ইংরেজদের সাথে রঞ্জিত সিংহের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর। অথবা, রঞ্জিত সিংহের নেতৃত্বে শিখ জাতির উত্থান ও প্রসারের বর্ণনা কর

 ইংরেজদের সাথে রঞ্জিৎ সিংহের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর। অথবা, রঞ্জিত সিংহের নেতৃত্বে শিখ জাতির উত্থান ও প্রসারের বর্ণনা কর

ইংরেজদের সাথে রঞ্জিত সিংহের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

শেখ জাতীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রসার বর্ণনা করঃ


গুরুগোবিন্দ সিংহ (১৬৭৫-১৭০৮ খ্রীঃ) 'খালসা'-র প্রবর্তন করে শান্তিপ্রিয় শিখদের এক সামরিক জাতিতে রূপান্তরিত করে যান যদিও তা ছিল প্রধানত ধর্মীয়। তিনি যে বিপ্লবের সূচনা করে যান তা কিছুদিনের মধ্যেই রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয় এবং সেইসঙ্গে শুরু হয় স্বাধীনতার ও রাষ্ট্রীয় শক্তি অর্জনের সংগ্রাম।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

১৭৩৯ থেকে ১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ্ ও আফগান সম্রাট আহম্মদ শাহ্ আবদালীর বারবার ভারত আক্রমণের ফলে পাঞ্জাবে যে গোলযোগের উদ্ভব হয়, তার সুযোগ নিতে শিখরা ক্রটি ত্রুটি করেনি। ১৭৬৭ খ্রীষ্টাব্দে আবদালী নিরাশ হয়ে ভারত ছেড়ে চলে রাজনৈতিক শূন্যতার পূর্ণ সুযোগ নেয়। তারা রাওয়ালপিণ্ডি ও যমুনা নদীর গেলে শিখরা সেই রাজনৈতিক মধ্যবর্তী অঞ্চলে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তারা পাঞ্জাব ও জম্মুর ওপর নিজের জেদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করে। তারা ১২টি মিশিলে বা দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রথমদিকে সমতার ভিত্তিতে মিশিলের সংগঠন গড়ে ওঠে। মিশিলে সকলের মর্যাদা ছিল সমান। সকলে এক সঙ্গে বে বসে নিজেদের নেতা নির্বাচন করত। কিন্তু ক্রমে মিশিলের গণতান্ত্রিক চরিত্র ক্ষুন্ন হয় এবং শক্তিশালী নেতা বা সর্দার সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। আতৃত্ববোধ ও খালসার ঐক্যের আদর্শ পূর ক্ষুন্ন হয়। ধর্ম ও সামাজিক ক্ষেত্রে শিখদের মধ্যে ঐক্যবন্ধন ছিল বটে, কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বাদ-বিসম্বাদের অন্ত ছিল না ৷

অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে সুকারচুকিয়া মিশিলের অধিপতি মহাসিংহর পুত্র রঞ্জিৎ সিংহের জন্ম হয় (১৭৮০ খ্রীঃ)। শিখদের জাতীয় জীবনের এক সন্ধিক্ষণে পাঞ্জাব কেশরী রঞ্জিৎ সিংহের আবির্ভাব হয়। বারো বছয় বয়সে পিতার মৃত্যুর পর রঞ্জিৎ দিছে সুকারচুকিয়া মিশিলের অধিপতি হন । তিনি একাবারে ছিলেন দুর্ধর্ষ সৈনিক, উপকূশলী সেনাপতি ও গভীর জাতীয়তাবোবে উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক । ১৭৯৯ ও ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি যথাক্রমে লাহোর ও অমৃতসর দখল করেন । এরপর তিনি শতদ্রু নদীর পশ্চিমাঞ্চলের সমস্ত শিখ নায়কদের নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এবং পাড়ারে এক নূতন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা কছেন । তাঁকে শিখরাষ্ট্রের জনক বলা হয় । কিছুদিনের মতোই তিনি কাশ্মীর, মূলতান ও পোশোয়ার দখল করেন ।

মোগলদের প্রবর্তিত রাজস্বনীতির তিনি বিশেষ কিছু পরিবর্তন করেননি। উৎপাদনের অর্ধাংশ তিনি বাজাও হিসাবে ধার্য করেন। ইওরোপীয়দের সাহায্যে বিনি এক শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল ও সুসম্মিত সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনীতে গুর্ণা, বিহারী, পাঠান, ভোগরা, পাঞ্জাবী, মুসলমানদের নেওয়া হ্যা। অনেকের মতে সেই সময় এশিয়ায় ইরোজবাবিনয়ে পরেই রঞ্জিৎ সিংহের বাহিনীর স্থান ছিল।

উত্তরোত্তর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে রঞ্জিৎ সিংহ শিখজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক অখিল শিখরাষ্ট্র গঠনে উদ্যোগী হন। কিন্তু এই পরিকল্পনায় ভয় পেয়ে শিষ নায়করা ইংরাজদের শরণাপন্ন হয় । ইংরেজ সরকার উভয় সঙ্কটে পড়েন একদিকে তাঁরা রঞ্জিৎ সিংহের রাজ্যের সম্প্রসারণ প্রতিরোধ করার গুরুত্ব অনুধাবন করেন । আবার ফরাসী বিপ্লব ও প্রাচ্যের দিকে নেপোলিয়নের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে রঞ্জিৎ সিংহের সাহায্যেরও প্রয়োজন অনুধাবন করেন । এই অবস্থায় ইংরাজরা রঞ্জিৎ সিংহের সঙ্গে ১৮০৯ খ্রীষ্টাব্দে অমৃতসরের সন্ধি করেন। এই সন্ধি অনুসারে (১) শতদ্রু নদী রঞ্জিৎ সিংহের রাজ্যের পূর্ব সীমারেখা বলে নির্দিষ্ট হয়; (২) শতদ্রু নদীর পশ্চিম তীরের শিষ রাজ্যগুলির ওপর ইংরাজদের আধিপত্য স্বীকার করা হয় এবং (৩) উভয়পক্ষ "স্থায়ী মৈত্রী" বজায় রাখতে প্রতিশ্রুত হয়। এই সন্ধির ফলে যমুনা ও শতদ্রু নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে ইংবাজদের আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিখজাতি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। শিখদের এক অংশ রজিৎ সিংহের অধীন হয়, আর এক অংশ ইংরাজদের অধীন হয়। এই সন্ধি রঞ্জিৎ সিংহের অখিল শিখরাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে।

অমৃতসরের সন্ধির পর ইংরাজদের সঙ্গে রজিৎ সিংহের সদ্ভান বজায় থাকলেও, উভয়ের মধ্যে মন মানিল্য চলছিল । এই অবস্থায় ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম বেন্টিক লাহোরে এসে রঞ্জিৎ সিংহের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে "চিরস্থায়ী মিত্রতা" স্থাপন করেন 


এই নোটটি পড়লে তুমি কি কি আলোচনা করতে পারবেঃ 

  • অষ্টাদশ শতকে শিখ জাতির উত্থান 
  • রঞ্জিত সিংহের অধীনে পাঞ্জাব 
  • অমৃতসরের সন্ধি

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟