জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণগুলো কী ছিল? ও মুসোলিনির উত্থানের কারণগুলো কী ছিল?

জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণগুলো কী ছিল? ও মুসোলিনির উত্থানের কারণগুলো কী ছিল?

জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণগুলো কী ছিল? ও মুসোলিনির উত্থানের কারণগুলো কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে চারদিক থেকে ধেয়ে আসা নিষেধাজ্ঞার বাণ আর অবরোধের পর অবরোধ জার্মানিকে কোণঠাসা করে রাখে। আশৈশব উন্নত ও শক্তিশালী জার্মানির স্বপ্ন দেখা যুবক অ্যাডলফ হিটলারের উত্থান একটি পর্যায়ে এসে পুরো বিশ্বকে আবার উত্তপ্ত করবে এমন আশঙ্কা করেছিলেন অনেক তাত্ত্বিক। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে নিষ্পেষিত, নিগৃহীত, নির্যাতিত হওয়া জার্মান যুবকের প্রতিচ্ছবি হিটলার শৈশব থেকেই বেড়ে ওঠেন তীব্র ইহুদি বিদ্বেষ নিয়ে। জার্মান পরিবারগুলোর হতশ্রী দশার পাশাপাশি তাদের সম্পদেই ইহুদিদের আয়েশ তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। তিনি পুঁজিপতি ইহুদি আর তাদের তোষণকারীদের জব্দ করার জন্য উগ্র জার্মান জাতীয়তাবাদী আদর্শে গড়ে তোলেন নাৎসি দল। পরে এ দলটির ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে নতুন দিনের পথে পা বাড়ায় জার্মানি। যে নতুন নিয়ে ভালো-মন্দ যত তর্কই থাকুক না কোন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর কারণ হিসেবে হিটলারের উত্থান ইতিহাসানুক্রমে অনেক গুরুত্বের দাবিদার।


হিটলার নাৎসি বাহিনীর প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৩৩-৩৪ সালের মধ্যে নাৎসিরা পুরো জার্মানির উপর তাদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে তারা পরিস্থিতির দায় মেনে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করে। পাশাপাশি তারা শুরু থেকেই ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একের পর এক তার শর্ত ভঙ্গ করতে থাকে। ইহুদি পুঁজিপতিদের সম্পদ সরকারি হুকুমে বাজেয়াপ্ত করা শুরু করে নাৎসি সরকার। এদিকে নতুন উদ্যোমে পুনর্গঠন শুরু হয় জার্মান সামরিক বাহিনীর। হিটলার ঘোষণা করেন কোনো মনেই নাৎসিরা দুর্বল জার্মানিকে দেখতে চায় না। তাদের দলের মূলমন্ত্র হচ্ছে এমন এক জার্মানি প্রতিষ্ঠা করা যার সামনে সবাই সম্মানে মাথা নোয়াবে। দেশের অভ্যন্তরে নাৎসিদের সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায় সব কথার শেষ কথা। জার্মানির বিরুদ্ধে অবস্থানরত দেশগুলোকে শায়েস্তা করার নানা আয়োজন চলতে থাকে পুরোদমে। শক্তিশালী সেনা ও নৌবাহিনী তৈরির পাশাপাশি ঢেলে সাজানো হয় বিমান বাহিনীকেও। নতুন প্রযুক্তির বিভিন্ন বিমান সংযুক্ত করে পুরো আধুনিক একটি বাহিনীতে রূপ দেয়া হয় তাদের। ধীরে ধীরে সমরসজ্জা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠার এক পর্যায়ে যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে বসে জার্মানি।


প্রথম জীবনের একজন স্কুল শিক্ষক নাকি সেনাবাহিনীতে যোগদানের ভয়ে সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে সেই লোকটি যে কিনা আবার সাংবাদিকতাও করেছে। পরবর্তী জীবনের সাথে শুরুর দিকের মুসোলিনির সাথে অন্য কারো তুলনা করা কঠিন। ১৯০২ সালে যে মুসোলিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান আবার ২ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালেই ফিরে আসেন দেশে। প্রায় ১০ বছর সাংবাদিকতা করে সম্পাদক বনে যান অ্যাভান্তির নামে একটি পত্রিকার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হটকারীভাবে মিত্র বাহিনীর পক্ষাবলম্বন তাঁকে হতাশ করে, তিনি সমাজতান্ত্রিক থেকে পুরোদস্তুর ডানপন্থী হয়ে যান। এরপর ১৯১৫ সালে তিনি ত্যাগ করেন সমাজতান্ত্রিক দল। সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দক্ষতা দেখিয়ে একজন কর্পোরাল পদে পদোন্নতি হয় তাঁর। জার্মান নেতা হিটলারের মত তিনিও যুদ্ধ চলাকালীন আহত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসেন মিলানে। তারপর বিভিন্ন ডানপন্থী দলের সদস্যদের একত্রিত করে গঠন করেন ফ্যাসিস্ট পার্টি।


১৯২২ সালে ইতালিতে সমাজতান্ত্রিকদের দাপট কমাতে রাজা তৃতীয় ইমানুয়েল ফ্যাসিস্ট পার্টিকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেয়। ক্ষমতায় গিয়ে দোর্দণ্ডদাপটের সাথে মুসোলিনি বামপন্থীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় ১৯২৪ সালে হত্যা করা হয় গিয়াকমো মিত্তিওতিকে। তার ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় ১৯২৯ সালে একদলীয় সরকার হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় ফ্যাসিস্ট পার্টি। মুসোলিনির প্রত্যক্ষ প্রভাবে ১৯৩৬ সালের দিকে জার্মানির সাথে ইতালি একটি মিত্রতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। বলতে গেলে এর পরবর্তী ৫ বছর না যেতে ১৯৪১ সাল নাগাদ ইতালি পুরোপুরি জার্মানির ওপর নির্ভরশীল একটি বন্ধুরাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে মুসোলিনির উত্থান নিশ্চিত হয়ে যায় ১৯৪০ এর মধ্যেই। ১০ জুন পরলোকগত পোপ দ্বিতীয় পলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে রোমে যে ফলক নির্মাণ করা হয় তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। সেদিন ইতালি ইঙ্গ-ফরাসি জোটের বিরুদ্ধে ইতালির সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জনতা মুসোলিনির এ ঘোষণাকে হর্ষধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানালে অনেকটাই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন তিনি।


ইঙ্গ-ফরাসি জোটের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির সাথে কোনো ধরনের আপস না করে উপরন্তু তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে শুরু করেন জার্মান নেতা হিটলার। এর ফলে শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তবে যুদ্ধ শুরুর প্রথম ১০ মাস তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করেনি ইতালি। তারা এককথায় বলতে গেলে নীরব থেকে যায়। তবে পরিস্থিতি হঠাৎ করে বদলে যাওয়ায় জার্মানির সমর্থনে রণাঙ্গনে আবির্ভূত হয় ইতালি। ইতালি যুদ্ধ ঘোষণা করলে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সামনে অনেক সমস্যা এসে হাজির হয়। তারা নিরাপত্তা প্রশ্নে অনেকটা ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকা ও নিকটপ্রাচ্যে সৈন্য মোতায়েন করে যা ইতালির যুদ্ধে যোগদানকে অনেক দিক থেকে বৈধতা দিতে পারে। ইতালির রণতরী থেকে শুরু করে ডেস্ট্রয়ার ও ক্রুজারগুলো নৌপথে তাণ্ডব তুলে। তাদের যুদ্ধ ঘোষণার ঠিক পরদিন ব্রিটিশ বোমারু বিমান থেকে আসমারা ও মাসোয়াতে বেপরোয়া বোমাবর্ষণ শুরু করে। যুদ্ধ চলে সিসিলিসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। তবে যুদ্ধে মার্কিনিদের অংশগ্রহণ একে একে সিরাকিউস, পালাজ্জলো, অগাস্টা এবং ভিজনির পতন নিশ্চিত করে। শেষ পর্যন্ত ফিল্ড মার্শাল মন্টেগোমারির বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে জার্মান ও ইতালির বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। জার্মান বাহিনী দ্রুত ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ এপ্রিল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মুসোলিনি ও তার বান্ধবী ক্লারা প্যাত্তাসি। ক্যাস্ট্রোয় জেনারেল কার্ল উলফ আত্মসমর্পণ করার পর তাদের হত্যা করে চৌরাস্তায় টাঙিয়ে রাখা হয় ক্ষতবিক্ষত লাশ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟