প্রাচীন প্রস্তর যুগের আয়ুধের সঙ্গে নব্যপ্রস্তর যুগের আয়ুধের পার্থক্য নিরূপণ করো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগের আয়ুধের সঙ্গে নব্যপ্রস্তর যুগের আয়ুধের পার্থক্য নিরূপণ করো।

 প্রাচীন প্রস্তর যুগের আয়ুধের সঙ্গে নব্যপ্রস্তর যুগের আয়ুধের পার্থক্য নিরূপণ করো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগের আয়ুধের সঙ্গে নব্যপ্রস্তর যুগের আয়ুধের পার্থক্য নিরূপণ করো।


প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসে মানব সভ্যতার যে বিবর্তন ধারা লক্ষ্যণীয় হয়েছিল এবং যে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ আমরা প্রাণীজগতের শীর্ষে অধিষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিবর্তনের ধারা কয়েকটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছিল। আর সেই পর্যায়গুলির মধ্যে সর্বপ্রাচীন পর্যায়টি হল প্রস্তরযুগ। যে যুগে মানুষ হাতিয়ার নির্মাণের জন্য কেবলমাত্র পাথরের ব্যবহার করতো তাকে বলা হয় প্রস্তর যুগ। এই প্রস্তর যুগকে আবার হাতিয়ারের গঠন, বৈশিষ্ট্য ও ধরনের ভিত্তিতে তিনটি কালপর্বে বিভক্ত করা হয়। যথা-প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্যপ্রস্তর ও নব্যপ্রস্তর যুগ। এক্ষেত্রে আমাদের আলোচ্য বিষয়টি হল প্রাচীন প্রস্তর ও নব্যপ্রস্তর যুগের নির্মিত হাতিয়ারগুলির মধ্যে যে পার্থক্য ছিল তার সন্ধান করা।


প্রাচীন প্রস্তর যুগে ব্যবহৃত যে সমস্ত হাতিয়ারের নিদর্শন পাওয়া গেছে সেগুলি ছিল মূলত পাথর থেকে তৈরি যেমন হাতকুঠার, কোপানি, খোদক ইত্যাদি। প্রথমদিকে এই হাতিয়ারগুলি ওজনে বেশ ভারী ছিল এবং তাদের ফলা ছিল আঁকাবাঁকা। এই যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল মূলত ওন্ডোয়ান, অ্যাকিউলিয়ন প্রকৃতির। হাতিয়ারগুলি তৈরি হত কোয়াটর্জ এবং ব্যাসল্ট জাতীয় পাথর দিয়ে। মধ্য পুরাপ্রস্তর যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল মূলত নেভালিয়াস প্রকৃতির এবং হাতিয়ারগুলি পূর্বের তুলনায় কিছুটা ছোটো ও ধারালো ছিল। আর উচ্চ পুরাপ্রস্তর যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল অ্যাকিউলিয়ন প্রকৃতির। এই পর্বে হাতিয়ার বলতে লম্বা ফলা ও খোদকের ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল। তাতে পুরাপ্রস্তরযুগের হাতিয়ার যে কেবলমাত্র পাথর দিয়ে তৈরি হত তা নয় পাথরের পাশাপাশি গাছের শুকনো ডাল ও পশুর হাড়ও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো।


তবে নব্যপ্রস্তর যুগে নির্মিত অস্ত্রগুলি ছিল পূর্ববর্তী যুগের তুলনার অনেক মসৃণ। পাথরে পাথরে ঘসে বা একটি বড়ো পাথরের চাঁইয়ের ওপর তার তুলনায় নরম পাথর হাতে ঘুরিয়ে তৈরি করা হত এই মসৃণ হাতিয়ার যা প্রযুক্তিগতভাবে 'Ground tool নামে পরিচিত। প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির ফলে এই সমস্ত হাতিয়ারগুলি গোলাকৃতি ও সুষম আকৃতি লাভ করেছিল এবং প্রাচীন প্রস্তর যুগের তুলনায় অনেক বেশি ধারালো ও সূচালো হয়েছিল। এই যুগের প্রথমদিকের হাতিয়ারগুলি মূলত ছিল কুঠার, বাটালি, হাতুড়ি যা বেলেপাথরের তৈরি। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে মানুষ মাটি খোঁড়ার জন্য নিড়ানির ব্যবহার শুরু করে। তাছাড়া এই যুগের শেষের দিকে মানুষ কাস্তে, চামড়া ছড়ানোর জন্য পাথুরে জুরি, তিরধনুক ও বঁড়শিসদৃশ ফলার ব্যবহার শুরু করেছিল।


সুতরাং আলোচনা শেষে বলা যায় যে, প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষ যেহেতু ছিল শিকারীজীবী ও খাদ্য সংগ্রাহক, সেহেতু এই যুগের হাতিয়ারগুলির মধ্যে বেশিরভাগ ছিল ভারী ধরনের এবং কম ধারালো। কিন্তু নব্য প্রস্তরযুগে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাধারার মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছিল তার প্রভাব লক্ষ করা যায় সেই যুগের হাতিয়ারের প্রস্তুতিকরণের ক্ষেত্রে এবং এই যুগের হাতিয়ারগুলি উক্ত যুগের সার্বিক চাহিদার নিরসন ঘটাতে একটি অন্যতম সহযোগী উপাদান হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟