মেকলে মিনিট- এর গুরুত্ব কী ছিল?
ব্রিটিশ শাসনের প্রথমপর্বে ভারতীয় সমাজ ছিল অশিক্ষা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। ১৮১৩ খ্রি: সনদ আইনের দ্বারা ভারতীয়দের শিক্ষা খাতে প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খরচ করা হবে সে সম্পর্কে এক তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় ভারতের জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবী জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রি:, ২ ফেব্রুয়ারি বড়লাট লর্ড বেন্টিং এর কাছে এক প্রস্তাব দেন, যা 'মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত ছিল।
মেকলে প্রাচ্যের সভাকে দুর্নীতি, অপবিত্র ও নির্বুদ্ধিতা বলে অভিহিত করে সরাসরি পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেন । তিনি বলেন যে, মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তৃত হলে তা 'ক্রমনিম্ন পরিশ্রুত নীতি' সাধারণ দেশবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। অনুসারে ক্রমস পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে ফলে এদেশে এমন একটি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটবে যারা “রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি, মত, নৈতিকত ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ।”
ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রেক্ষাপটে 'মেকলে মিনিট' ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। মেকলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের (৭ মার্চ) পাশ্চাত্যের আধুনিক শিক্ষা ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে সরকারের শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করেন। ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। ভারতের প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হয় এবং এদেশে দ্রুত পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে।
লর্ড মেকলের প্রস্তাবের ফলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিরা সরকারি কাজে অগ্রাধিকার পাবে বলে ঘোষণা করা হয়। সরকারি কাজে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত হয়। অতঃপর সরকারি উদ্যোগে ও আর্থিক সাহায্যে ভারতে পাশ্চাত্য ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসার ঘটে। এর ভিত্তিতে ১৮৩৫ খ্রি: কলকাতায় স্থাপিত হয় মেডিকেল কলেজ এবং বোম্বাইতে এলফিনস্টোন কলেজ।
পরিশেষে বলা যায় ভারতে ইংরেজি শিক্ষার বিকাশে মেকলে মিনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও তার এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত সমাজে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ব্যবধানকে আরো প্রকট করে তুলেছিল।