নাৎসিবাদ কাকে বলে? জার্মানিতে কিভাবে নাৎসিবাদের উত্থান ঘটে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্রই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত রাষ্ট্র ছিল জার্মানি ৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হোতা, জার্মান রাষ্ট্রটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সব দিক থেকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ৷ জার্মান জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি দ্রুত আস্থা হারাতে শুরু করেছিলেন ৷ এই প্রেক্ষাপটে জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদের উদ্ভব হয় ৷
হিটলারের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন এবং যুদ্ধের বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য দুবার আয়রন ক্রস লাভ করেন ৷ যুদ্ধ শেষ হলে তিনি জার্মান শ্রমিক দলে যোগদান করেন ৷ পরবর্তীকালে তার নেতৃত্বে এই দলের নাম হয় নাৎসি দল ৷ ১৯২৩ সালে তিনি ভাইমার প্রজাতন্ত্র উচ্ছেদ করতে গিয়ে বরখাস্ত হন ৷ কারারুদ্ধ অবস্থাই তিনি তার আত্মজীবনী "মেই ক্যাম্প" রচনা করেন ৷ এই গ্রন্থটির নাৎসি দলের বাইবেল হিসেবে চিহ্নিত হয় ৷
ন্যাসিবাদ সংখ্যাগরিষ্ঠের সংসদীয় রীতিনীতি বিপরীত পন্থী মতাদর্শ ৷ হিটলার বলেন ব্যক্তি কেন্দ্রিক একনায়ক তন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব ৷ তিনি আরো বলেন ইহুদি বিরোধিতা,কমিউনিস্ট বিরোধিতা, ক্যাথলিক বিরোধিতা, ছাড়া জার্মানির অগ্রগতি সম্ভব নয় ৷ হিটলারের এই চিন্তা ধারা নাৎসিবাদ নামে চিহ্নিত ৷ হিটলার তার "মেই ক্যাম্প" গ্রন্থে বলেছেন ,"ভার্সাই সন্ধি চুক্তির জার্মান জাতিকে অবমাননা করেছেন, এই চুক্তির লঙ্ঘন করে এই জার্মান জাতি অবমাননার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে ৷" আর সেই মুক্তির একমাত্র নাৎসিবাদ অনুসরণই সম্ভব ৷ হিটলারের এই ঘোষণায় জার্মান যুব সম্প্রদায় দলে দলে হিটলারের ভক্ত হয়ে ওঠে ৷ তিনি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জাতিত্বের কথা প্রচার করেন ৷
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে হিটলার দেখেন শুধুমাত্র "মেই ক্যাম্পে"- র জোরে গোটা জার্মান যুব সমাজ উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভূত ৷ তিনি তাদের একাংশে নিয়ে গিয়ে গড়ে তোলেন তার 'ঝটিকা বাহিনী" ৷ জার্মান ভাষায় এদের সংক্ষেপে বলা হতো SA বাহিনী ৷ আবার নাৎসি দলের অনুগামীরা বাদামি রং এর পোশাক পরতে বলে তাদের বলা হতো ব্রাউন শার্ট ব্রাউন শার্টের কর্তৃত্বে ছিল SS বাহিনী ৷ SS বাহিনী আবার কালো রঙের পোশাক পরতো তাই এদের বলা হত ব্ল্যাক শার্ট ৷ এদের মূল কাজ ছিল মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে নেতাদের জীবন রক্ষা করা ৷ এই দলের মধ্যে ছিল "গোস্টাপো বাহিনী" যাদের মূল কাজ ছিল নাংসি দলের সমালোচকদের গোপনে হত্যা করা করা ৷ নাংসিদের পতাকা ছিল রক্তবর্ণ যার মাঝখানে শোভা পেত কালো রঙের স্বস্তিকা চিহ্ন ৷ SA ও SS উভয় বাহিনীর পোশাকে স্বস্তিকা চিহ্ন থাকতো ৷
১৯৩২ সালে আগস্ট মাসের নির্বাচনে ৬০৮ টি আসনের মধ্য দিয়ে ২৩০ টি আসন দখল করে নাৎসিরায় একক বৃহত্তম দলের পরিণত হয় ৷ যদিও কোন রাজনৈতিক দলের নিরঙ্কুশ গঠিত না থাকার কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকে । ১৯৩২ সালে নভেম্বর মাসে নতুন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা হয় কিন্তু এবার কোন দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট হিডেনবার একক বৃহত্তম দলের নেতা হিসেবে হিটলার কে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানায় ৷ হিটলার ক্ষমতায় এসেই আইনসভা ভেঙে দেয় ৷ এরপর ১৯৩৩ সালে নির্বাচনে হিটলার সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করেন, তিনি অন্যান্য ছোটখাটো দলকে নিয়ে জোট সরকার গঠন করেন ৷
১৯৩৪ সালে জুলাই মাসে এক ডিগ্রি জারি করে ঘোষণা করেন যে জার্মানিতে মাত্র একটি রাজনৈতিক দল থাকবে ৷ ১৯৩৪ সালে আগস্টে প্রেসিডেন্ট হিডেনবার্গের মৃত্যুর পর হিটলার একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও চ্যালেঞ্জারের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন ৷ এছাড়াও তিনি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ অধিনায়ক ছিলেন ৷ তিনি নাংসি দলের একনিষ্ঠ কর্মদ্বীন সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে নিযুক্ত করেন ৷ তিনি নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেন , বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা চালু হয় ৷ দেশের ভিতর সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে হিটলার শুরু করেন অগ্রাসী পররাষ্ট্র নীতি । তিনি একের পর এক রাজ্য জয় করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পথ প্রস্তুত করেন ।
নাৎসিবাদের বিরোধিতার ঐতিহাসিকরা সবর থাকলেও এটা ঠিক হয় ৷ এই দল আন্তরিকভাবে চেয়েছিল জার্মানির যাবতীয় কলঙ্গ মুছে দিতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং বিজয়ী শক্তিবর্গ কর্তৃত্ব লুণ্ঠিত জার্মানির সর্বহারা মানুষ হিটলারের মতই তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি খুজে পেয়েছিল ৷ নাৎসিবাদের উত্থান সমকালীন ইউরোপীয় রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ৷