আদি মধ্যযুগে ভারতের কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে মন্তব্য করো।
ভারতে কৃষি চিরকালই ছিল অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আদি মধ্যযুগেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সমাজের সচ্ছল কৃষি ব্যবস্থার চিত্র সপ্তম শতকে আগত হিউয়েন সাঙ ভারত পরিভ্রমণ করে তুলে ধরেছেন।
অগ্রহার দানব্যবস্থা আপাতভাবে কৃষি সম্প্রসারণের সহায়ক ছিল একথা অধিকাংশ ঐতিহাসিক সমর্থন করেন। নতুন ভূমিদানব্যবস্থা সপ্তম-অষ্টম শতকে ভারতে কৃষি সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল। এছাড়া বহু ধরনের কৃষিজ ফসল প্রমাণ করে যে ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষিজ সম্প্রসারণ ঘটেছিল। কৃষি অর্থনীতি দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপিত হয়েছিল।
হালভিত্তিক চাষের সম্প্রসারণের জন্য কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য বেড়েছিল। চহমান বিরাজের হর্ষ লেখতে "বৃহদলের" কথা জানা যায়। এছাড়া এ যুগে ঢেঁকির প্রচলন ছিল সে তথ্য পাওয়া যায়। টেকি ছাড়া উদুখলের ব্যবহার ছিল। হেমচন্দ্র এই উন্মুখলের বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন।
কৃষির অবিচ্ছেদ্য অলা ছিল সেচ ব্যবস্থা। যদিও ভারতীয় চাষ বৃষ্টির উপরই চিরকাল নির্ভরশীল তথাপি কৃষিব্যবস্থার সম্প্রসারণের সঙ্গে সেচব্যবস্থার প্রসার ঘটেছিল। এমনকি মৌর্য ও গুপ্ত যুগে ও সুদর্শন বাঁধ নির্মাণ করে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আদি মধ্যযুগে সেচব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন পাওায়া যায় কাশ্মীরে। কলহনের রাজতরঙ্গিনী থেকে জানা যায় যে, বিতস্তার বন্যার প্রকোপ থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য সূর্য নামে এক ব্যক্তি রাজা অবস্তীবর্মার শাসনকালে অসামান্য প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে বিতস্তার গতিপথ পরিবর্তন করে দেন। রামশরণ শর্মা গুজরাট ও রাজস্থান অঞ্চলে "বাপী" নামে একধরনের গভীর কূপ খননের কথা বলেছেন।
চন্দ উত্তোলনের জন্য সেকালে 'অরঘট্ট' নামক যন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি আবার ঘটিযন্ত্র উদ্ঘাটক ইত্যাদি নামেও পরিচিত। একটি চক্রাকার কাঠামোর গায়ে অনেকগুলি ঘটিজাতীয় পাত্র লাগিয়ে নীচু থেকে জল উত্তোলন করা যেত। চতুর্দশ শতকে ইবন বতুতা চট্টগ্রাম থেকে কামরূপ যাবার পথে একধরনের চক্রাকার যন্ত্র দেখেছিলেন। সম্ভবত এটি ছিল অরঘট্ট জাতীয় কোনো যন্ত্র।
