বেঙ্গি-অমরাবতীর শিল্পকলা।
খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে উত্তর ভারতের গান্ধার ও মথুরা শিল্পের ন্যায় দক্ষিণ ভারতে কুয়া ও গোদাবরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে একটি পৃথক ভাস্কর্য শিল্প গড়ে উঠেছিল। প্রাচীনকালে এই বদ্বীপ অঞ্চল বেশি হিসাবে পরিচিত, তাই এই শিল্পকে বেলিঙ্গ শিল্পরীতি বলা হয়ে থাকে। আবার প্রধান কেন্দ্র যেহেতু অমরাবতী, তাই এটি অমরাবতী শিল্প নামেও পরিচিত। তৎকালীন দক্ষিণ ভারতের এই শিল্পের বিকাশে বাণিজ্য এবং রাজপরিবারের সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল। পাশাপাশি এই শিল্পের মূল বিষয়বস্তু বৌদ্ধধর্ম, তাই দার্শনিক নাগার্জুনের অবদানও ছিল।
![]() |
শীর্ষ: অমরাবতী মহাস্তূপের স্তম্ভ, খ্রিস্টীয় ১ম-২য় শতাব্দী; নীচে: অমরাবতী থেকে তৈরি চুনাপাথরের রেলিং স্তম্ভ |
বেঙ্গির শিল্পরীতিকে কোনো বিচ্ছিন্ন শিল্প হিসাবে দেখা ঠিক নয়। উত্তর ভারতের গতি-প্রকৃতির সঙ্গে এর সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। অধ্যাপক সরস্বতীর মতে, বেঙ্গিতে একই শিল্পরীতির তীব্রতর প্রকাশ ঘটেছিল মাত্র। দক্ষিণ ভারতের এই শিল্প একদিকে সাঁচি, ভারহুত বুদ্ধগয়া এবং অন্যদিকে গুপ্ত-পল্লব শিল্পের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছিল। ভারহুত-সাঁচির মতো বেঙ্গির রিলিফগুলিতে বুদ্ধকাহিনি স্থান পেয়েছে। তবে এই শিল্প পরিপূর্ণভাবে ধর্মীয় ছিল না। নারীদেহের সৌন্দর্য অদ্ভুতভাবে ভাস্কর্যে পরিস্ফুট হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আনন্দমুখর জীবনের বন্দনা গানই ছিল এই শিল্পের একমাত্র লক্ষ্য। এই শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মানুষ। মানবদেহের সূক্ষ্ম এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণ সৌন্দর্যসৃষ্টিতে এই শিল্পের প্রকৃত উচ্ছ্বাস ও আধিক্য দেখা গিয়েছিল। অতিমাত্রায় বাস্তব এই ইন্দ্রিয়পরায়ণ শিল্পের সর্বত্র মর্ত্য জীবনের প্রেম বিচ্ছুরিত হয়ে আছে।
![]() |
সক্রিয় বছর খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী – খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী |
তবে ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, বেঙ্গির শিল্প সর্বাধিকভাবে বস্তুবাদী ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ ছিল না। শিল্পীদের উন্নত কলাকৌশলের জন্য অমরাবতী শিল্প পরিশীলিত ইন্দ্রিয়পরায়ণতার সূক্ষ্মতর সীমা স্পর্শ করেছিল। ড. রায়ের মতে, অমরাবতী শিল্পে জীবন সম্পর্কে যে পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তার জন্য তৎকালীন সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন অংশত দায়ী ছিল। দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যের বিস্তার এক নতুন বণিক সভ্যতার জন্ম দেয়। যারা ক্ষণিক ইন্দ্রিয় সুখকে অধিক মূল্য দিত