আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ [Sudden or Irregular wind]
চাপের সমতা রাখার জন্য বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয় । বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । বায়ুর চাপ আবার নির্ভর করে উষ্ণতর উপর । কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়ুচাপ কমে যায় এবং আংশিক স্থান বায়ুশূন্য হয় । এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য শীতল উচ্চচাপ যুক্ত স্থান থেকে বাতাস নিম্ন চাপের দিকে ধাবিত হয় । এইভাবে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । ভূপৃষ্ঠের বেশিরভাগ অংশে বায়ুপ্রবাহ নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় । কখনো কখনো কোনো স্থানে হঠাৎ করে প্রবল বেগে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে আকস্মিক বায়ু বলে । পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে যে সব আকস্মিক বায়ু প্রবাহিত হয় তাদের মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:-
(ক) ঘূর্ণবাত এবং (খ) প্রতীপ ঘূর্ণবাত ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
(ক) ঘূর্ণবাত [Cyclones]:- কোনো অল্প পরিসর স্থান হঠাৎ বেশি মাত্রায় উত্তপ্ত হলে, সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । তখন চারিদিকের অপেক্ষাকৃত শীতল ও উচ্চচাপের স্থানগুলো থেকে বায়ু প্রচন্ড বেগে ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রে প্রবেশ করে । কেন্দ্রে প্রবেশ করার পর ওই বায়ু পর্যায়ক্রমে উষ্ণ ও ঊর্ধ্বগামী হয় । এই রকম কেন্দ্রমুখী ঊর্ধ্বগামী ঘূর্ণীবায়ুকে ঘূর্ণবাত বলে ।
(i) ঘুর্ণবাতের বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামাদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে ঘুরপাক খায় এবং ঘুরতে ঘুরতে ঘূর্ণবাত-কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয় ।
(ii) এই ঘূর্ণিবাত ৫০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয় ।
(iii) ঘূর্ণবাত স্বল্পকাল ধরে স্থায়ী হয়, কিন্তু ওই অল্পসময়েই প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় ।
(iv) ঘূর্ণবাতের সঙ্গে ঝড়, বৃষ্টি এবং বজ্রপাত হয় ।
(v) ঘূর্ণবাত দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে ।
(vi) ঘূর্ণবাতের ধ্বংস ক্ষমতা অতি ভয়ংকর ।
(খ) প্রতীপ ঘূর্ণবাত [Anti-Cyclones]:- হিমমণ্ডল এবং নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অল্প পরিসর স্থানের বায়ু শীতল হয়ে যখন উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় তখন সেখান থেকে বায়ু নিম্নচাপের দিকে প্রবলবেগে পাক খেতে খেতে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু উচ্চচাপের কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে ছুটে যায় এবং নীচের দিকে নামে । একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে ।
(i) প্রতীপ ঘূর্ণবাত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে ঘুরতে ঘুরতে অগ্রসর হয় ।
(ii) অনেক সময় দুটি ঘূর্ণবাতের মধ্যবর্তী স্থানে প্রতীপ ঘূর্ণবাত দেখা যায় ।
(iii) প্রতীপ ঘূর্ণবাত, ঘূর্ণবাতের মতো ভয়ংকর নয় এবং দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে না ।
(iv) প্রতীপ ঘূর্ণবাত দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু ধীর গতি যুক্ত ।
(v) প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি হয় না ।
স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ [Local wind] :-
কোনো কোনো উষ্ণ মরুভূমি, উঁচু পাহাড় প্রভৃতি অঞ্চলে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে একরকম বায়ু প্রবাহিত হতে দেখা যায়- এই বায়ুপ্রবাহকে স্থানীয় বায়ু বলা হয় । স্থানীয় কারণ বসত তাপ ও চাপের তারতম্যের জন্য বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এই বায়ু প্রবাহিত হয় । আঁধি, লু, কালবৈশাখী, চিনুক, ফন, খামসিন, সোলানো, সিরিক্কো, হারমাট্টান, মিস্ট্রাল, বোরা, টাকু, পম্পেরো, বার্গ প্রভৃতি স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের উদাহরণ ।
আঁধি [Andhi]:- উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের বিকেলবেলার দিকে কখনও কখনও এক রকমের ধুলোর ঝড় (Dust Storm) প্রবাহিত হতে থাকে, একে আঁধি [Andhi] বলে । আঁধির সময় বাতাস পরিচলন পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা সংগ্রহ করে প্রতি ঘন্টায় ৭০ - ১০০ কি.মি. বেগে প্রবাহিত হতে থাকে । আঁধি প্রবাহিত হলে বায়ুর তাপমত্রা কমে যায় ।
লু [Loo]:- গ্রীষ্মকালে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে ভারতের উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে মাথার ওপর লম্বভাবে প্রচন্ড সূর্যকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হওয়ার জন্য শোঁ-শোঁ শব্দ করে যে উত্তপ্ত বায়ু প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত হয়, তাকে লু [Loo] বলে । লু একটি স্থানীয় বায়ু । এই বায়ু খুব উষ্ণ, শুষ্ক ও পীড়াদায়ক । লু-এর প্রভাবে বায়ুর তাপমাত্রা বাড়ে, কিন্তু আঁধি এসে বায়ুর তাপমাত্রা কমিয়ে কিছুটা স্বস্তি দেয় ।
কালবৈশাখী [Nor' wester]:- বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গও পূর্ব ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে সূর্যের তাপে স্থানীয়ভাবে কিছু নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় । সেই সময় বিকেলের দিকে মাঝে মাঝে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বজ্র-বিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড় প্রবলবেগে ছুটে আসে । এর নাম কালবৈশাখী [Nor' wester] । এর প্রভাবে মাঝে মাঝে কিছু কিছু বৃষ্টিপাত হয় । কালবৈশাখীর প্রভাবে দিনের দুঃসহ গরম কমে যায় ।
১) কালবৈশাখী একটি আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ ।
২) গ্রীষ্মকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে ছোটনাগপুর মালভূমি ও পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসন্নিহিত অঞ্চল প্রখর সূর্যতাপে দ্রুত উত্তপ্ত হয়, ফলে সেখানে স্থানীয়ভাবে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে, সেই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রচন্ড বেগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং উত্তরের শীতল বায়ু ছুটে আসে । এই দুই বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহের সংঘর্ষের ফলে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, তাকেই কালবৈশাখী বলে ।
৩) কালবৈশাখীর ঘূর্ণবাত সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ছুটে আসে, তাই একে ইংরেজিতে Nor’ Wester (নর-ওয়েস্টার) বলা হয় ।
৪) কালবৈশাখীর বায়ু বেশ ঠান্ডা, তাই এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে গ্রীষ্মের প্রচন্ড উষ্ণতা একলাফে অনেকটা কমে যায় ।
চিনুক [Chinook]:- উত্তর আমেরিকায় রকি পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রেইরি অঞ্চলের দিকে এক রকমের উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু পর্বতের গা বেয়ে প্রবাহিত হয় ও নীচের দিকে নেমে আসে । এর নাম চিনুক [Chinook] । চিনুকের প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের উষ্ণতা প্রায় ১৫০ - ২০০ সেলসিয়াস বেড়ে যায় এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমা বরফ গলে যায় । এই জন্য এই বায়ুপ্রবাহকে রেড ইন্ডিয়ানরা স্নো ইটার (Snow Eater) বা তুষার ভক্ষক বলে ।
ফন [Fohn]:- শীতকালে ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে জার্মানির রাইন নদীর উপত্যকার দিকে এক রকমের আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় । এর নাম ফন [Fohn] । ফনের প্রভাবে রাইন উপত্যকা ও আল্পস পর্বতের উত্তর ঢালের বরফ গলে যায় এবং বৃষ্টিপাত হয় ।
খামসিন [Khamsin]:- সাহারা মরুভূমি অঞ্চল থেকে একরকম উষ্ণ, শুষ্ক, ধূলাপূর্ণ ও কষ্টদায়ক বায়ু প্রবাহিত হয় । স্থানভেদে এই বায়ুপ্রবাহ বিভিন্ন নামে পরিচিত । মিশরে এর নাম খামসিন [Khamsin] ।
সোলানো:- সাহারা মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন উষ্ণ, শুষ্ক ও ধুলোপূর্ণ বায়ু স্পেনে সোলানো নামে পরিচিত ।
সিরিক্কো [Sirocco]:- গ্রীষ্মকালে আফ্রিকার লিবিয়া মরুভূমি থেকে এক ধরনের অতি উষ্ণ, শুষ্ক ও ধুলোপূর্ণ বায়ুপ্রবাহ উৎপন্ন হয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে, এই বায়ুপ্রবাহকে সিরিক্কো [Sirocco] বলে । ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার সময় এই বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ুতে পরিণ হয় এবং সিসিলি দ্বীপ, দক্ষিণ ইটালি প্রভৃতি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে ।
হারমাট্টান [Hermattan]:- উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত সাহারা মরুভূমির পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে গিনি উপকূলের দিকে এক রকমের উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, একে হারমাট্টান [Hermattan] বলে । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে আদ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াযুক্ত গিনি উপকূলের আবহাওয়া শুষ্ক ও আরাম দায়ক হয় ।
মিস্ট্রাল:- শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ফ্রান্সের রোন উপত্যকার দিকে একরকমের শীতল ও শুষ্কবায়ু প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে মিস্ট্রাল বলে । এই বায়ুর প্রভাবে রোন উপত্যকার তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায় ।
বোরা :- শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ইটালির আড্রিয়াটিক সাগরের উপকুলের দিকে এক রকমের শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে বোরা বলে । এই বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যায় ।
টাকু :- শীতকালে সুমেরু অঞ্চল থেকে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আলাস্কা উপদ্বীপের ওপর দিয়ে এক রকমের অতি শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে টাকু বলে । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে আলাস্কা উপদ্বীপের অনেকাংশ তুষারাবৃত হয়ে পড়ে ।
পম্পেরো :- বসন্তকালে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ থেকে আর্জেন্টিনার পম্পাস তৃণভূমি অঞ্চলের দিকে যে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয়, তা পম্পেরো নামে পরিচিত । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে পম্পাস অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।
বার্গ :- দক্ষিণ আফ্রিকার কালহারি মরুভূমি থেকে এক রকমের উষ্ণ বায়ু নিকটবর্তী দেশগুলিতে প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে বার্গ বলে । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে কালাহারি মরুভূমির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা বেড়ে যায় ।
আঁধি [Andhi]:- উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের বিকেলবেলার দিকে কখনও কখনও এক রকমের ধুলোর ঝড় (Dust Storm) প্রবাহিত হতে থাকে, একে আঁধি [Andhi] বলে । আঁধির সময় বাতাস পরিচলন পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা সংগ্রহ করে প্রতি ঘন্টায় ৭০ - ১০০ কি.মি. বেগে প্রবাহিত হতে থাকে । আঁধি প্রবাহিত হলে বায়ুর তাপমত্রা কমে যায় ।
লু [Loo]:- গ্রীষ্মকালে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে ভারতের উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে মাথার ওপর লম্বভাবে প্রচন্ড সূর্যকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হওয়ার জন্য শোঁ-শোঁ শব্দ করে যে উত্তপ্ত বায়ু প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত হয়, তাকে লু [Loo] বলে । লু একটি স্থানীয় বায়ু । এই বায়ু খুব উষ্ণ, শুষ্ক ও পীড়াদায়ক । লু-এর প্রভাবে বায়ুর তাপমাত্রা বাড়ে, কিন্তু আঁধি এসে বায়ুর তাপমাত্রা কমিয়ে কিছুটা স্বস্তি দেয় ।
কালবৈশাখী [Nor' wester]:- বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গও পূর্ব ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে সূর্যের তাপে স্থানীয়ভাবে কিছু নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় । সেই সময় বিকেলের দিকে মাঝে মাঝে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বজ্র-বিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড় প্রবলবেগে ছুটে আসে । এর নাম কালবৈশাখী [Nor' wester] । এর প্রভাবে মাঝে মাঝে কিছু কিছু বৃষ্টিপাত হয় । কালবৈশাখীর প্রভাবে দিনের দুঃসহ গরম কমে যায় ।
১) কালবৈশাখী একটি আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ ।
২) গ্রীষ্মকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে ছোটনাগপুর মালভূমি ও পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসন্নিহিত অঞ্চল প্রখর সূর্যতাপে দ্রুত উত্তপ্ত হয়, ফলে সেখানে স্থানীয়ভাবে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে, সেই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রচন্ড বেগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং উত্তরের শীতল বায়ু ছুটে আসে । এই দুই বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহের সংঘর্ষের ফলে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, তাকেই কালবৈশাখী বলে ।
৩) কালবৈশাখীর ঘূর্ণবাত সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ছুটে আসে, তাই একে ইংরেজিতে Nor’ Wester (নর-ওয়েস্টার) বলা হয় ।
৪) কালবৈশাখীর বায়ু বেশ ঠান্ডা, তাই এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে গ্রীষ্মের প্রচন্ড উষ্ণতা একলাফে অনেকটা কমে যায় ।
চিনুক [Chinook]:- উত্তর আমেরিকায় রকি পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রেইরি অঞ্চলের দিকে এক রকমের উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু পর্বতের গা বেয়ে প্রবাহিত হয় ও নীচের দিকে নেমে আসে । এর নাম চিনুক [Chinook] । চিনুকের প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের উষ্ণতা প্রায় ১৫০ - ২০০ সেলসিয়াস বেড়ে যায় এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমা বরফ গলে যায় । এই জন্য এই বায়ুপ্রবাহকে রেড ইন্ডিয়ানরা স্নো ইটার (Snow Eater) বা তুষার ভক্ষক বলে ।
ফন [Fohn]:- শীতকালে ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে জার্মানির রাইন নদীর উপত্যকার দিকে এক রকমের আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় । এর নাম ফন [Fohn] । ফনের প্রভাবে রাইন উপত্যকা ও আল্পস পর্বতের উত্তর ঢালের বরফ গলে যায় এবং বৃষ্টিপাত হয় ।
খামসিন [Khamsin]:- সাহারা মরুভূমি অঞ্চল থেকে একরকম উষ্ণ, শুষ্ক, ধূলাপূর্ণ ও কষ্টদায়ক বায়ু প্রবাহিত হয় । স্থানভেদে এই বায়ুপ্রবাহ বিভিন্ন নামে পরিচিত । মিশরে এর নাম খামসিন [Khamsin] ।
সোলানো:- সাহারা মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন উষ্ণ, শুষ্ক ও ধুলোপূর্ণ বায়ু স্পেনে সোলানো নামে পরিচিত ।
সিরিক্কো [Sirocco]:- গ্রীষ্মকালে আফ্রিকার লিবিয়া মরুভূমি থেকে এক ধরনের অতি উষ্ণ, শুষ্ক ও ধুলোপূর্ণ বায়ুপ্রবাহ উৎপন্ন হয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে, এই বায়ুপ্রবাহকে সিরিক্কো [Sirocco] বলে । ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার সময় এই বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ুতে পরিণ হয় এবং সিসিলি দ্বীপ, দক্ষিণ ইটালি প্রভৃতি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে ।
হারমাট্টান [Hermattan]:- উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত সাহারা মরুভূমির পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে গিনি উপকূলের দিকে এক রকমের উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, একে হারমাট্টান [Hermattan] বলে । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে আদ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াযুক্ত গিনি উপকূলের আবহাওয়া শুষ্ক ও আরাম দায়ক হয় ।
মিস্ট্রাল:- শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ফ্রান্সের রোন উপত্যকার দিকে একরকমের শীতল ও শুষ্কবায়ু প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে মিস্ট্রাল বলে । এই বায়ুর প্রভাবে রোন উপত্যকার তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায় ।
বোরা :- শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ইটালির আড্রিয়াটিক সাগরের উপকুলের দিকে এক রকমের শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে বোরা বলে । এই বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যায় ।
টাকু :- শীতকালে সুমেরু অঞ্চল থেকে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আলাস্কা উপদ্বীপের ওপর দিয়ে এক রকমের অতি শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে টাকু বলে । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে আলাস্কা উপদ্বীপের অনেকাংশ তুষারাবৃত হয়ে পড়ে ।
পম্পেরো :- বসন্তকালে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ থেকে আর্জেন্টিনার পম্পাস তৃণভূমি অঞ্চলের দিকে যে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয়, তা পম্পেরো নামে পরিচিত । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে পম্পাস অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।
বার্গ :- দক্ষিণ আফ্রিকার কালহারি মরুভূমি থেকে এক রকমের উষ্ণ বায়ু নিকটবর্তী দেশগুলিতে প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে বার্গ বলে । এই বায়ুপ্রবাহের ফলে কালাহারি মরুভূমির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা বেড়ে যায় ।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ Sudden or Irregular wind এই নোটটি পড়ার জন্য