আদি শিল্পায়ন বলতে কি বোঝো অথবা, আদি শিল্পায়ন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

আদি শিল্পায়ন বলতে কি বোঝো অথবা, আদি শিল্পায়ন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

 আদি শিল্পায়ন বলতে কি বোঝো অথবা, আদি শিল্পায়ন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

আদি শিল্পায়ন বলতে কী

ষোড়শ শতকে শস্যমূল্য যখন নিয়মিত বাড়তে থাকত তখন ছোট এবং প্রান্তিক কৃষক তাতে লাভবান হলেও বিপণনযোগ্য উদ্বৃত্ত (marketable surplus) বেশি হবার সুবাদে বড় চাষি এবং ভূস্বামীরাই বেশি অর্থ-সঞ্চয় করতে পারত। সপ্তদশ শতকে শস্যমূল্য হ্রাস পেলে প্রান্তিক এবং ছোট চাষি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং আর্থিক সমস্যা দূর করতে তারা হয় জমির অংশ (বা পুরো জমি) বিক্রি করে দেয় নয় বিকল্প, জীবিকার সন্ধান করতে থাকে-অথবা দুটোই (অর্থাৎ কৃষি সম্পূর্ণ ত্যাগ না করলেও জীবনধারণের তাগিদে পশুপালন, হস্ত এবং কুটির-শিল্প, প্রভৃতিতে যোগ দেয়)। গ্রামাঞ্চলে হস্ত এবং কুটির-শিল্পে নিযুক্ত লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্ষয়িষ্ণু নগরভিত্তিক শিল্প-পণ্যসামগ্রী আগের মতো সহজে যোগান দিতে ব্যর্থ হলে সুেদূর বাণিজ্যের চাহিদা গ্রামীণ এলাকায় বিকল্প শিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠতে সাহায্য করে। গ্রামকেন্দ্রিক এই শিল্প-ব্যবস্থাকে সাধারণত 'আদি-শিল্প' বা proto- industry বলা হয় ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

আদি-শিল্পের চালিকা-শক্তি ছিল পুঁজিপতি বণিক শ্রেণি (merchant capitalist), এবং এদের সুবাদে সপ্তদশ শতাব্দীকে বলা হয় 'বাণিজ্যিক পুঁজির যুগ' (the age of merchant capitalism) ৷ প্রাক আধুনিক যুগে ইউরোপের শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সে পরিবর্তন দেখা দেয় তাহা এককথায় আদি শিল্পায়ন নমে পরিচিত, এই পরিবর্তনের শেষ পরিণতিই হল শিল্প বিপ্লব । প্রাক-আধুনিক যুগে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা কলকারখানা অত্যন্ত দ্রুত অধিকতর পরিমানে উৎপাদন করতে সমস্ত সমর্থ হয় এবং এই উৎপাদনের পরিমান ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ প্রাক-আধুনিক যুগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থেকে উৎপাদন পদ্ধতি গড়ে উঠেছিল সেগুলিকে প্রাক-শিল্প বিপ্লব যুগের কারখানা বলা যেতে পারে ।

মধ্যযুগের শেষদিকে ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও শিল্পের প্রথার যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও জনসাধারনের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে পঃ ইউরোপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে ইউরোপের শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে । শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সাথে কলকারখানা কেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সিম্পর্ক ছিল ৷ কারখানায় বেশি উৎপাদন হত এবং তাহা শিল্পবিপ্লবের পথ প্রস্তুত করেছিল, সুতরাং নতুন গড়ে ওটা কলকারখানায় শিল্প বিপ্লবের অন্যতম কারণ ৷

ব্রিদেলের মতে এই ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছিল সম্ভবত হল্যান্ডের গেন্ট (Ghent) বা ইত্রে (Ypres) শহরে-মতান্তরে ইতালির ফ্লোরেন্স বা মিলান হয়েছিল। কিন্তু জার্মান ভাষাভাষী দক্ষিণ এবং পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে ষোড়শ শতক থেকেই এই ব্যবস্থা বহুল প্রচলিত হতে শুরু করে, এবং সপ্তদশ শতকে তা মধ্য ইউরোপের সর্বত্র ছেয়ে যায় । তবে প্রাক শিল্পবিপ্লবের যুগে অর্থনীতিতে এতে কারখানার ভূমিকা থাকলেও তাহা প্রযুক্তিবিদ্যা শ্রমিকদের ভূমিকা, পুঁতিলগ্নির পরিমান, উৎপাদিত পণ্য দ্রব্যের পরিমান মূল্য খুবই কম ছিল ৷ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর তাদের প্রভাব ছিল খুবই কম ৷ কিন্তু নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রাক শিল্পবিপ্লব যুগে কারখানায় পরবর্তীকালে পরিমাণ ও গুনের ক্ষেত্রে সম্পদের সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং শিল্প বিপ্লবকে সম্ভব করে তুলেছিল । সুতরাং আধুনিক কলকারখানা কে সামগ্রিক শিল্প বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়‌ ৷ ফলে Zaan নদীর কূলবর্তী গ্রামগুলিতে আদি শিল্প কাঠামোর মধ্যে আমস্টারডামকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সপ্তদশ শতকের ইউরোপের বৃহত্তম জাহাজ-নির্মাণ শিল্প ৷



                      ~~🔹সমাপ্ত🔹~~

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟