দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) কে ছিলেন? ভারতীয় সভ্যতার বিস্তারে তাঁর ভূমিকা কেমন ছিল?
পাল যুগে বাংলার প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও বৌদ্ধপণ্ডিত ছিলেন দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ)। বঙ্গাল অঞ্চলের বিক্রমণিপুরের বজ্রযোগিনী আমে ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাল্যনাম ছিল চন্দ্রগর্ভতাঁর পিতা ও মাতা ছিলেন যথাক্রমে কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতী। উনিশ বছর বয়সে তিনি ওদন্তপুরী মহাবিহারের অধ্যক্ষ শীলরক্ষিতের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন এবং তাঁর নাম হয় দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ)। তিনি ধর্মরক্ষিত ও জেতাবির ছাত্র ছিলেন। পালরাজ মহীপালের আমন্ত্রণে তিনি মগধের বিক্রমশীল মহাবিহারের অধ্যক্ষপদ গ্রহণ করলে তাঁর খ্যাতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ব্রহ্মদেশ, সুবর্ণভূমি, সিংহল, তিব্বত প্রভৃতি দেশে সফর করেছিলেন।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ভারতীয় সভ্যতার বিস্তারে দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ)-এর ত্যবদান মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার: দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) নানা দেশে মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। তিনি ব্রহ্মদেশ, সুবর্ণভূমি, সিংহল প্রভৃতি দেশে গিয়েছিলেন। তিব্বতের রাজা জ্ঞানপ্রভের অনুরোধে ১০৪০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি তিব্বত সফর করেন। তিনি সেখানে দীর্ঘ ১৩ বছর বিশুদ্ধ মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার চালান। তাঁর প্রচেষ্টায় তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
তিব্বতে থাকাকালীন দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) প্রায় ২০০টি বৌদ্ধগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, বোধিসত্ত্বমান্যবলি ইত্যাদি হল তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) বেশ কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বহু সংস্কৃত ও পালি গ্রন্থ তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) তিব্বতে ভারতীয় বর্ণমালার প্রবর্তন করেন। এর ফলে ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে তিব্বতবাসীর জ্ঞানবৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত হয়। দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) বৌদ্ধধর্ম প্রচারের পাশাপাশি একটি বৌদ্ধসম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় তিব্বত, কোরিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার ঘটে। এজন্য তিব্বতীয় লামা ও সাধারণ মানুষের কাছে এবং কোরিয়া প্রভৃতি দেশে দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) 'দ্বিতীয় বুদ্ধ' রূপে পূজিত হন।
