আদি মধ্যযুগীয় কাল পর্বের ভারতবর্ষে বিবাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে কি জানো সংক্ষেপে আলোচনা কর
ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিবাহ ব্যবস্থা মানব মানবের এক অবিচ্ছেদ অঙ্গ এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্রতম একটি মাধ্যম ৷ এই বিবাহ ব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত একটি অত্যন্ত মানবিক পারিবারিক এবং যথেষ্ট শ্রদ্ধা পূর্ণ বন্ধন রূপেই স্বীকৃত ৷ ভারতবর্ষের মূলত ৮ প্রকার বিবাহ ব্যবস্থার প্রচলিত ছিল ৷ এগুলি হল ব্রহ্মবিবাহ,দৈব বিবাহ প্রজাপত্য বিবাহ,আর্যবিবাহ,গান্ধব্যবিবাহ, আসুরবিবাহ এবং পৈশাচ বিবাহ ৷ ভারতীয় বিভিন্ন জনসম্প্রদায়ের বা অঞ্চল ভেবে এই বিবাহ ব্যবস্থার প্রচলিত ছিল ৷ রীতিনীতি বা পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে কিছু পৃথকীকরণ থাকলেও একটি জায়গায় মোটামুটি অভিন্নতা হল একজন নারী ও একজন পুরুষ বিবাহের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পরস্পরের কাছে আসা সমগ্র জীবন সুখে দুঃখে একসঙ্গে অতিবাহিত করার জন্য ৷ এই পারস্পরিক কাছে আসার সামাজিক স্বীকৃতি ব্যবস্থাই ছিল বিবাহ ব্যবস্থা ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ব্রহ্মবিবাহ ব্যবস্থায় কন্যার পিতা মনোনীত সুপাত্রের হাতে কন্যাকে সম্প্রদান করে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেন ৷ দৈব বিবাহের কন্যার পিতা তার সন্তানকে সৎ পুরোহিতের হাতে সম্পাদিত করতেন । যথাযথ ধর্মচার সহকারে বিবাহ সম্পাদিত হতো ৷ আর্য বিবাহের কন্যাকে গ্রহণ করা হতো ৷ পত্র পক্ষ কন্যার পিতা কে গোদান করত ৷ প্রজাপত্য বিবাহ বিশেষ জনপ্রিয় ছিল এক্ষেত্রে কন্যার পিতা নিজ মনোনীত পাত্রের হাতে কন্যাকে সম্প্রদান করতেন ৷ কন্যা তার ধর্মীয় কর্তব্য পালনে ভরণপোষণের দায়-দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা ঘোষণা করতেন ৷
ভারতীয় বিবাহ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে খুব স্বল্পকারে গান্ধর্বিবাহ হতো ৷ গান্ধার্ব বিবাহে পাত্র ও পাত্রী নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরস্পরের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো ৷ আসরবিবাহ ব্যবস্থায় পার্থক্য নগদ অর্থের বিনিময়ে কন্যাকে গ্রহণ করতেন ৷ অর্থাৎ এই বিবাহে কন্যা ক্রয় করা হতো । রাক্ষস বিবাহের পাত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে বিবাহ করা হতো ৷ পিশাচ বিবাহের নির্জিত অপ্রকৃত বা মও কন্যা কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে মূলত সম্ভোগের উদ্দেশ্যে বিবাহ করা হতো এই ব্যবস্থা ছিল নিন্দিত প্রথা ৷
ক্ষত্রিয় রাজবংশ গুলিতে স্মরণ সভা আহবান করে কন্যার বিবাহের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল ৷ এক্ষেত্রে কন্যার পিতা সারা দেশের উপযুক্ত পাত্রদের সবাই আহ্বান করতেন, কন্যা তাদের মধ্যে পছন্দের যেকোনো একজনকে স্বামীর উপর বরণ করে নিতেন । কামসুত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে বিবাহ সম্পর্কে মূল লক্ষ্য পতি পত্নীর মনের মিলন ৷ বিবাহে অনিবার্যতা অস্বীকার না করেও এই গ্রন্থে কন্যাদের জন্য সাবধানতা অবলম্বনে পরামর্শ দিয়েছেন ৷ কামসূত্র গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বাচনায় বলেন পাত্রের রূপ সামর্থ্য সম্পত্তি ইত্যাদি থেকেও তার নৈতিক চরিত্রের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া বাঞ্ছনীয় ৷"
সপ্তম শতকের পরবর্তীকালে নিয়ন্ত্রিত সম্পূর্ণ বর্জিত হয়নি এমনকি অশবর্ণবিবাহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় ৷ এমনকি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে কন্যা বিবাহ যোগ্য হওয়ার তিন বছরের মধ্যে পিতা তার বিবাহের আয়োজন সম্পন্ন করতে দায়বদ্ধ ৷ অতি উপর প্রতির কোন প্রভূত থাকবে না ৷ এমনকি পত্নীর ওপর কোনরূপ শারীরিক নির্যাতন করা সেকালে আইনসিদ্ধ ছিল না ৷ প্রবাসী স্বামীর প্রতি পত্নীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে পত্নীতার স্বামীর প্রত্যাবর্তনের জন্য নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে যদি সে সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী অন্যের আশ্রয় পার্থী হতে পারতো ৷
আলোচনা শেষে বলা যায় আদি মধ্যযুগীয় কাল পর্বে বিবাহের ধরন ছিল বিভিন্ন ধরনের ৷ তবে সে যুগের কন্যাদের জীবন খুব একটা সুখর ছিল না ৷ তারা অনেক ক্ষেত্রেই ছিল পতির নিয়তাধীন এই প্রসঙ্গে স্মৃতিচন্ডিকাতে বলা হয়েছে,"পত্নী স্থায়ীভাবে রোগা গ্রস্ত হলে সন্তান ধরনের অক্ষম হলে কিংবা শুধুমাত্র পূর্ণ সন্তান জন্ম দিলে সামি দ্বিতীয় বিবাহের অধিকারী হতেন ৷" এথেকে সহজেই অনুমেয় আদি মধ্যযুগে পিতৃতান্তিকতার কর্তৃত্ব কম বেশি প্রতিষ্ঠিত ছিল ৷