নোয়াখালি দাঙ্গা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

  নোয়াখালি দাঙ্গা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

নোয়াখালি দাঙ্গা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

নোয়াখালি দাঙ্গা নোয়াখালি গণহত্যা নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯৪৬ সালে অক্টোবর-নভেমম্বর মাসে এই দাঙ্গা সংঘটিত হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের নোয়াখালী জেলায় স্থানীয়দের দ্বারা সংঘটিত ধারাবাহিক গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর, লুঠপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা হল এই নোয়াখালী দাঙ্গা। কলকাতা দাঙ্গার রেশ ধরেই এই ভয়াবহ নোয়াখালী দাঙ্গা ঘটে। যদিও এর পূর্ববর্তী কলকাতা দাঙ্গা ও পরবর্তী বিহার দাঙ্গার থেকে হতাহত সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। নোয়াখালি জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া থানা ও ত্রিপুরা জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর থানার অধীনে প্রায় ২০০০ বর্গ কিমি এলাকা এই দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


 ১৯৩৭ সালে ভারতের প্রদেশগুলিতে নির্বাচন হলে বাংলার প্রাদেশিক ক্ষমতা চলে আসে মুসলিমদের হতে। কিন্তু দীর্ঘ ইংরেজ শাসনে হিন্দুরাই ছিল মূলত শাসকের অধীনে অধিষ্ঠিত। এছাড়া শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবেও হিন্দুরা এগিয়ে ছিল। ফলে নব্য মুসলিম রাজনীতির উত্থানকে হিন্দুরা ভালোভাবে নেয়নি। শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রসরমান হিন্দুরা নতুন মুসলিম সরকারকে নানাভাবে অসহযোগিতা করতে থাকে, যার প্রকাশ ঘটে নোয়াখালির বহু স্থানে। হিন্দুরা যেমন মুসলিমদের রাজনৈতিক উত্থানে উদ্বিগ্ন ছিল, তেমনি মুসলিমদের একটি অংশ হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে তাদের পুরানো ক্ষোভ উগরে দেবার সুযোগ খুঁজছিল। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে তারা সেই সুযোগ পেয়ে যায়। 



মূলত ইংরেজ শিক্ষা-সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাওয়া হিন্দু শিক্ষকরা মুসলিম ছাত্রদের খাতায় কম নম্বর দেওয়ার প্ররোচনা, চাকরিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার নানা অভিযোগ, হিন্দু সংখ্যাগুরু প্রদেশগুলিতে মুসলিমদের খারাপ অবস্থা, বঙ্গভঙ্গ বদ, বাংলার মুসলিম প্রধান অঞ্চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে হিন্দুদের প্রবল বিরোধীতাসহ নানা কারণে বাংলার মুসলিমদের সাথে হিন্দুদের সম্পর্ক খারাপ পর্যায়ে যায়। এর পর হিন্দু প্রধান কলকাতায় মুসলিমদের একটি রাজনৈতিক কর্মসূচীকে ঘিরে সেখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের সম্মিলিত হামলা এবং তাতের হাজার হাজার মুসলিম নিহত হবার খবর অতিরঞ্জিতভাবে ছড়িয়ে পড়ায় পূর্ববর্তী পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে যেন নতুন করে ঘৃতাহুতি দেয়। ইংরেজ শাসনে মুসলিমদের দীর্ঘ বঞ্চনা এবং তার সাথে যুক্ত হওয়া কলকাতায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ, এই ক্ষোভ থেকেই মূলত নোয়াখালি হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সংগঠিত হয় বলে মনে করা হয়। এছাড়াও উল্লেখযোগা একটি ঘটনা হল, দাঙ্গা শুরু আগে গুজব রটে যায় যে, রামগঞ্জের জমিদার রাজেন্দ্রলাল চৌধুরী তার বাড়ির পূজোয় এক মুসলিম বালককে বলি দিচ্ছেন, যা দাঙ্গা সৃষ্টিতে প্রবল ইন্ধন যোগায়।


 খুব দ্রুত এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। গোলাম সরোয়ার হুসেনির বক্তব্যের পর রামগঞ্জ থানার আওতাধীন বাজারের হিন্দু দোকান মুসলিমরা লুট করে। মুসলিমরা নোয়াখালি বাজারের সভাপতি এবং হিন্দু মহাসভার নেতা সুরেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর বসতবাড়ি আক্রমণ করে।


 ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন নোয়াখালির হিন্দুরা বাড়িতে পূজার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন। অন্যদিকে মুসলিম লিগ নেতা-কর্মীরা প্রচার করে যে, শিখ সম্প্রদায় দিয়ারা শরীফ আক্রমণ করেছে। এই গুজবের ফলে আশপাশের এলাকার মুসলিমরা দলে দলে দিয়ারা শরিফে জড়ো হয় এবং সাহাপুর বাজার আক্রমণ করে। মুসলিগ নেতা কাশেমের ফৌজ নারায়ণপুর থেকে সুরেন্দ্রনাথ বসুর জমিদার অফিসের দিকে এগিয়ে যায়। সামান্য প্রতিরোধের পরেই সুরেন্দ্রনাথ ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। মুসলিম জনতা হাত-পা বেঁধে তাকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।


১০ অক্টোবর রায়পুর ও রামগঞ্জে লুণ্ঠন, হত্যা, অগ্নিকান্ড শুরু হয়। ১৪ অক্টোবরে রায়গঞ্জ বাজার সংলগ্ন গ্রামগুলিতে অগ্নিকান্ড দেখতে পেয়ে প্রায় দুই-শত নরনারী স্থানীয় থানায় আশ্রয় নেয়। সংগঠিত মুসলিম জনতা এই সময় রায়পুরের সকল দেব-দেবীর বিগ্রহ ভেঙে ফেলে, মন্দিরগুলি ধ্বংস করে এবং হিন্দু দোকান-বাড়িঘর লুঠ করে খানায় প্রবেশ করে। থানার মুসলিম দারোগা সব হিন্দু পুরুষকে থানা থেকে জোর করে বের করে দেয়। উনাত্ত মুসলিম জনতা এসময় তাদের তীব্রভাবে প্রহার করে স্থানীয় বড় মসজিদে নিয়ে গিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে এবং গো-মাংস খেতে বাধ্য করে। 

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ নোয়াখালি দাঙ্গা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟