প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর
রঞ্জিৎ সিংহের সময় শিখশক্তি রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও জাতীয় মর্যাদার চরম শিখরে উঠেছিল । কিন্তু তাঁর মৃত্যুর (১৮৩৯ খ্রীঃ) সঙ্গে সঙ্গে তার অবক্ষয় শুরু হয় । এর প্রধান কারণ ছিল-(১) সামরিক শক্ত্যির ওপর নির্ভরশীল সাম্রাজ্যের দ্বায়িত্বের জন্য যে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও শক্তিশালী শাসকের প্রয়োজন ছিল, রঞ্জিৎ সিংহের মৃত্যুর পর সে ধরনের শাসকের অভাব ঘটে । তাঁর উত্তরাধিকারীদের সকলেই ছিলেন দুর্বল এবং সামরিক নেতৃত্ব ও শাসনদায়িত্ব গ্রহণের সম্পূর্ণ অযোগ্য । রাষ্ট্রে খালসাবাহিনী সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। এই বাহিনীর দুই সেনানায়ক লাল সিংহ ও তেজ সিংহ রঞ্জিৎ সিংহের নাবালক পুত্র দদীপ সিংহকে সিংহাসনে বসিয়ে শাসনক্ষমতা হস্তগত করেন। রঞ্জিৎ সিংহের বিধবা বানী মাতা ঝিন্দন বাই দলীপ সিংহের অভিভাবিকা নিযুক্ত হন।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
লর্ড হার্ডিঞ্জের শাসনকালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৫-৪৬ খ্রীঃ) সংঘটিত হয় । খালসাবাহিনীর ঔদ্ধত্যে শিখ নেতারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন । পারস্যবাহিনীর হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য লাহোর দরবার ইংরেজদের সঙ্গে তাদের সংগ্রামে লিপ্ত করার পরিকল্পনা করেন । এদিকে শিখরাজ্যে গোলযোগের আশঙ্কা করে ইংরাজ সরকার সীমান্ত দুর্গগুলিতে সৈন্য সমাবেশ করে। লাহোরের শিখনেতারাও রানী ঝিন্দন এই সুযোগে খালসাবাহিনীকে ইংরাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করেন। শিখ নেতৃবৃন্দের আশা ছিল যে, খালসাবাহিনী পরাজিত হলে আআদর র প্রত্যন ভাব হ্রাস পাবে। এই অন্তর্থাতী নীতির ফলশ্রুতি হল প্রথম ইস-শিখ যুদ্ধ। ১৮৪৫ শ্রীস্টাব্দে খালসাবাহিনী শতক্ত নদী অতিক্রম করে ব্রিটিশ রাজ্য আক্রমণ করলে প্রথম ইঙ্গ-শিখ ঘর সূত্রপাত হয় হয়। সুদকী, ফিরোজশা ও সোন্নাও-এর যুদ্ধে ইংরাজদের কাছে বালসাবাহিনী পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের মূলে ছিল লাল সিংহের অযোগ্যতা, তেজ সিংহের বিশ্বাসঘাতকতা ও ইংরাজ সেনাবাহিনীর রণনিপুনতা। ১৮৪৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংরাজ বাহিনী লাহোর দখল করলে শিল্পা লাহোরের সন্ধি (১৮৪৬ খ্রীঃ) স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এর শর্তানুসারে (১) ইংরাজ সরকারকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ সহ কাশ্মীর রাজ্যটি ছেড়ে দিতে হয়, (২) শিখ সেনার সংখ্যা হ্রাস করা হয় এবং (৩) ডাহোরে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রাখার ব্যবস্থা হয়।
লাহোরের সন্ধি দীর্ঘকাল স্থায়ী হল না। কারণ শিখরা তাদের পরাজয় চূড়ান্ত বলে মোন নিতে পারল না। এদিকে লাহোরে ব্রিটিশ রেসিডেন্টের ঔদ্ধত্য শিখদের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে।
ইতিমধ্যে রাজমাতা ঝিন্দন ইংরেজ রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন এই অজুহাতে ঝিন্দনকে চুনারের দুর্গে নির্বাসিক করা হলে শিখদের মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং হাজারার শাসনকর্তা শের সিংহ বিদ্রোহ করলে । দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ শুরু হয়।
চিলিয়ানওয়ালা নামক স্থানে ইংরাজদের সঙ্গে শিখদের তুমুল যুদ্ধ হয় (১৮৪৯ খ্রীঃ)। এই যুদ্ধে ইংরাজদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ইংরাজবাহিনী পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে মুলতান আক্রমণ করে। মুলতানের শিখবাহিনী বিপুলবিক্রমে যুদ্ধ করে শেষপর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে। লর্ড ডালহৌসী দলীপ সিংহকে গদিচ্যুত করে এক ঘোষণাবলে পাঞ্জাব দখল করেন (মার্চ, ১৮৪৯ খ্রীঃ)। এই ভাবে রঞ্জিৎ সিংহ প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন শিখরাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটে।
এই যুদ্ধের ফলে-(১) সমগ্র পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়, (২) দলীপ সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করে সামান্য বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়(৩) খালসাবাহিনী তেসে দেওয়া হয় এবং (৪) পাঞ্জাব অধিকার করার ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজের সীমানা আফগানিস্থানের সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।
এই নোটটি পড়লে তুমি কি কি আলোচনা করতে পারবেঃ
- শিখ শক্তির অবক্ষয় সম্পর্কে আলোচনা কর
- প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর
- লাহোরের সন্ধি সম্পর্কে আলোচনা কর
- দ্বিতীয় ইঙ্গ শিখ যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর
- দ্বিতীয় ইঙ্গ শিখ যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করতে পারবেন