ভারতের স্বাধীনতা আইন বাংলার মানচিত্রে কি পরিবর্তন এনেছিল?
১৯৪৭ সালে উপনিবেশিক শাসনের অবসান ছিল আধুনিক দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি চরম নির্ণায়ক মুহূর্ত ৷ যেহেতু স্বাধীনতার সঙ্গেই ঘটেছিল দেশবাগ তাই সকলেরই আশু উদ্বেগ ছিল রেড়ফ্লিকের অধীনে গঠিত সীমান্ত কমিশনগুলির কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ৷ তা নিয়ে সকলেই এই ১৮৪১ এর জনগননায় তথ্যগুলী ভয়ানক ত্রুটিপূর্ণ ৷ তাই সীমান্ত সীমানা রেখা নিয়ে পাঞ্জাব ও বাংলায় যথেষ্ট সমস্যা দেখা দিয়েছিল ৷
স্বাধীনতা লাভ বাংলার মানচিত্রে যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করেছিল ৷ মানচিত্রে দেখা যায় পূর্র ভারতে পশ্চিমবঙ্গ রইল ৷ ভারতে তার আয়তন ২৮০০০ বর্গমাইল তার জনসংখ্যা ২১,২০০,০০০ যার মধ্যে ৫,৩০০,০০০ জন মুসলমান ৷ তার আর পূর্ব বাংলায় পূর্ব আয়তন ছিল ৪৯,৪০০ বর্গমাইল জনসংখ্যার ছিল ৩৯,১০০,০০০ ৷ ১৯৪৭ এর জুলাই মাসের গণভোটে মিলেট জেলা আসাম রাজ্য থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বদলি করে দেওয়া হয় । খুলনা জেলায় যার জনসংখ্যা ছিল ৪৯.৩℅ ছিলেন মুসলমান তাকে কোন বাধ্য কারণ ছাড়া এই পাকিস্তানি দিয়ে দেওয়াই হয় । অথচ মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, এর মতো ও মুসলমান প্রধান দেশ জেলা গুলোকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই যোগ করা হয় ৷
সমগ্র খুলনা জেলা ওই জেলার সংলগ্ন বরিশাল ফরিদপুরের এক বিরাট হিন্দু এলাকায় পূর্ব পাকিস্তানের দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ আবার পাকিস্তানকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৯৭% বৌদ্ধ হিন্দু বসতি পূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রামের মত এলাকায় লোক ৷ অর্থাৎ দেশ ভাগের আগে দুই বাংলাদেশ যেখানে একত্রিত ছিল সেখানে দেশভাগ দুটি বাংলাকে তুষ্টু করে করেছিল ৷ পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী, পাবনা, যশোর, খুলনা, বাহারগঞ্জ ফরিদপুর, ঢাকা এবং নোয়াখালী ইত্যাদি ৷ অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে যায়গা করে নিয়েছিল কোচবিহার,জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, বর্ধমান, নদিয়া বাঁকুড়া,হুগলী ,হাওড়া কলকাতা এবং মেদিনীপুর ৷
নতুন মানচিত্র ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে জনগনের মধ্যে মানসিক চাপ দেখা দিয়েছিল ৷ শুরু হয়েছিল উদ্বাস্তু সমস্যা, বাংলা যখন ভাগ করা হয়েছিল তখন অনুশীলন মান জনসংখ্যার ৪২% বাস ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ৷ প্রফুল্ল চক্রবর্তী এর হিসাব অনুযায়ী এদের মধ্যে প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ পশ্চিমবাংলায় চলে আসে ৷ বাংলায় এই প্রক্রিয়া ছিল অনেক দীর্ঘ ও জটিল ৷
অর্থাৎ স্বাধীনতার আইন ভারতীয় মানচিত্রে যেমন নতুন রূপদান করেছিল তেমনি বাংলার অতীত মানচিত্র কেউ ভেঙে দিয়েছিল ৷ পূর্ববঙ্গ থেকে গিয়েছিল পাকিস্তানে আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভারতে ৷ ভারত বিভাগের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সীমান্ত চিহ্নিতকরণের প্রয়োজন ছিল ৷ পাঞ্জাব, বাংলা ভাগ করার জন্য স্যার সিরিল রেডক্লিফের নেতৃত্বে দুটি সীমান্ত কমিশন নিযুক্ত হয়েছিল ৷ দুজন মুসলিম ও দুজন হিন্দু বিচারপতি এর সদস্য ছিলেন কিন্তু তারা কোন ঐক্যমত্য না আসায় রেডক্লিফের প্রক্রিয়া সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে মেনে নেয় ৷