সাম্রাজ্যবাদী তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের বিবরণ দাও। বা তৈমুর লঙ কে ছিলেন? অথবা, তৈমুর লঙের পরিচয় দাও।

তৈমুর লং-এর ভারত আক্রমণের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

 সাম্রাজ্যবাদী তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের বিবরণ দাও। বা তৈমুর লঙ কে ছিলেন? অথবা, তৈমুর লঙের পরিচয় দাও।

তৈমুর লং-এর ভারত আক্রমণ
➤ তৈমুর লঙ ছিলেন একজন তুর্কি নেতা। আরও বলা ভালো যে, তিনি ছিলেন চাঘতাই তুর্কি নেতা। যুদ্ধ করতে গিয়ে তাঁর একটি পা লঙ বা খোঁড়া হয়ে যায় । এজন্য তাঁকে বলা হয় তৈমুর লঙ।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
তৈমুর এবং চেঙ্গিস খানের মধ্যে বংশগত সম্পর্ক

সমরখন্দের সিংহাসন লাভ করার পর তিনি মধ্য এশিয়ার ইরাক, ইরান, খোরাসান এবং তুরস্কের কিছু অঞ্চল জয় করেন । ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত অভিযান করেন। কথিত আছে যে, তাঁর ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ধনসম্পদ লুঠ করা ও ভারতে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটানো । ভারত থেকে বহু সম্পদ লুঠ করে তিনি স্বদেশ চলে যান ।

  

সমসাময়িক জাফরনামা (1424-1428), 1467 সংস্করণে তৈমুরকে তার সিংহাসনে আরোহণ উপলক্ষে শ্রোতাদের অনুদান দেওয়ার চিত্র

তিনি শুধু একজন বীর যোদ্ধাই ছিলেন না । তিনি ছিলেন সুলেখক । তিনি একটি আত্মজীবনী লিখেছেন তার নাম তৃজুক-ই-তৈমুরি।  ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের ঘটনা ভারতীয় ইতিহাসে এক সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় ৷

1397-1399 সালে তৈমুরের ভারত আক্রমণের মানচিত্র এবং 1397-1398 সালের শীতকালে দিল্লির সুলতান নাসির আল-দিন মাহমুদ তুঘলককে পরাজিত করা তৈমুরের চিত্রকর্ম (1595-1600 তারিখের চিত্র)।


জানা যায় যে, ভারতবর্ষের সম্পদ লুঠন করে সমরখন্দে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈমুর লঙ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। এ কথা সত্য যে, ভারতবর্ষে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার কোনো অভিসন্ধি তাঁর ছিল না।


 ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে পাঞ্জাবে হাজির হন । তাঁর লক্ষ্য ছিল দিল্লি তথা সুলতানি সাম্রাজ্য আক্রমণ করা ।


সমকালীন ঐতিহাসিক বদায়ুনির বিবরণে তৈমুরের দিল্লি লুষ্ঠনের চিত্র ধরা পড়েছে। জানা যায় পরবর্তী সময়ে এই লুষ্ঠনের ফলে দিল্লিতে নেমে এসেছিল শ্মশানের স্তত্থতা, বিপর্যয় । দিল্লির আকাশে প্রায় দু-মাস কোনো পাখির কলরব দেখা যায়নি।


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

আমির তৈমুর সমরকন্দের উদ্যানে ভোজ করেন

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
 1405 সালে তৈমুরের মৃত্যুতে তৈমুরিদ সাম্রাজ্য

এই আক্রমণের ফলে ক্ষয়িত্ব সুলতানি সাম্রাজ্যের ভিত একেবারে নড়ে যায়। অবাধ লুণ্ঠন ও শস্য ধ্বংসের ফলে সুলতানি সাম্রাজ্যে দেখা দেয় খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ। ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের দরুন দেখা দেয় বায়ু ও জলদূষণ । যার পরোক্ষ ফল ছিল মহামারি । সমরখন্দে ফেরার আগে দিল্লির মসনদে নিজপুত্র খিজির খাঁকে প্রতিষ্ঠা করে যান। সাম্রাজ্যের সার্বিক বিশ্রাম খেলার সুযোগ নিয়ে পাঞ্জাব মুলতান সিন্ধু প্রভৃতি অঞ্চল স্বাধীন হয়ে পড়ে এইভাবে সুলতানি সাম্রাজ্য নিশ্চিত পতনের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়।

তৈমুর লং সম্পর্কে আপনার সব প্রশ্নের উত্তরঃ

তৈমুর লং কবে ভারত আক্রমণ করেন?

১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে।

তৈমুর লং কার আমলে ভারত আক্রমণ করেন?

দিল্লির সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ তুঘলকের শাসনামলে।

তৈমুর লং এর পিতার নাম কি?

তার পিতার নাম ছিল তুরঘাই।

তৈমুর লং এর উক্তি

“I am the scourge of God. If you had not committed great sins, God would not have sent a punishment like me upon you.”

তৈমুর লং এর চরিত্র ও কৃতিত্ব

তৈমুর লং ছিলেন এক নির্মম বিজেতা, যিনি সাম্রাজ্য বিস্তার ও যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে বিশাল এলাকা জয় করেছিলেন। তাঁর সামরিক নেতৃত্ব, কৌশল এবং নির্মমতা তাঁকে ইতিহাসে কুখ্যাত করলেও তিনি একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।

তৈমুর লং ও বাবর

তৈমুর লং ছিলেন মুঘল সম্রাট বাবরের পিতামহের পূর্বপুরুষ। বাবর তাঁর বংশকে তৈমুরের উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করতেন।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟