আকবর কেন রাজপুত নীতি গ্রহণ করেন অথবা, আকবরের রাজপুত নীতির মূল্যায়ন করো।

আকবর কেন রাজপুত নীতি গ্রহণ করেন অথবা, আকবরের রাজপুত নীতির মূল্যায়ন করো।

 আকবর কেন রাজপুত নীতি গ্রহণ করেন অথবা, আকবরের রাজপুত নীতির মূল্যায়ন করো। 

আকবর কেন রাজপুত নীতি গ্রহণ করেন

কবরের রাজপুত নীতি মধ্যযুগে ভারতবর্ষের ইতিহাসে কূটনৈতিক দিক থেকে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে ৷ আকবর উপলব্ধি করেছিলেন যে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের বৃদ্ধির দৃঢ় থেকে দীর্ঘতর করতে হলে রাজপুতদের সহযোগিতা ও সমর্থন একান্ত ভাবে প্রয়োজন । মিত্র হিসাবে রাজপুত্র যেমন সহায়ক হবে তেমনি শত্রু হিসেবেও রাজপুতরা বিপদজনক হয়ে দাঁড়াতে পারে ৷ এই কারণে আকবর তার রাজপুত নীতি নির্ধারণ করেছিলেন ৷ কাজেই বুদ্ধিদীপ্ত স্বার্থবোধ চিন্তা এবং রাজনৈতিক চেতনা আকবরের রাজপুত নীতি নির্ধারণের অনুপ্রেরণা জানিয়েছিলেন । মধ্যযুগে ভারতবর্ষে রাজপুতদের সঙ্গে আকবরের এই উদার মনোভাব কে এক উচ্চ রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচারক বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

আকবর ছিলেন একজন সুদক্ষ রাষ্ট্রনীতিবিদ ৷ তাই তিনি অনুভব করেছিলেন যে রাজপুত্র রায় একমাত্র সৌর্য ও বীর্যের উত্তর ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি ৷ সেনা হিসেবে তারা ছিলেন চমৎকার ৷ সম্রাটের অনুচর বর্গের অধিকাংশই ছিলেন ভাগ্যান্বেষী ছিল লোভী ৷ তাই আকবর রাজপুতদের সহযোগিতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন ৷ ডঃ বিনি প্রসাদের মতে আকবর রাজপুত জাতিকে উপযুক্ত মর্যাদা ও স্বায়ত্ব শাসনের অধিকার দিয়ে রাজপুত জাতির আমূল্য সহযোগিতা লাভ করেন ৷

অধ্যাপক সতীশ চন্দ্র আকবরের রাজপুতনীতির তিনটি স্তর লক্ষ্য করেছেন প্রথম পর্বের রাজপুত্র ছিল অনুগত বন্ধু,দ্বিতীয় পর্বে রাজপুতদের সৌর্যের উপর আকবর অনেকখানি নির্ভর করত, তৃতীয় পর্বে রাজপুত্রা ছিল সাম্রাজ্যের বিশ্বস্ত অঙ্গ ৷ রাজপুতদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে আকবর তার পূর্বসূরিদের অপেক্ষা দূর দৃষ্টিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন ৷ আকবর ছিলেন সৌর্যে ও বীর যে অদ্বিতীয় ৷ পার্সিভ্যাল স্পিয়ারের ভাষায় ব্রাহ্মণরা যদি হিন্দু ধর্মের মানসিক শক্তি হয় তাহলে রাজপুতরা ছিল তাদের দৈহিক শক্তি ৷ তাই আকবর রাজপুত্রের বন্ধুত্ব বেছে নেন ৷

আকবর রাজপুতদের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধন সুদৃঢ় করার জন্য কোন রাজপুতদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ৷ আজমির যাত্রার সময় আকবর অম্বরে রাজপুত রানা বিহারী মলের আনুগত্য ও মিত্রতা লাভ করেন ৷ আর এই মিত্র তাকে সুধীরও করার জন্য তিনি বিহারী মলের কন্যা মরিয়মকে বিবাহ করেন ৷ এছাড়াও তিনি জয়সিংহের কন্যার সাথে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন করেন ৷ মারিয়ামের গর্ভজাত সন্তান সেলিমের সাথে উদয় সিংহের কন্যা যোধাবাঈ এর বিবাহ দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্কের আরো প্রসারিত ও সুদৃঢ় করেন । এই সম্পর্কের পরিণতি হিসাবে তিনি টোডরমল,বিহারীমল, মান সিংহ প্রমুখ রাজপুতদের সেবা লাভ করেছিলেন ৷ তা তার সামরিক,অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ভিত্তিকে যথেষ্ট দৃঢ় করেছিলেন ৷

তবে তিনি যে সকল ক্ষেত্রে বিনা যুদ্ধে রাজপুতদের বিষয়ে সফল হয়েছিলেন এ কথা বলা যায় না ৷ মালব,রণথম্বর,মারওয়ার, জয়সলমির বিরুদ্ধে আকবর অস্ত্র ধারণ করেন ৷ এইভাবে বেশ কিছু রাজ্য আকবরের অধীনে আসেন ৷ মেবারের দীর্ঘকাল আকবর এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল অবশ্য একদিন মেবারের রাজধানী চিতরের পতন হয় ৷ অপরাপর অঞ্চলগুলি আকবরের অধীনে চলে যায় ৷ আকবর এই সকল রাজপুতদের বিরোধিতার কথা ভুলে মানবতার পরিচয় দেন এবং তাদের প্রশাসনের উচ্চপদে নিয়োগ করেন ৷ ঐতিহাসিক ডট বলেছেন আকবর ছিলেন প্রথম সফল বিজেতা জিনিস সোনার শিকল দিয়ে গর্বিত রাজপুতদের বাঁধে পেরেছিলেন ৷

অধ্যাপক সতীশ চন্দ্র জানিয়েছেন যে এই নীতির ফলে উভয় পক্ষই লাভবান হয়েছিল ৷ এই বন্ধুত্বের ফলে মুঘল রাষ্ট্র বাদীরা রাজপুতদের আনুগত্য সেবা লাভ করেন ৷ আকবরের সঙ্গে রাজপুতদের যে সহজ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাতে রাজপুরদের লাভ নিতান্ত কম ছিল না । রাজপুতরাও ভারতবর্ষের কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন ৷ যেমন আকবরের আমলে ভগবান দাস কে লাহোরের যুগ্ম শাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয় ৷ মান সিংহ প্রথমে কাবুল ও পরে বাংলা বিহারের শাসনকর্তার পদ লাভ করেন ৷

তবে আলীগড় ঐতিহাসিকদের অন্যতম প্রখ্যাত গবেষক ইক্তিদার আলম খান মতে আকবর রাজপুত্রের সঙ্গে যে উদার মনোভাব গ্রহণ করেছিলেন তা কেবলমাত্র রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ৷ কোন ধর্মীয় উদারতা বা কোন বৈদিক প্রভাব নয় ৷ তার মতে, উদ্বেগ বিদ্রোহ দমনের পর রাজপুত্রের সম্পর্কে আকবরের মনোভাব পরিবর্তিত হয় ৷ রাজপুতদের বলপূর্বক দমন করার নীতি গ্রহণ করেন এবং একই সঙ্গে গোড়া মুসলমান মানসিকতা কেউ খুশি রাখার চেষ্টা করেন ৷ চিতর জয়কে আকবর বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ইসলামের জয় বলে ঘোষণা করেন ৷ এই প্রসঙ্গে আকবর ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে মহাজার ঘোষণা ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে জিজিয়া পুনর প্রবর্তন, শুক্রবারে নামাজ পাঠ প্রচলন এর ব্যবস্থা প্রচলন করেন ৷ অবশ্য ইক্তিদার আলম খান এ কথা স্বীকার করেছেন যে ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের পর আকবরের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছিল ৷

এ সত্বেও বলা যায় যে সম্রাটের প্রিয় পাত্র ও রাজপুত জাতি মুঘল দরবারের সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিবাসী হতে পেরেছিলেন ৷ তাই মুসলমান শাসনে ও তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ৷ ভগবান দাস,টোডরমল,মানসিংহ , জয়সিংহ উচ্চ রাজ কর্মচারী তাদের ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন ৷ এই নীতির ফলে রাজপুত জাতি মুঘল সাম্রাজ্যের রক্ষার ও সম্প্রসারণের যে হৃদয় রক্ত দিয়ে সংগ্রাম চালিয়েছিল তার গুরুত্ব কম নয় ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟