ভারতের স্বাধীনতা আইন বাংলার মানচিত্রে কি প্রভাব ফেলেছিল ?

 ভারতের স্বাধীনতা আইন বাংলার মানচিত্রে কি প্রভাব ফেলেছিল ?



 ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলন যেমন দীর্ঘ তেমনি স্বাধীন ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ছিল বেশ জটিল । ক্রিস মিশন ও মন্ত্রী মিশনের ব্যর্থতা লর্ড ওয়াভেলের অদূরদর্শিতা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বিরোধ মেটাতে পারেনি । কংগ্রেস ও লীগের উচ্চ কর্তৃপক্ষের মধ্যেও দলীয় অন্ত দুন্দুছিল প্রকট । প্রধানমন্ত্রী এটলি বুঝেছিলেন যে, আদর্শগত বা বাস্তব পরিস্থিতি উভয় দিকের বিচারেই ভারত থেকে ইংরেজ সরকারের হাত গুটিয়ে নেওয়া দরকার। কিন্তু স্বাধীন ভারতের রূপরেখা কেমন হবে তা স্থির করতে গিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা হিমশিম খেতে থাকেন । পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িক বিরোধের তীব্রতা ও দাঙ্গার মহামারী পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তোলে ।


লেনার্ড মসলে তাঁর"the last days of British raj" গ্রন্থে লিখেছেন যে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ দ্রুত সম্পাদন করার জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ভারতের বড়লাট হিসেবে পাঠানো হয় । মাউন্টব্যাটেনের দাবি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী এটলি জানিয়ে দেন যে ১৯৪৮ সালে ১লা জুনের মধ্যে ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে। ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনায় বাংলার অবস্থানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জিন্না পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে অটল ছিলেন। বড়লাট মাউন্টব্যাটেন বাংলাকে অবিভক্ত রাখার পাশাপাশি ভারতকেও অখন্ড রাখতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মাউন্টব্যাটেন ও তার সহযোগী জিন্নাকে জানান যে ভারত ভাগ হলে পাঞ্জাব ও বাংলাকেও ভাগ করতে হবে । তাতেও জিন্না রাজি হয়ে যায় ।



১৯৪৬ সালে যখন বাংলায় সাম্প্রতিক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে সেই পরিস্থিতিতে মুসলিম লীগ ও জাতীয় কংগ্রেস বঙ্গ বিভাগের বিষয়ে সম্মত হয়। স্থির হয় যে, বাংলার বিধানসভায় ভারতীয় সদস্যদের দু ভাগে বিভক্ত করা হবে। যে সকল জেলায় মুসলমানের সংখ্যা বেশি সেগুলি এক ভাগে থাকবে। অবশিষ্ট জেলাগুলি অন্যদিকে। এই দুই দল পৃথকভাবে মিলিত হয়ে বাংলাকে বিভক্ত করার পক্ষে অথবা বিপক্ষে ভোট দান করবে। যদি কোন একটি ভাগের অধিকাংশ সদস্য দেশ বিভাগের পক্ষে মত দেয় তাহলে বাংলাদেশকে দু ভাগে বিভক্ত করা হবে। ১৯৪৭ সালে ২০ জুন ভোট গ্রহণ করা হয়। বাংলার যে অংশে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তার সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জন বঙ্গ বিভাগের পক্ষে এবং ২১ জন বিপক্ষে ভোট দেন। অন্য অংশের সদস্যদের মধ্যে ১০৬ জন বঙ্গ বিভাগের বিপক্ষে এবং ৩৫জন বঙ্গ বিভাগের পক্ষে ভোট দেন। বঙ্গ বিভাগ প্রস্তাব গৃহীত হবার পর পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এর প্রধানমন্ত্রী হোন ডঃ প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ । ১৫ ও ১৬ জুলাই যথাক্রমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমন সভা ও লর্ডসভা ভারত স্বাধীনতার বিল পাস করে।



১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত সুহরাবদি মন্ত্রিসভা অবিভক্ত বাংলার শাসন পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। তবে তিনি কেবল পূর্ববঙ্গের শাসন বিষয়ক কাজ চালাবেন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সুহরাবদি কেবল ডঃ প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দেশ দিতে পারবেন। স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন নাজিম উদ্দিন ১৫ ই আগস্ট (১৯৪৭ সালে) ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। ভারত বর্ষ ভেঙে হলো ভারত ও পাকিস্তান। একইভাবে অখন্ড বঙ্গ বা বাংলাদেশ ভারতের মানচিত্র থেকে মুছে গেল। জন্ম নিল পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভারতের স্বাধীনতা আইন বাংলার মানচিত্রে কি প্রভাব ফেলেছিল ? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟