সরকার যে জঘন্যতম হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছিল, তাতে সারা দেশে প্রচন্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ডায়ারের শাস্তিদানের দাবীতে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এর উপযুক্ত শান্তিপ্রদান।
অসহযোগ আন্দোলনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ন উদ্দেশ্য ছিল স্বরাজ অর্জন করা। গান্ধিজী বলেন, তিনি এক বছরের মধ্যেই স্বরাজ-এর লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন।
প্রত্যাহারের কারণঃ
অসহযোগ আন্দোলন যখন প্রবলতম আকার ধারণ করে তখন উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ১৯২২ সালে এক শোভাযাত্রার ওপর ইংরেজ পুলিশ গুলি চালালে ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশ চৌকিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ২২জন পুলিশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। ফলে এই আন্দোলন হিৎসার পথে অগ্রসর হচ্ছে দেখে গান্ধিজী এই আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।
গান্ধিজী এভাবে হঠাৎ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভারতে এক হতাশার সৃষ্টি হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহরু, লাজপৎ রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ গান্ধিজীর এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেন। তাঁরা এই সিদ্ধান্তকে জাতীয় বিপর্যয় বলে অভিহিত করেন।
এক্ষেত্রে গান্ধিজি যুক্তি দেখান যে নীতি ও আদর্শভ্রষ্ট হলে জাতীয় আন্দোলনে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া নিরস্ত্র জনগণ হিংসার আশ্রয় নিলে অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জয়লাভ কখনোই সম্ভব নয়।
গান্ধিজীর অসহযোগ আন্দোলনের যেমন উপরোক্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল তেমনি তিনি সত্য ও অহিংসার মহান আদর্শের ওপর ভিত্তি করে এক শোষণহীন ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এজন্য এই আন্দোলন ছিল একাধারে রাজনৈতিক ও মানবতাবাদী।