সামন্ততন্ত্র
আগ্রাহার ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটায় সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে নতুন প্রবণতার হয় (৩০০-৬৫০ খ্রি.) তার পরিণত রূপ ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৫৫০ বছরের হাতসীমায় লক্ষ করা যায় । তাম্রশাসন জারি করে নিষ্কর জমি বা গ্রামের রাজস্ব দান করার কার্যত সর্বভারতীয় রূপ নেয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা একই সঙ্গে জটিলতর হয়ে ওঠে, তার স্থানীয় বৈশিষ্ট্য বাড়তে থাকে।
ব্রাম সাম্রাজ্যের পতনের পর ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত সময় ইউরোপীয় ইতিহাসে মধ্যযুগ হিসাবে চিহ্নিত । মধ্যযুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য সামন্তপ্রথা । কার্ল মার্কস সামন্তব্যবস্থাকে একটি বিলের উৎপাদন ব্যবস্থা হিসেবে দেখিয়েছিলেন। এই প্রাচীন আমলের দাসপ্রথাকে সরিয়ে হয়েছিল ও ধনতান্ত্রিক উৎপাদন পন্থতির উদ্ভবের ফলে যার বিলয় ঘটেছিল । আবার কারো কারো মতে সামন্ততন্ত্র এক রাজনৈতিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা পানিড সদৃশ-চূড়ায় থাকেন রাজা। কিন্তু রাজা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নন। তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সামন্ত বা অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্টিত হয়। রাজ্যের রাজার কাছ থেকে প্রধান সামন্ত, প্রধান সামন্তর কাছ থেকে মধ্য সামন্ত আর মধ্য সমস্ত থেকে ক্ষুদ্র সামন্তের মধ্যে বিস্তৃত হয়।
অধ্যাপক রামশরণ শর্মা মনে করেন যে, তাম্রশাসন জারি করে নিষ্কর ভুসম্পদ দানের মধ্যামে ভারতীয় সামন্তব্যবস্থার বীজ বপন করা হয়েছে। অগ্রহার দানের রীতি প্রথমে এয়নদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্রমশ নিষ্কর জমি ব্রাহ্মণ ছাড়াও মন্দির, বৌদ্ধ ও চেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে দান করার ঝোঁক বাড়তে থাকে। লৌকিক উদ্দেশ্যে রাজস্ব খানের নীতি চালু হলে তা সামন্তব্যবস্থাকে বিশেষভাবে মজবুত করে তোলে। অধ্যাপক শর্মীর মাতে, এই ব্যবস্থার চরম রূপটি ৯০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দে পরিলক্ষিত হয় ৷
সামন্তপ্রখার উদ্ভবের ফলে একদিকে ভূমি ব্যবস্থায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। মধ্যস্বত্ত্বভোগী ভূস্বামীদের আবির্ভাব কৃষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ও রাজকীয় রাজস্বে ভাগ বসাতে থাকে। অধ্যাপক শর্মা দেখিয়েছেন যে, দানগ্রহীতারা কার্যত ভূ-স্বামীতে পরিণত হয়েছিলেন। তারা কেবলমাত্র ভূ-সম্পদ ও গ্রাম থেকে সংগৃহীত রাজস্ব ভোগ করতেন না, রাজস্ব আদায় ও আঞ্চলিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার অধিকারও তাদের হাতে ছিল। ফলে ভূ-স্বামীদের যোন্ত্রিক। আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা বেড়ে যায়।
ভূমি ব্যবস্থায় অন্তর্বর্তীর উদ্ভব হলে তার প্রতিকল প্রভাব কৃষকদের ওপর পড়ে। কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় পাল আমলে কৈবর্ত্য বিদ্রোহ। অধ্যাপক শর্মা এই বিদ্রোহকে কৃষকদের প্রতিরোধ বলেই মনে করেন। সন্ধ্যাকর নন্দী এটিকে কৃষক বিদ্রোহ বলে স্বীকার করেনি। সামন্তব্যবস্থা একান্তভাবে কৃষি অর্থনীতির ওপর আশ্রয় করে বিকশিত হয়েছিল। কৃষকদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়ালে নিপীড়িত করে - সামন্তপ্রভুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলত