নৌ বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা কর
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্বে এক উল্লেখযোগ্য সংগ্রাম হলো ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌ বিদ্রোহ ৷ আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচার এবং নৌবাহিনীর অভ্যন্তরে ভারতীয়দের অবহেলা অমর্যাদা ভারতীয় নৌ সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহীর মনোভাব জাগিয়ে তোলে ৷ সুদীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের মনোভাব এই নৌ বিদ্রোহ ছিল শেষ ফ্ল্যাট কর্ম যা অতিক্রম করে ভারতীয়রা পৌঁছেছিল স্বাধীনতার স্বাদ ৷ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই বন্দরে রয়েল ইন্ডিয়ান নেভির তলোয়ার নামক জাহাজে রয়েল ইন্ডিয়ান নেভির প্রধান এম এস খানের নেতৃত্বে ১৫০০ নাবিক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন বোম্বাইয়ের বাইশটিজাহাজ এবং কারাচীর হিন্দুস্তান জাহাজে এই বিদ্রোহের সূচনা ঘটে ৷ এই বিদ্রোহের পিছনে একাধিক কারণ ছিল যেমন,
প্রথমতঃ ব্রিটিশ সরকারের বর্ণময়ী সমূহ নীতি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহের এক অন্যতম কারণ এই নীতি অনুযায়ী নৌ বাহিনীর সমস্ত উচ্চপদ গুলি ইংরেজিদের জন্য সংরক্ষিত ৷ ভারতীয় নাবিকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বেশি থাকা সত্ত্বেও উচ্চ পথ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হতো । যার ফলে তাদের মধ্যে একটি ক্ষোভের সঞ্চার হয় ।
দ্বিতীয়তঃ ভারতীয় নৌ সেনাবাহিনীতে জাবিন ও বিদ্বেষের কারণে ইংরেজ তরুণ নৌ অফিসাররা নিজেদের দাম্ভিকতার জুড়ে ভারতীয় নৌ সেনাদের প্রতি খারাপ আচরণ বা দুর্ব্যবহার করত ৷
তৃতীয়তঃ ইংরেজদের তুলনায় ভারতীয় নাবিকরা নিম্নমানের খাদ্য ও পোশাক পেতো এমনকি তাদের আবাসযোগ্য এলাকায় তাদের থাকতে দেওয়া হতো। এই জন্য তারা সরকারের কাছে বারবার বারবার অভিযোগ করত কিন্তু এর কোন সুফল তারা পায়নি
চতুর্থতঃ ভারতীয় ও নাবিকদের নিম্নমানের পুরানো অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হতো বলে যুদ্ধক্ষেত্রে বেশি প্রাণ তাদেরই যেত ৷ ব্রিটিশ সরকারের এই বৈষম্য মূলক আচরণের বিরুদ্ধে বার বার প্রতিবাদ জানিয়েও ভারতীয় নৌ সেনারা কোন সুফল পায়নি । তাই ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধে ওঠে ৷
পঞ্চমতঃ ভারতীয় নৌ কর্মচারীদের কোনদিন পদোন্নত হতো না ৷ চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরে ভারতীয় নৌ সেনাদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা ছিল না ৷
ষষ্ঠতঃ কাম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম, লাউস ও মায়ানমারের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যে মুক্তি সংগ্রাম আন্দোলন গড়ে ওঠে ভারতীয় সেনাদের উপর তার প্রভাব পড়ে ৷
নো অধ্যক্ষ এডমিরাল তলোয়ার নামক যুদ্ধজাহটি পেরিয়ে এলে জাহাজের রেড়িও অপরেটার বলাই দত্তের নেতৃত্বে কয়েকজন ভারতীয় নৌকর্মচারী তাদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য জাহাজের গায়ে 'ইনক্লাব জিন্দাবাদ','ব্রিটিশ কোয়াইট ইন্ডিয়া','বন্দেমাতারাম', 'জয় হিন্দ' প্রভৃতির দেশপ্রেমূলক ধনী লিখে রাখেন ৷ এতে নো অধ্যক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে বলাই দত্তকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন এই গ্রেফতার কে কেন্দ্র করে 1946 খ্রিস্টাব্দে ১৮ ফেব্রুয়ারি নৌ বিদ্রোহ সূচনা হয় এই বিদ্রোহের মাদ্রাজ,কোচিং,করাচি প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে নৌ বিদ্রোহের পর পরেই ইংরেজরা স্থির সিদ্ধান্ত ও আসতে বাধ্য হয় যে ভারতে আর তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসন কায়েম রক্ষা সম্ভব নয় ৷ এই পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিটিশ প্রশাসন শীঘ্রই ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠাতে বাধ্য হন ৷
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ
- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌ বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহের কারণ কি ছিল এই বিদ্রোহের গুরুত্ব আলোচনা কর
- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌবৃদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর