খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম স্বত:স্ফূর্ত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে খিলাফত আন্দোলন উল্লেখযোগ্য দিক হিসাবে পরিগণিত হয় ৷ এ আন্দোলনের উপর নির্ভর করে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ৷ জাতীয় আন্দোলনকে খিলাফত নামক অক্সিজেন দিয়ে জীবন্ত প্রাণবন্ত করে তুলতে চেয়েছিলেন জাতীয় নেত্রী বর্গ ৷ যদিও এই আন্দোলন ভারত মাতার মুক্তির অপেক্ষার তুরস্কের খলিফা পদ নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন ৷ জওহরলাল নেহেরু মনে করেন যে," এই আন্দোলন জাতীয়তাবাদ রাজনীতি ও ধর্মের অপূর্ব মেলবন্ধন ছিল ৷"
খিলাফত শব্দটির অর্থ হল উত্তরাধিকারী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজিত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক ছিল অন্যতম। তুরস্কের প্রতি মিত্রশক্তি (ইংল্যান্ড, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স) চরম অবমাননাকর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল খিলাফত বাতিল ঘোষণা করা । তুর্কি সুলতানরা নিজেদের মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে দাবি করতেন। কিন্তু উসমানীয় সালতানাতের অবসান ঘটিয়ে তুরস্কে প্রজাতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে খিলাফতের অবসান ঘটে। ফলে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মতই ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমরা তুরস্কের খলিফার সাম্রাজ্যের অবসান মেনে নিতে পারেনি । মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলী আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের নেতৃত্বে তুরস্ক বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার নিন্দা করেন এবং সরকার বিরোধী এক শক্তিশালী আন্দোলনের ঘোষণা করেন। খিলাফতকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ খিলাফতকে টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় এটিকে 'খিলাফত আন্দোলন' বলা হয় । মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় ঘটলে মিত্র শক্তি পরাজিত তুরস্কের ওপর ১৯২০ সালের মে মাসে অবমাননাকর 'সেভার্সের চুক্তি' চাপিয়ে দেয় ৷ তাতে ক্ষিপ্ত হয় ভারতের মুসলমানগণ কারণ তুরস্কের সুলতান ছিলেন মুসলমান ধর্ম জগতের গুরু বা খালিফা ।
এই খালিফার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী খিলাফত আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ঘোষণা করেন যে ব্রিটেন ,ফ্রান্স, তুরস্ক সাম্রাজ্য থেকে এশিয়ার মাইনর এর থ্রেস অঞ্চল বিচ্ছিন্ন করবে না ৷ কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ব্রিটিশ সরকার তার পূর্ব ঘোষণা অমান্য করে ৷ ফলে ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় শওকত আলী ও মহম্মদ আলী নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন শুরু করে ৷
.
খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও দাবী ছিল, প্রথমত বিশ্বের মুসলমান রাষ্ট্রগুলির অখণ্ডতার রক্ষার দাবি জানায় ৷ দ্বিতীয়ত, সমগ্র আরব অঞ্চল তুরস্কের খালিফা হাতে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই ৷ তৃতীয়ত, পবিত্র মক্কা মদিনার উপর বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধ রাখতে হবে ৷ চতুর্থত, খালিফা সাম্রাজ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে ৷ পঞ্চমত, খালিফার প্রার্থীব ও ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চলবে না ৷ ষষ্ঠত, মেসোপটেমিয়া, আরব, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে খালিফার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে হবে ।