ধ্রুপদীযুগের ধারণা।
প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে গুপ্তযুগে সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও ধর্ম সব ক্ষেত্রেই গুপ্তযুগে অভূতপূর্ব উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। তাই এই যুগকে সুবর্ণ যুগ বা ধ্রুপদীযুগের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই যুগে অভূতপূর্ব উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। সংস্কৃত ভাবধি বিল সাহিত্যের মাধ্যম। সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত সুপন্ডিত ও সুসাহিত্যিক ছিলেন। ধীরসেন একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন। যাজ্ঞবন্ধ স্মৃতি, কাত্যায়ন স্মৃতি, নারদ "স্মৃতি, বৃহস্পতি স্মৃতি প্রভৃতি এই যুগেই রচিত হয়। বিশাখদত্ত, শূদ্রক, ভারবি, ভট্টি, দন্ডী কালিদাস প্রমুখ সাহিত্যের ক্ষেত্রে যুগান্তর আনেন।
ধন্বন্তরী ও বাগভট্ট এই যুগেই তাঁদের চিকিৎসা প্রশ্নগুলি রচনা করেন। দিল্লির কাছে মেহেরৌলি লৌহস্তস্তটি ধাতুশিল্পের উৎকর্ষতা প্রমাণ করে। আর্যভট্ট, শরাহমিহির, প্রস্তসুপ্ত প্রমুখ গুণী ব্যক্তিরাই ছিলেন গুপ্তযুগের উজ্জ্বল প্রতিভা।
গুপ্তরাজারা হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও বৌদ্ধ, জৈন ও অপরাপর ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলেন। অসঙ্গ, নাগার্জুন, কুমারজীব, বসুবন্ধু, পরমার্থ এই যুগেই আবির্ভুত হন। পাথর কেটে বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু গুহামন্দির স্থাপন এই যুগের অন্যতম নিদর্শন। অজন্তা, ইলোরা, উদয়গিরির গুহা মন্দিরগুলি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইট ও পাথর দিয়ে মন্দির নির্মাণ এই যুগেই শুরু হয় যেমন-দেওগড়ের দশাবতার মন্দির, তুমারের শিবমন্দির, মণিনাগের মন্দির ইত্যাদি। চিত্রশিল্পের ইতিহাসেও এই যুগ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়-বাস, অজন্তা, ইলোরা চিত্রগুলি বিশ্ববিখ্যাত।
গুপ্তযুগকে সুবর্ণযুগ বলা যায় কি সাম্প্রতিককালে এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গুপ্তযুগের শিল্পসংস্কৃতি ছিল উচ্চশ্রেণির জন্য, সাধারণ মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হয়নি। কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ভূমিদাস প্রথার উদ্ভব ঘটে, বাল্যবিবাহ, সতীদাহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে গুপ্তযুগকে সুবর্ণযুগ বললেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কখনই তা ঠিক নয়।