প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস সম্পর্কে আলোচনা কর
প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসন ও নিয়মিত বন্য হিন্দুর আধিপত্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মুসলিম লীগ আহিত হরতাল । মুসলিম লীগ ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করে এর ফলে মুসলিম লীগ রাজনৈতিকভাবে কোলঠাসা হয়ে পড়ে । আবার জিন্নার দাবি কংগ্রেস মান্যতা না দেওয়া ফলে মন্ত্রী মিশন তথা ক্যাবিনেট মিশনের ব্যাপারে ব্যর্থতার জন্য লীগ এই কর্মকে ব্রিটিশের বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করে । আর এর ফলেই লিগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিয়ন্তান্ত্রিক পদোন্নীকে বিদায় জানিয়ে পাকিস্তান অর্জনের জন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রাম কর্মসূচির ডাক দেন । ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট সংগ্রামের দিন নির্ধারিত হয়।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৬ আগস্ট ভারতের সকল প্রদেশে সব রকম ব্যবসায়ী কার্যকলাপ বন্ধ রাখা ও সর্বাত্মক হরতাল পালনের জন্য লীগ নেতৃবৃন্দ ও মুসলিম জনসাধারণের প্রতি এক নির্দেশ জারি করা হয় । বাংলায় নবগঠিত লীগের নেতা ও প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী সেহারা ভর্তি তালুকদার ঘোষণা করেন যে,"বাংলায় প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসটি রীতিমতো জঙ্গি মেজাজে পালিত হওয়া উচিত।" ওই দিবসটিকে সফল করার উদ্দেশ্যে এক ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং এর ফলে এক ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয় পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং এই নিষ্ঠুর দাঙ্গায় প্রচুর পানহানি হয়।
১৬ থেকে ২০ আগস্ট ব্যাপী এই দাঙ্গায় কলকাতায় এক বিরাট অংশজুড়ে আগুন জ্বলতে থাকে । প্রথমে লিগ সদস্যরা আক্রমণ চালায় দুইদিন পর শুরু হয় হিন্দুদের পাল্টা আক্রমণ । এই দাঙ্গায় প্রায় চার হাজার মানুষ পান হারায় এবং প্রায় দু কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয় । কলকাতায় এই দাঙ্গার আগুন অচিরেই অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষ করে বিহার ও নোয়াখালী জেলায় ছড়িয়ে পড়ে । কলকাতা এই দাঙ্গা উভয় পক্ষের জন্য ছিল সমান ক্ষতিকর । তবে অন্যত্র এটি একতরফা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় । বিহারে প্রায় একপেসে ভাবে মুসলমান ও নোয়াখালীতে হিন্দুরা পান হারায় । তাই সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস প্রত্যক্ষ ফল প্রদান করে । ওই দিনই ভারতের নিয়তি নির্ধারিত হয় এবং যুক্ত বাংলার নিরবিচ্ছিন্ন অস্তিত্বের বিষয়টি চিরকালের মতো নির্ধারিত হয়ে যায় । অর্থাৎ ভারত বিভার্জন অনিবার্য হয়ে ওঠে ।