হায়দার আলী ও টিপু সুলতানের অধীনে মহীশূর কিভাবে ইংরেজদের আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অথবা দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের প্রাধান্য অর্জন প্রয়াস প্রতিরোধ করতে টিপু সুলতান ও হায়দার আলীর ভূমিকা লেখ

 হায়দার আলী ও টিপু সুলতানের অধীনে মহীশূর কিভাবে ইংরেজদের আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়  অথবা দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের প্রাধান্য অর্জন প্রয়াস প্রতিরোধ করতে টিপু সুলতান ও হায়দার আলীর ভূমিকা লেখ


হায়দার আলী ও টিপু সুলতানের অধীনে মহীসুরের উত্থান এবং ইংরেজদের আশঙ্কার কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর?



 হায়দার আলী নামে এক যোদ্ধা অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মহীশূর একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে হায়দার আলীর সঙ্গে ইংরেজদের কোন বিবোধ না থাকলেও কিছুকাল পর উভয়পক্ষের বিবোধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠ। এর ফলে হায়দার আলী ও তার পুত্র টিপু সুলতান ইংরেজদের বিরুদ্ধে চারটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধগুলি ইস মহীশূর যুদ্ধ নামে পরিচিত ছিল। হায়দার আলী মহীশূর কে একটি পরাক্রান্ত রাজ্যে পরিণত করে। প্রথমদিকে হায়দার ব্রিটিশ বিরোধী ছিলেন না তার প্রধান লক্ষ্য ছিল মারাঠা ও নিজামের আক্রমণ প্রতিবোধ করে মহীশূরের অখন্ডতা রক্ষা করা। কিন্তু কোম্পানির মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ হায়দার বিরোধী আর্কটের নবাব মহম্মদ আলীর সঙ্গে সম্ভাব গড়ে তুললে হায়দারের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের বদলে শত্রুতায় পরিণত হয়।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
কখনো এককভাবে কখনো মারাঠা ও নিজামের সঙ্গে মিলিতভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তি জোট গঠন করে হায়দার দুটি যুদ্ধের অবতারণা করেন1) প্রথম ইন্স মহীশূর যুদ্ধের সময় হঠাৎ একদল অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে হায়দার দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি মাদ্রাজের উপকণ্ঠে হাজির হন। ভীত মাদ্রাজ কাউন্সিল হায়দারের সঙ্গে মাদ্রাজের সন্ধি করতে বাধ্য হয় সন্ধির শর্ত অনুযায়ী হায়দার ও ইংরেজ কর্তৃপক্ষ উভয়ই একে অপরের বিজিত স্থান ও যুদ্ধবন্দী প্রত্যর্পণ করেন। এছাড়াও স্থির হয় হায়দার তৃতীয় কোন শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে ইংরেজরা রক্ষা করবে।

• পেশোয়া মাধব রাও মহীশূর আক্রমণ করলেও মাদ্রাজের সন্ধির শর্ত মেনে ইংরেজরা হায়দার কে সাহায্য করেনি। এর পাশাপাশি গুন্টুর সমস্যা সৃষ্টির জন্য হায়দার ইংরেজদের উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন। এই অবস্থায় হায়দার বুঝতে পারেন ইংরেজরাই মহীশূরের প্রধান শত্রু। তাই ইন্স মারাটা যুদ্ধ শুরু হলে সুযোগ বুঝে হায়দার ইংরেজবিরোধী মহীশূর মারাঠা শক্তি জোট গড়ে তোলেন পরে নিজামকেও ওই জোটে টেনে এনে তিনি ইংরেজ শক্তির উচ্ছেদে অগ্রসর হন। শুরু হয় দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ (17৪০খ্রি:)। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে হায়দার ব্রিটিশ শক্তিকে বিপর্যস্ত করে তোলেন ঠিক এই সময় ১৭৮২খ্রি: হঠাৎ হায়দারের মৃত্যু হয়।

পরবর্তীকালে হায়দার আলীর পুত্র টিপু সুলতান মহীশূরের সিংহাসনে বসেন। যিনি মহীশুরের বাঘ নামে পরিচিত। তিনি জন্মভূমি রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো প্রাণ দিয়েছিলেন। ইংরেজদের সাথে টিপুর সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না। টিপু ছিলেন ইংরেজদের ঘোরতর শত্রু। দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ শক্তিকে বিলুপ্ত করতে কেবল নিজস্ব শক্তির ওপর নির্ভর না করে তিনি ইংরেজের শত্রু ফ্রান্সের সম্রাট ও তুরস্কের সুলতানের কাছেও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান।

ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি ছিল নতুন এক যুদ্ধ শুরুর মাঝে সাময়িক বিরতি মাত্র। টিপু সুলতান বুঝেছিলেন যে ক্ষমতার লোভেই ইংরেজরা মহীশূর দখল করার চেষ্টা করবে তাই তিনি গোপনে কনস্টান্টিনোপল, কাবুল মরিসাস প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সামরিক সাহায্যের জন্য যোগাযোগ রাখেন এবং ফরাসি সম্রাট ও তুরস্কের সুলতানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

ইন্স ফরাসি দ্বন্দ্বের সময় ইংরেজরা নিজামীর কাছে যে শক্তি সংঘ গঠনের প্রস্তাব পাঠায় তা থেকে টিপুকে বাদ রাখে এই ঘটনায় টিপু অভ্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রিটিশ অধীনস্থ রাজ্য তিবাফুর আক্রমণ করেন। কর্নওয়ালিস নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্রিশক্তি জোট গঠন করেন। এই শক্তি জোটের সঙ্গে টিপুর তৃতীয় ইস মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়, এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু ইংরেজদের সঙ্গে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি (1792খ্রি:) স্বাক্ষর করেন। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ টিপু ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ও তার দুই পুত্রকে কোম্পানির কাছে জামিন হিসেবে রাখতে বাধ্য হল।

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির মাধ্যমে তৃতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে অবসান ঘটে। এই সন্ধি অনুযায়ী।) নিজ রাজ্যের অর্ধাংশ ইংরেজ মারাঠা ও নিজামকে ছেড়ে দেন 2) কৃষ্ণা থেকে পেনার নদী পর্যন্ত এলাকা পায় নিজাম 3) তুঙ্গা ভদ্রা নদীর সন্নিহিত অঞ্চল পায় মারাঠারা 4) এছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসাবে টিপুকে নগদ ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ইংরেজদের দিতে হয়। সর্বশেষ সন্ধির শর্ত পালনের নিশ্চয়তা স্বরূপ তার দুই পুত্রকে ইংরেজদের হাতে অর্পণ করতে টিপু বাধ্য হন।

১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওয়েলেসলি টিপুকে এক চরমপত্র পাঠিয়ে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির চুক্তিতে স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন। টিপু এই চুক্তি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে ওয়েলেসনের নেতৃত্বে ইংরেজ মারাঠা অন্য নিজামের জোট মহীশূর আক্রমণ করে শুরু হয় চতুর্থ ইঙ্গমহীশূর যুদ্ধ যেখানে টিপু চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হয় এবং তিনি নিহত হন। সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে টিপু সুলতান আজীবন বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন তবুও তার ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম দেশবাসীকে বিশেষত পরবর্তী প্রজন্মকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟