ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো।


ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো।


আঠারো শতকে ভারতবর্ষের বহু অঞ্চলে বিদেশি শাসন এবং জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী আন্দোলন গুলি ধর্মের আকার ন্যায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ৷ প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনগুলি ছিল কৃষক আন্দোলন ৷ যাদেরকে ধর্মীয় মহিমা প্রদান করা হয়েছিল ৷ সমসাময়িক ধর্মীয় আন্দোলন গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল - ফরাজী আন্দোলন, তারিখ-ই- মুহাম্মাদিয়া ও ওয়াহাবী আন্দোলন 


ওয়াহাবি শব্দটি এসেছে আরবীয় সংস্কার আব্দুল্ল ওয়াহাব থেকে ৷ ওয়াহাবি শব্দের অর্থ হল নবজাগরণ এবং বিদ্রোহী ওয়াহাবিরা ইসলাম ধর্ম থেকেই সর্বপ্রকার কলুষতা ও দুর্নীতি দূর করে তাকে প্রবিত্র ও শুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন ৷ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান সংগঠক ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলির সৈয়দ আহমেদ (১৭৮৬-১৮৩১) ৷ তার মাধ্যমে ভারতে ওয়াহাবি অন্দোলনের সূত্রপাত হয় এবং তার প্রচারের মূল কথা ছিল ভারতবর্ষকে দার-উল-হারব এ পরিণত করা ।  বাংলায় ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন তিতুমীর তার প্রকৃত নাম ছিল মির নিসার আলী । মক্কায় হজে গিয়ে তিনি ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সৈয়দ আহমেদের সান্নিধ্যে এসে ওয়াহাবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় এবং বাংলায় ফিরে এসে তিনি হতদরিদ্র দরিদ্র নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে ৷ তিতুমীরের নেতৃত্ব 24 পরগনা নদীয়া যশোহর মালদহ রাজশাহী ঢাকা জেলাগুলিতে ওহাবী আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তিতুমীর নিজেকে বাদশাহ এবং মইনুদ্দিন কে প্রধানমন্ত্রী ও গোলাম মাসুদকে সেনাপতি ঘোষনা করে তিনি নারকেলবেরিয়া গ্রামে বাসের কেল্লা তৈরি করে তার দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এই ঘটনায় বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত ৷ স্থানীয় জমিদার নীলকরদের বাহিনী তিতুমীরের কাছে পরাজিত হলেও ভারতের বড়লাট ব্যাংকিং তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযান পাঠান (১৮৩১খ্রিঃ) এবং তিতুমীর ও তার কয়েকজন অনুগামীকে প্রকাশ্যে যুদ্ধে পান দেন এবং বাঁশেরকেল্লা কামানের আঘাতে ধ্বংস হয়।


তবে আন্দোলন সংস্কার কাজে সীমিত না থেকে কিছুকালের মধ্যেই ভিন্ন চরিত্র নিয়ে ছিল । বাংলায় তিতুমীরের নেতৃত্বাধীন ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্র বা প্রকৃতি ঐতিহাসিকদের মধ্যে বহু মতভেদ আছে । রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিহারীলাল সরকার, কুমুদনাথ মল্লিক প্রমুখও এই আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক বলে মনে করেন ৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, এই আন্দোলন ছিল ধর্মান্তর মুসলমানদের কাণ্ড এবং হিন্দু বিরোধী ৷ অন্যদিকে হান্টার,থর্নটন প্রমুখ এই আন্দোলনে কোন সাম্প্রদায়িক ছাপ দেখতে পাননি ৷ নরহরি কবিরাজ ও ডক্টর কুয়েমুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ মনে করেন যে," অত্যাচারী নীল জমিদার নীলকর এবং ইংরেজ বিরোধিতা ছিল এই আন্দোলনের মূল কথা ৷"
ওয়াহাবি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মুসলিম কৃষক হলেও তাদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল ৷ তাই অধ্যাপক বিনয় ভূষন চৌধুরীর মতে ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত কৃষক আন্দোলন ৷" মূলত কৃষক আন্দোলন হলেও ওয়াহাবি আন্দোলনের ধর্মীয় চরিত্রকে অস্বীকার করা যায় না ৷ অর্থনৈতিক জীবনের সাথে জড়িয়ে ও ধর্মে আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় ঠিকই , তবে এই আন্দোলন ভবিষ্যৎ কৃষক আন্দোলন গুলির পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছিল ৷



তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟