নেহেরু রিপোর্ট সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, Nehru Report 1928
ভারত সচিব লর্ড বাকেনহেড(১৯২৪-২৮খ্রিঃ.) দুবার ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে সকল রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্য এক সংবিধান রচনার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ৷ এই ব্যাপারে ভারতীয় অক্ষমতার প্রতি তিনি বিদ্রুপাত্মক কটাক্ষ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি ৷ ভারত সচিবের এই চ্যালেঞ্জ কংগ্রেস গ্রহণ করে এবং মুসলিম নেতা এ এম আনসারী নেতৃত্বে দিল্লিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত একটি সর্বদলীয় সম্মেলনে মতিলাল নেহেরু নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির উপর ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ মতিলাল নেহেরুর আগস্ট মাসে সর্বদলীয় সম্মেলনের লখনৌ অধিবেশনে ভারতের স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে সংবিধানের একটি খড়সা পেশ করেন এটি নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত ৷
এই রিপোর্টে কতগুলি প্রস্তাব পেশ করা হয় সেগুলি হল , যথা -
- ভারতকে পূর্ণ ডমিনের মর্যাদা দিতে হবে
- কেন্দ্রে ও প্রদেশের দায়িত্বশীল সরকার গঠন করতে হবে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের নিম্নপক্ষ ও প্রাদেশিক আইন পরিষদ গুলির জনগণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হবে
- প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করতে হবে এবং কেন্দ্রে ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট ভাবে বন্টন করতে হবে
- সংবিধানের জনগণের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত থাকবে ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলি ধর্মভাষা ও সংস্কৃতির নিরাপত্তা বিধান করতে হবে
- কয়েকটি ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়া সর্বত্র যৌথ নির্বাচন প্রচলন করতে হবে
- যেসব প্রদেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি সেখানে মুসলিম আসন সংরক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে
- সিন্ধকে বোম্বে থেকে আলাদা করা ,
- এন.ডব্লিউ.এফ.পি.কে পূর্ণ প্রাদেশিক মর্যাদা দেওয়া ,
- দক্ষিণ ভারতে একটি নতুন কানারি-ভাষী প্রদেশ কর্ণাটিক প্রতিষ্ঠা করা ।
- হিন্দীকে ভারতের সরকারী ভাষা করা ।
রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি পৃথকভাবে ওই রিপোর্টের বিচার বিবেচনা করে কংগ্রেসের কার্যনির বাহক সমিতি এটা সমর্থন করে, কিছু শিখ নেতৃবৃন্দ রিপোর্টে প্রস্তাবিত সাম্প্রদায়িক ধারাগুলি গ্রহণে অসম্মত হন । সংখ্যালঘু হিসেবে ওদের বিশেষ অধিকার গুলি স্বীকৃত না হওয়ায় হরিজনেরা অসন্তুষ্ট হন ৷ জাতীয়তাবাদী মুসলমানেরা নেহেরুর রিপোর্ট মেনে নেয় ৷ কিন্তু দিল্লিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় মুসলিম সম্মেলনে নেহেরু রিপোর্টের প্রস্তাবগুলি বর্জন করে ৷
 

