গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর বা,গান্ধার শিল্পের মূল বৈশিষ্ট্য কী?

গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কুষাণযুগ ছিল এক অতি সৃজনশীল যুগ। বিদেশীয় হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কৃষাণরা মিশে গিয়েছিলেন বা ভারতীয় সংস্কৃতি তাঁদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। এযুগে দেশীয় ও বিদেশীয় ভাবধারা ও সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। মিশ্র সংস্কৃতির অত্যন্ত শুভ প্রভাব পড়েছিল ভাস্কর্য শিল্পে। এর অন্যতম প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল গান্ধার শিল্প। গান্ধার শিল্পরীতির সামগ্রিক আলোচনায় প্রধানত তিন-চারটি বিষয় খুঁটিয়ে দেখা দরকার। এগুলি হল এর ভৌগোলিক বিস্তার সময়কাল, এর বিষয়বস্তু, উৎপত্তি বা উদভবের প্রেক্ষাপট, বৈশিষ্ট্য এবং সর্বোপরি এর স্বরূপ ও গুরুত্ব খাবার শিল্পের বিষয়বস্তু ছিল নিশ্চিতভাবে ভারতীয় চরিত্রগত দিক থেকে এই শিল্প ছিল ধর্মীয়। এর প্রধান ভাবধারা ছিল বৌদ্ধধর্ম)


বুদ্ধের জীবনকে পাথেয় করে আখ্যানমূলক ভাস্কর্যের জনপ্রিয়তা ও বাহুল্য মাদ্ধারের শিল্পকলায় অনস্বীকার্য। গান্ধার শিল্পে প্রধানত সাইরতা শিস্ট পাথর ব্যবহৃত। পরবর্তীকালে অবশ্য স্টুকোর ব্যবহারও নিয়মিতভাবে হতে থাকে। বুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন বোধিসত্ত্বের মূর্তিও এই সময় নির্মিত হয়। এছাড়া রী, অবলোকিতেশ্বর, মৈত্রের এবং বুদ্ধদেবের সহচর বজ্রপাণির মূর্তি নির্মিত হয়েছিল গান্ধারের ভাষরদের ধারা। এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে যুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব এবং ব্যাপাণির মূর্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে শিল্পীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভারতীয় বিভিন্ন প্রতীকের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ প্রসঙ্গের বৃদ্ধদেবের কামনীয় দৃষ্টি, চিকৃতি, মুখমণ্ডল টিকালো ধরনের নাক, দীর্ঘায়িত মুখদের সঙ্গে গ্রিক / হেজীয় সেকতা অ্যাপোলোর বেশ সাদৃশ্য আছে। আবার বজ্রপাণির মূর্তি কল্পনার মধ্যে গ্রিক দেবতা জীয়াসেবা প্রচার খুব স্পষ্ট। যৌবনসুলভ লাবণ্য ও কামনীয়তা মানবদেহে বিস্ময়ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন গাধারের শিল্পীবৃন্দ মাধমের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণও বিশেষভাবে প্রশংসিত।


গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর


গান্ধারের শৈলীতে বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্ব মূর্তি যখন তৈরি হয়েছে তখন উত্তর-পশ্চিমে সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রিক, শক, কুষলদের রাজনৈতিক উপস্থিতি ও আধিপত্তা সুবিদিত। আর এই রাজনৈতিক প্রেক্ষিত ভিনসেন্ট স্মিথ ও আলহেড কুশে প্রমুখ ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অতীতচর্চার পদ্ধতির ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। তাদের মূল প্রতিপা বিষয় ছিল বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্ব প্রতিমা নির্মাণ তথা ভাস্কর্যে মানবায়নের নিখুঁত ও নান্দনিক উপস্থাপনা ভারতীয় শিল্পীর স্বকীয় উদ্ভাবন ছিল না। এই দক্ষতা তাঁরা পেয়েছিলেন গ্রিক, বা রোমান সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার ফলে। তবে এই ধারণা খণ্ডন করেছিলেন আনন্দ। কুমারস্বামী, পরবর্তীকালে স্টেলা, জাসরিশ ও নীহ সিগণ। তাদের মূল বক্তব্য ছিল গান্ধার শিল্পী শলীতে বহিচতলারতীয় উপাদান থাকলেও তা কেবলমাত্র ভাস্কর্যের বহিরকেই প্রতীয়মান ছিল। তাই বলা যায় যে, গান্ধার শিল্প জন্মলাভ করেছিল গ্রিক শিল্পরীতি ও ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের সংমিশ্রণের ফলস্বরূপ। তবে একটা করা অবশ্য জোরের সঙ্গেই বলা যায় যে, ভারতীয় বিষয়বস্তু এবং কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় মূর্তিবিদ্যার ঐতিহ্য মেনে চলার সত্ত্বেও প্রদারের বুদ্ধমূর্তিগুলিতে স্বতস্ফূর্ততা ও আধ্যাত্মিকতার অভাব ছিল। পরিবর্তে যান্ত্রিকতা স্থান লাভ করেছিল এই শিল্পে। যার ফলে মূর্তিগুলির দৈহিক সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়েছিল সত্য, কিন্তু তা ভারতবাসীর হৃদয় জয় করতে পারেনি।


 গান্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর



গান্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর


গান্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য

কুষাণ যুগের কুষাণ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের উত্তর-পশ্চিমে গান্ধার রাজ্যে গ্রীক রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতি সংমিশ্রণে যে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল তাকে গান্ধার শিল্প বলে ৷ কোন কোন ঐতিহাসিক এই শিল্পকে ইন্দগ্রিক শিল্প সমন্বয়ে বলে উল্লেখ করেছেন ৷


গান্ধার শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল :-   

  1.  গ্রীক রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতি সমন্বয়ে এই শিল্পরীতি গড়ে উঠেছে ৷
  2. চুনপাথর বালি পোড়ামাটি ও পলেস্টার অফ প্যারিস মূর্তি নির্মাণের পদ্ধতি ৷
  3. গান্ধার শিল্পে মূর্তি নির্মাণের সোনালী রঙের গাড় বলে দেওয়া হতো ৷ এবং ক্ষেত্র বিশেষে মূর্তিতে গোঁফ লাগানো বা পাপড়ি পরানো রীতিও দেখা যায় ৷
  4.  এই শিল্পে প্রাণবন্ত বেশিবহুল কেশ যুক্ত বিষয়বস্তু খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ।
  5. দামি অলংকার,উত্তরীয় ও প্রাসাধনের ব্যবহার এই শিল্পে নতুন মাত্রা পেয়েছিল ৷
  6. মশৃণতা ও পালিশ এর কাজ এই শিল্পকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল ৷
  7. এই শিল্পে বুদ্ধকে পথিকের পরিবর্তে মূর্তির মাধ্যমে উপস্থিত তো করা হয়েছিল ৷


বৌদ্ধ মূর্তি নির্মাণের গান্ধার শিল্পের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কুষাণ সভ্যতা উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে গান্ধার শিল্পের অবদান অপরিহার্য কুষাণ রাজা কনিষ্কের আমলে এই গান্ধার শিল্পের চরম অগ্রগতি ঘটে ভারতবর্ষে ছাড়াও চীন করিয়া মঙ্গোলিয়া জাপান মধ্য এশিয়া প্রভৃতি স্থানে কনিষ্কের উদ্দেশ্য উদ্যোগে গান্ধার শিল্প জনপ্রিয় হয়ে ওঠে

Related Posts
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟