জায়গিরদারি সংকট বলতে কি বুঝো, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জায়গীরদারী সংকট কতটা দায়ী ছিল

জায়গিরদারি সংকট বলতে কি বুঝো, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জায়গীরদারী সংকট কতটা দায়ী ছিল

 জায়গিরদারি সংকট বলতে কি বুঝো, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জায়গীরদারী সংকট কতটা দায়ী ছিল

জায়গিরদারি সংকট বলতে কি বুঝো, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জায়গীরদারী সংকট কতটা দায়ী  ছিল

জায়গিরদারি সংকট বলতে কি বুঝো, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জায়গীরদারী সংকট কতটা দায়ী ছিল 

বিভিন্ন পশ্চিমে রাষ্ট্রের ন্যায় ভারতবর্ষেও এই সময় মুদ্রার মূল্য হ্রাস পায় এবং একইসঙ্গে শাসক শ্রেণীর জীবনযাত্রায় ব্যয় এবং প্রশাসনিক খরচ বেড়ে যায় ৷ অধ্যাপক আতাহার আলি সাম্প্রতিক দেখিয়েছেন যে সপ্তদশ শতক থেকে বিলাস সামগ্রীর দাম বাড়তে থাকে কারণ ইউরোপের বাজারে চাহিদা বেড়ে গেলে যোগান পূর্ব থেকে পশ্চিম দেশের বাজারে দিকে বাড়তে শুরু করে, ফলে ভারতবর্ষ,ইরান প্রভৃতি দেশে এই ধরনের জিনিসের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে, বিলাসবহুল জীবনে আসক্ত  মুঘল রাজপুত্রের আয় বাড়ার প্রয়োজনও জরুরী হয়ে পড়ে ৷ কিন্তু যেহেতু ভারতীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি, সেহেতু কৃষির উৎপাদন ও কৃষিজ দ্রব্যের মূল্য বাড়লে তাতেও ভারতীয়দের আয় বৃদ্ধি সম্ভাবনা ছিল ৷ কিন্তু হাসিল জমা থেকেও অনেকাংশেই কম হতো ।


এরূপ পরিস্থিতিতে উৎকৃষ্ট জায়গীরার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায় অন্যদিকে মনসবদারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সীমিত সংখ্যক জায়গীর জন্য অসংখ্য মনসবদারির প্রতিযোগিতা দেখা দেয় ৷ আবার এই দ্বন্দ্বকে আরো তীব্রতর করে জায়গিরের অসম বন্ঠন ও মুষ্টিমেয় মনসবদারের হাতে সম্পদের ভারসাম্যহীন কেন্দ্রিকরণ ৷ ঔরঙ্গজেবের সময় যে জায়গিরের সমস্যা প্রথম দেখা যায় একথা মনে করা ভুল সম্রাট শাহজাহানের সময় জমা ও হাসিলের মধ্যে পার্থক্য জায়গিরদারী ব্যবস্থা সমস্যা সৃষ্টি করে ৷



শাহজাহানের সময় সমসাময়িক অবস্থা আয়তো এলেও স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারে না, সাম্রাজ্যের সম্পদ আই বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ধার্য করে এবং মনসবদারদের কৃষি সম্প্রসারণের দিকে দৃষ্টি প্রদানের আদেশ দেওয়ার সত্বেও ঔরঙ্গজেব এই অর্থনৈতিক সমস্যা এড়াতে পারেনি ৷ অন্যদিকে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধের ফলে বহু সংখ্যক দক্ষিনে সামরিক নেতাকে মনসবদার পদে নিয়োগ করতে হয়েছিল যাতে তারা শত্রুপেক্ষের যোগ না দেয় এবং বিদ্রোহী না হয়ে ওঠেন ৷ এর ফলে জায়গীর হিসেবে বন্ঠনযোগ্য জমির তুলনায় মনসবদারদের সমস্যা প্রভৃত পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ৷


উপরন্তু এই সময় মারাঠা আক্রমণের দক্ষিণে ও উত্তর ভারতের সমানভাবে শাসনব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এর ফলে অধিকাংশ জায়গীর থেকে মনসবদার তাদের প্রাপ্ত আদায় পুরোপুরি ভাবে আদায় করতে পারতেন না  ৷ রিচার্ড বলেছেন," মনসবদারদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জায়গির যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল তার সম্পূর্ণভাবে ওরঙ্গজেব ভ্রান্ত নীতির ফল ৷"ওরঙ্গজেব যদি দাক্ষিণাত্যের অধিকৃত অঞ্চলে মুঘল শাসনব্যবস্থাকে সুসংহত করে বিজাপুর ও গোলকুন্ডার ভুসম্পত্তিকে যথার্থভাবে কাজে লাগাত তাহলে এই অর্থনৈতিক  সমস্যাকে হয়তো অনায়াসে এড়িয়ে চলা সম্ভব হতো ৷"


অরঙ্গজেব উৎকৃষ্ট ও উর্বর অঞ্চল গুলিকে খালিসা জমিতে পরিণত করে ৷ অথবা দাক্ষিণাতে কর্মরত মনসবদারদের জায়গীর ও যুদ্ধরত সৈন্যদের বেতন দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন ৷ এরপর জায়গির হিসেবে বন্ঠনের জন্য যে জমি পড়ে রইল তার একান্ত অনুপযুক্ত ও অত্যন্ত অশান্ত  অঞ্চলে অবস্থিত ৷ উপরন্ত সেসব মনসবদারদের এই অঞ্চল জায়গীর দেওয়া হতো যারা প্রাদেশিক শাসন করে তাদের কাছ থেকে কোনরকম সাহায্য পেতেন না ৷ তাই এই অনুপযুক্ত রাজনৈতিক দিক থেকে রাজস্ব আদায় করা ছিল অত্যন্ত দুরও কাজ ৷ বস্তুত মারাঠা বিদ্রোহ এই সময় মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে একজন রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷


এই সমস্যা সমাধান করতে মুঘল সম্রাট যে তার সকল সম্পদকে কাজে লাগাবেন এতে আশ্চর্য হবার কিছু নয় ৷ কিন্তু তা হলেও সাম্রাজ্যের সামগ্রিক ব্যবহারের তুলনায় সম্পদের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল এ কথা অস্বীকার করা যায় না । রিচার্ড নিজে দেখিয়েছেন যে ," দাক্ষিণাত্যের খালিসা এবং জায়গীর প্রকার জমি থেকে হাসিলের পরিমাণ তুলনায় কমে আসছিল ৷ জায়গিরদারী সমস্যার মূল চরিত্র আসলে সাম্রাজ্যের শুধুমাত্র সরকারি নীতির পরিবর্তন করে অথবা শুধু কৃষির সম্প্রসারণ করে এই সমস্যা সমাধান করা যেত না। নতুন কারিগরি বিদ্যার প্রয়োগ করে শিল্পের উন্নতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারলে তবেই সম্পদ বৃদ্ধি পাবে । এর জন্য প্রয়োজন ছিল সামাজিক পরিবর্তন এবং তা কোন একজন মাত্র সম্রাটের স্বার্থের বাইরে ৷


রাজনৈতিক বা অন্যান্য কারণে মনসবদারীর সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে থাকে এবং সেই সঙ্গে খালিসা অঞ্চল থেকে জমি নিয়ে মনসবদারদের দাবি মেটানোর চেষ্টা চলছে এর ফলে একদিকে যেমন মনসবদারীর দুরবস্থা বেড়েছে তেমনি অন্যদিকে সম্রাটের আয় হাস পেয়েছে ৷ যা জায়গির সংকটকে ঘনীভূত করেছিল ৷ তাই বলা হয় মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য একাধিক কারণ দায়ী থাকলেও এই জায়গির সংকট মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল । বরং এ কথা বলা যায় যে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জায়গীরদারী সংকটের অবদান কোন অংশে কম ছিল না ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟