সুলতানি সাম্রাজ্যের আদিনা মসজিদ সম্পর্কে একটি টিকা
সুলতানি সাম্রাজ্যের আদিনা মসজিদ সম্পর্কে একটি টিকা
দিল্লির সুদীর্ঘ ৩২০ বছরের সুলতানি শাসনের কেন্দ্রীয় শক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রের নানা প্রান্তে আঞ্চলিক শাসনব্যবস্থাওমোস্ট জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে । তুঘলক বংশের শাসনকালে বঙ্গ প্রদেশের এইরকমই এক বিখ্যাত বংশ হলো ইলিয়াস শাহী বংশ ৷ যার শাসনকালে বাংলা যথেষ্ট শক্তি,সমৃদ্ধি এবং খ্যাতি অর্জন করেছিল । এই ইলিয়াস শাহী বংশের শাসকরা শুধুমাত্র সামরিক শক্তির উপর ভিত্তি করেই তাদের নিজ অবস্থানকে দৃঢ় করেছিল তাই নয়,সেই সঙ্গে দিল্লির সুলতানের সঙ্গে সৎ ভাব রেখে ও বঙ্গদেশের শিল্প সাহিত্য স্থাপত্য ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছিল ৷ এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এবং তিনি কেবলমাত্র একা নন তার পরবর্তী শাসক সিকান্দার শাহ ও এই সংস্কৃতিক উন্নয়নের ধারাকে প্রবাহিত রেখেছিল । এই ইলিয়াস শাহী বংশের আমলে বঙ্গপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ-মাদ্রাসা মক্তব ও বিভিন্ন রাজপ্রসাদ কে কেন্দ্র করে অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপত্য কীর্তি গড়ে উঠতে শুরু করে । এর মধ্যে যেটি অন্যতম তা হলো সিকান্দার শাহের রাজত্বকালে (১৩৫৫-৫১) পান্ডুয়ায় নির্মিত আদিনা মসজিদ।
1369 সালে এই শ্বাসরুদ্ধকর অত্যাশ্চর্য কীর্তির নির্মাণ কাজ শুরু হয় । এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ছিল ৫০৭ ফুট ছয় ইঞ্চি প্রস্তর ছিল 298 6 ইঞ্চি এবং মসজিদের প্রাঙ্গনে দৈর্ঘ্য ছিল 397 ফুট এবং প্রস্থ ছিল ১৫২ ফুট । মসজিদের দেয়ালগুলোর নিম্নাংশ পাথরের আর বাকি অংশ ইটের তৈরি । এর আয়তন ২১১০ মিটার। একসময় এর উচ্চতা ছিল প্রায় ১৮ মিটার । মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা ৩৮৭টি । মসজিদের পিছনে প্রাচীরের নিকট মেহরার অর্থাৎ প্রার্থনার পুলিঙ্গ ও উত্তর মেম্বার বা প্রাচীন অবস্থিত মেম্বারের অন্তত দূরে ৮ ফুট উচ্চতাকে বাদশাহেকা তথ্য অবস্থিত ছিল এই আদিনা মসজিদের বিশেষত্ব হলো অন্যান্য ধর্মের দেব দেবী ও ফল ফুলের ইত্যাদির চিত্র খচিত হয়েছে । ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন যে ভারতে নির্মিত সমস্ত মসজিদের মধ্যে স্থাপত্য পদ্ধতির দিক থেকে এই আদিনা মসজিদের স্থান দ্বিতীয় ৷"
এই মসজিদের চোরা কুঠুরিটি ভিশন সুশাস্থ্য নয় এর সৌন্দর্য ও অলংকরণ সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের নয়ন যুগলকে বহুকাল ধরে আনন্দ ও মাধুর্য প্রদান করে এসেছে । এটা সম্ভব যে মেহেরবাটি হিন্দু এবং বৌদ্ধ মন্দিরে একটি পবিত্র মূর্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল । পার্সি ব্রাউনের মতে, সামান্য রদবদলের পর বৌদ্ধ ধুপের বিনা নৌকার মত কুলিঙ্গ বা হিন্দু মন্দিরের অলংকৃত দিমা গোস্তা মুসলিম মেহেরার হিসাবে আদিনা মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে ।" ডেবিট হোস্টোন বর্ণনা করেছেন,"আদিনা মসজিদের শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য উল্লেখ করা হয়েছে । সমস্ত বিষয় বিবেচনা করলে আদিনা মসজিদকে রাজকীয় মহিমা, গাম্ভীর্য এবং সৃজনশীল উজ্জ্বলতার একটি শিল্প উৎকর্ষতা হিসাবে গণ্য করা হয় । আদিনা মসজিদের এই সৌন্দর্য স্থাপত্যের গুণমান বিশালতা ইত্যাদি দিক থেকে এই মসজিদকে নানা কারণে অষ্টম শতাব্দীর ঘোরার দিকে তৈরি উমদেও বংশীও খালিফা অলম ওয়ালীদের দামাস্কাস মসজিদের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
--- সমাপ্ত---