সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ ও সংস্কার।

সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ ও সংস্কার।

 সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ ও সংস্কার।

সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ ও সংস্কার।

প্রথম রুদ্র দামনের গীর্ণার শিলালেখ সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ এবং পুনরুদ্ধারের একটি সুন্দর চিত্র প্রদান করে। শিলালিপিতে 'গিরিনগর' শব্দটি দেখা যায়। সুতরাং, মনে হবে যেগীর্ণার' সম্ভবতঃ 'গিরিনগর' শব্দটির এর একটি ভুল উচ্চারণ ।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

শিলালিপি অনুসারে, শিলালেখে বলা হয়েছে যে, পুষ্যগুপ্ত নামে মৌর্যরাজ চন্দ্রগুপ্তের একজন বৈশ্যজাতীয় রাষ্ট্রীয় অর্থাৎ উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী (সম্ভবতঃ গিরিনগর অঞ্চলের প্রাদেশিক শাসনকর্তা) গীর্ণার পর্বতের পাদদেশে মাটি ও পাথর দিয়ে সন্ধিবন্ধনহীন পর্বতের পাদদেশতুল্য এক সুদৃঢ় সু-উচ্চ বাঁধ তৈরী করান । এর পরে, বৃষ্টিপাত সম্ভবত এটিকে পূর্ণ করে, এটি একটি কৃত্রিম হ্রদে পরিণত হয়। হ্রদটির অত্যাশ্চর্য চেহারার কারণে এর নামকরণ হয়েছে, সুদর্শন হ্রদ । তাই সেই অঞ্চলের কৃষি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ করা হয় । পরবর্তীতে, যবন রাজা তুষাঙ্গ (সম্ভবত এই অঞ্চলের একজন গ্রীক বা পহ্লব সামন্তরাজ) মৌর্য রাজা অশোককে সন্তুষ্ট করার জন্য বেশ কিছু ষড়যন্ত্র তৈরি করেন । এটি সম্ভবত সেচ সহ আশেপাশের সম্প্রদায়ের চাহিদাগুলির জন্য আরও ভাল জলের প্রাপ্যতার দিকে নিয়ে যায় । লেকের দুপাশে একটি সেতুবন্ধন দ্বারা মিলিত হয়েছে । বেশ কিছু খাল ও জলপথ ছিল যা লেকের সাথে যুক্ত ছিল । তাছাড়া দূষণ বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।

যাইহোক, মহাক্ষত্রপ প্রথম রুদ্রদামনের শাসনামলে ৭২ শতকে বা ১৫০ খ্রিস্টাব্দে সুদর্শন হ্রদ এলাকায় একটি বিপর্যয়কর ঝড় আঘাত হানে । ফলে গাছ, বহুতল স্থাপনা, গেট, আশ্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি ভেঙে পড়তে থাকে । পাহাড় নিজেই ভেঙে যায় । সুপর্ণাসিকতা, পলাশিনী এবং দীর্ঘস্থায়ী, তীব্র বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ে সৃষ্ট অন্যান্য উপাদানের মতো সুরগাস দ্বারা নদীর গতিবেগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় । শক্তিশালী ঝড়ের সময়, হ্রদের জলও একইভাবে উত্তাল হয়ে ওঠে । শক্তিশালী স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে লেকের মজবুত বাঁধও ভেঙে গেছে । প্রায় 420 হাত লম্বা, 420 হাত চওড়া এবং 75 হাত উঁচু, বা বাঁধের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভেঙ্গে ভেসে গেছে । সুদৃশ্য হ্রদটি তার সমস্ত জল হারিয়েছে, ফলে এটি একটি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে ।

এই ঘটনার ফলে এলাকায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয় । এলাকায় পানীয় ও কৃষি পানির সংকট দেখা দিতে পারে । তাই এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা ভয়াবহ । ঐ বিশাল ভগ্নস্থান বন্ধন করা কেবল কোন প্রভাবশালী ও সমৃদ্ধিশালী বড় রাজার পক্ষেই সম্ভব ছিল। ঐ প্রদেশ ছিল মহাক্ষত্রপ প্রথম রুদ্রদামনের অধিকারভুক্ত। রুদ্রদামন ছিলেন প্রজাবৎসল, ধর্মপ্রাণ, যশোধন সম্রাট । তাই, তিনি অবিলম্বে তার নিজস্ব কোষাগার থেকে প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ অর্থ উৎসর্গ করে বাঁধটি ঠিক করতে চেয়েছিলেন, কোনো অনন্য কর আরোপ না করে, কোনো অনন্য অবদান গ্রহণ না করে, বা শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অবৈতনিক কাজের প্রয়োজন হয় না । যাইহোক, রুদ্র দমনের অত্যন্ত গুণী মন্ত্রী এবং অমাত্যবর্গ তাকে এই প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন কারণ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কঠিন ছিল । সেখানকার স্থানীয়রা হতাশায় চিৎকার করতে থাকে । তারপর, প্রজাবৎসল রুদ্রদামন পরামর্শকে উপেক্ষা করেন এবং তার প্রিয় ও বিশ্বস্ত বন্ধু অমাত্য সুবিশাখকে দায়িত্ব দেন । সুবিশাখ ছিলেন উচ্চকুলসম্ভূত পহ্লববংশীয়, সংযত, অচপল, নিরহংকার, অত্যন্ত সচ্চরিত্র ও ভদ্র। তিনি ছিলেন সমগ্র আনর্ত ও সুরাষ্ট্র প্রদেশের (উত্তর ও দক্ষিণ কাথিয়াবাড়ের) শাসনকর্তা । সেই ছিন্নভিন্ন স্থানে, ভগবান রুদ্র দমন পূর্ববর্তীটির চেয়ে তিনগুণ শক্তিশালী একটি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন এবং তিনি তার মর্যাদাকে উন্নীত করার এবং তার বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসে সমস্ত হ্রদের সীমানাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন ।

এই বর্ণনায় রুদ্রদামনের চরিত্রের প্রজাবৎসল সুশাসক রূপটি অতি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে মৌর্যরাজ চন্দ্রগুপ্ত ও অশোকের প্রজাবৎসলতার ও তাঁদের সামন্ত রাজাদের কিছু ঐতিহাসিক তথ্যও আমরা জানতে পারি।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ ও সংস্কার। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟