গর্বাচত অনুসৃত নীতি কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে ত্বরান্বিত করে?
১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে গর্বাচক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এরফলে দেশে এক গণতান্ত্রিক মুক্ত মনের হাওয়া ব ইতে শুরু করেছিল। কিন্তু একই সাথে তাঁর অনুসৃত নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ কাঠামোকে ভঙ্গুর করে তোলে। এর ফলশ্রুতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি ঘটেছিল।
গর্বাচভ ১৯৮৫ সালে মার্চে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও পরে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে দেশের একদলীয় স্বৈরতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদী বিদেশনীতি ও ব্যর্থ অর্থনীতির দেউলিয়া অবস্থা দেখে আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র উভয়ক্ষেত্রে পূর্বের অনুসৃত নীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটান। তাঁর অনুসৃত নীতি গুলি হল- ক) গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকা নীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশে মানবাধিকার ও উদারীকরণ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। খ) কমিউনিস্ট পার্টির শাসনকে আরও গণতান্ত্রিক করতে সচেষ্ট হলেন। গ) পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হলেন। ঘ) বাজার অর্থনীতি প্রচলন করেন।
গর্বাচভের এই সংস্কারমূলক কাজের প্রভাবে সোভিয়েতবাসীর মধ্যে তীব্র উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। তারা গণতন্ত্রের তীব্র আকাঙ্খায় উত্তাল হয়ে ওঠে। অপরদিকে একে প্রতিরোধ করতে রক্ষণশীলরাও জোটবদ্ধ হতে থাকে। গণতান্ত্রিক মানুষের মুখপাত্র হন বরিস ইয়েলেৎসিন। 'গ্লাসনস্তে'র পরিবেশে বিভিন্ন ত্রুটি- বিচ্যুতি খোলাখুলিভাবে জনগণ আলোচনা করতে থাকে। দেশের গণতন্ত্রীকরণের হাওয়ায় সোভিয়েতের বিভিন্ন জাতির এতদিনের অবদমিত আশা ভাষা খুঁজে পায়। তারা স্বাধীন দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখতে থাকে।
এই উদ্দেশ্যে তিনি বরিস ইয়েলেৎসিনের সাথে সমঝোতা করে ১৯৯১সালে ১৭ মার্চ অঙ্গরাজ্যগুলিতে গণভোটের ব্যবস্থা করেন। নয়টি রাজা এতে অংশ নেয়, বাকি ছয়টি রাজ্য এতে অনাস্থা জানায়। সিনিয়র বুশ এই নয়টি রাজ্যকে নিয়ে ফেডারেশন গঠন করেন। ১৩জুন ইয়েলেৎসিন রাশিয়া অঙ্গরাজ্যের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এই পরিস্থিতিতে কট্টরপন্থীরা গর্বাচভকে বন্দি করে ক্ষমতা দখল করলেও জনগণের দুর্জয় প্রতিরোধে মাত্র তিন দিনের মধ্যে গর্বাচভ ক্ষমতা ফিরে পান । কিন্তু এরপর থেকে বরিস ইয়েলেৎসিন সোভিয়েতের ভাগ্যনিয়ন্ত্রকে পরিণত হন। ১৯৯১ সালে ২৫ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে গর্বাচভ পদত্যাগ করলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি ঘটে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পিছনে গর্বচভের ভূমিকা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, গর্বাচভ নিজে কখনো সোভিয়েতের অবলুপ্তি চান । তিনি সোভিয়েতকে পুনর্গঠন করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু সোভিয়েতের ক্ষয়িষ্ণু ইমারতকে তিনি ভেঙে ফেললেও সেই ভগ্নস্তূপের ওপর অট্রালিকা নির্মাণের স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়িত করতে পারেন নি ।