ধর্ম সংস্কার রূপে কবির ও গুরু নানকের ভূমিকা লেখ
মধ্যযুগে ভারতে বহু ভক্তিবাদী সাধকের আবির্ভাব ঘটেছিল এদের মধ্যে স্মরণীয় হলেন কবির ও নানক ৷ ডঃ রোমিলা থাপার লিখেছেন,"ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের সবচেয়ে বেশি দান এসেছিল কবির ও নানকের কাছ থেকে ৷" কথিত আছে যে কবির এক ব্রাহ্মণ বিধবার সন্ধান ছিলেন ৷ মা কর্তৃত্ব পরিতত্ত্ব হয়ে তিনি এক মুসলমান তাঁতির ঘরে পালিত হন ৷ ইসলামীও চিন্তাধারা সংস্পর্শে থাকার ফলে তার চিন্তাভাবনার কিছুটা নতুনত্ব ছিল ৷ তিনি ধর্মীয় উদারতার সঙ্গে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন দাবি করে ৷ কবির বলতেন," ঈশ্বর এক কেবল নামে ভিন্ন তার মতে আল্লাহ ও রাম একই ঈশ্বরের আলাদা নাম ৷" কবির বিভিন্ন ধর্মের আচরণ অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে বলতেন,"ঈশ্বর মসজিদে নেই মন্দিরে নেই কাবাতেও নেই কৈলাসেও নেই আচারেও নেই অনুষ্ঠানেও নেই যোগেও নেই ত্যাগ কেউ নেই ৷"
ভক্তিবাদী সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নানক ৷ অল্প বয়সের সংসার ত্যাগ করে তিনি সুফি শ্রন্তাদের সঙ্গে যোগ দেন ৷ কিছুকাল পরে সুফিদের ত্যাগ করে দেশের নানা স্থান পরিভ্রমণ করেন ৷ কথিত আছে নানক মক্কা,মদিনা ও সিংহল ভ্রমণ করেছিলেন তার উপদেশ বলি 'আদি গ্রন্থ' পুস্তকের লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ৷ কবিরের মতো ইনিও একেশ্বরবাদ তথ্য প্রচার করেন ৷ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ থেকেও প্রেমভক্তি সহযোগে বারবার ঈশ্বরের নাম জাপলে মোক্ষলাভ করবে ৷ ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের জন্য তিনি চরিত্র ও আচরণের প্রবিত্রতা এবং গুরুর সান্নিধ্য লাভের উপর জোর দেন ৷
ডক্টর রমিলা থাপার লিখেছেন যে, কবির ও নানক কেবি সচেতন ভাবে ধর্ম সমন্বয়ে চেষ্টা করেননি হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের ভাবধারা গ্রহণ করে দুই ধর্মের পার্থক্য দূর করার বা কোন নতুন সমন্বয়ে উপাধি ধর্মমত প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা এদের ছিল না ৷ এরা উভয়ের সামাজিক সমস্যার কথা অনুভব করেছিলেন এবং তা দূরবীকরণের সচেষ্ট ছিলেন ৷ কবির ও নানক কোন নতুন ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেননি ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুগামীরা যথাক্রমে 'কবির পন্থী' ও 'শিখ সম্প্রদায়ের' নামে স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিতি হন ।