হিউয়েন সাঙ
ভারতবর্ষ হল এমন একটি দেশ যেটি বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন বর্ণের এবং বিভিন্ন দেশের নানা সম্প্রদায়ের মিলনস্থল। তাই এই মিলনক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের ন্যায় চিনের সাথেও পরিচয় ঘটে। এই পরিচয় ঘটার ক্ষেত্রে চৈনিক পরিব্রাজকদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে ভারত থেকে চিনে বৌদ্ধধর্ম প্রসারিত হওয়ার পর এই সম্পর্ক আরও দ্য হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে যে সকল চৈনিক পরিব্রাজক এসেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিউয়েন সাঙ। সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের ১৪ বছর (৬৩০-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) ভারতবর্ষে অতিবাহিত করেন। তিনি সম্রাট হর্ষবর্ধনের পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করেন। তাঁর লেখনির ভিত্তিতে সমকালীন যুগের ভারতবর্ষ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।
হিউয়েন সাঙ-এর লেখা গ্রন্থটির নাম 'সি-ইউ-তি'। ভারতবর্ষ পরিদর্শন সমাপ্ত করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার পর চিন সম্রাটের অনুরোধে তিনি এই গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি ভারতীয়দের চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষের সর্বাধিক উৎপন্ন ফসল হল ধান ও গম। এছাড়া ডাল, সরিষা, লাউ, কুমড়ো, তরমুজ বিভিন্নরকম শাকসবজিও উৎপন্ন হত। তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন ধরনের পশুপক্ষীর কথাও তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে খাদ্য ও পানীয়ের কোনো পার্থক্য ছিল না। ভারতীয়রা মাছ, মাংস ভক্ষণ করত। প্রত্যেক ব্যপ্তি ভোজনের আগে স্নান করত। হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণী থেকে জানা যায় যে, ভারতবর্ষে গ্রাম ও শহর উভয়েরই অস্তিত্ব ছিল। গ্রামের মানুষজন ছিল মূলত কৃষিনির্ভর এবং শহরের মানুষজন বিভিন্ন জীবিকার সঙ্গ্যে নিযুক্ত থাকত। তাঁর রচনার মাধ্যমে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের বিস্তারের কথা জানা যায়। তিনি ভারতবর্ষে বৌদ্ধবিহার বা সংঘারামের অস্তিত্ব দেখেছিলেন। তিনি তৎকালীন সময়ের অন্যতম শিক্ষা 'নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে'-র পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ভারতবর্ষে আগত চৈনিক পর্যটককে মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিউয়েন সাঙ। তাঁর ভারত ভ্রমণ ও তথ্যসংক্রান্ত বিবরণীর ফল চিং সুদুরপ্রসারী। তাঁর বিবরণী যেমন ভারত ইতিহাস রচনায় সাহায্য করেছিল তেমনী ভারত-চিন সম্পর্ককে গভীর করেছিল। হিউয়েন সাঙ-এর রচনায় ইতিবাচক দি পরিলক্ষিত হলেও তা সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত ছিল না। তাঁর বিবরণী একদিকে যেমন পক্ষপাদদুষ্ট দোষে দুষ্ট তেমনই বিভিন্ন সামাজিক আর্থ-রাজনৈতিক বিবরণে অতিরঞ্চুকতার মেলবন্ধন ঘটেছে যা সি-ইউ-কি গ্রন্থের নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্নকে উত্থাপন করেছে। এছাড়া হিউয়েন সাঙ তাঁর বিবরণে যে ভৌগোলিক বিবরণের মাধ্যমে পথঘাটের নিশানাকে ব্যস্ত করেছেন তাও সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তৎসত্ত্বেও সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়। যে, আজও প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সত্যকে