আদি মধ্যযুগে ভারতে গিল্ডের গুরুত্ব নিরূপণ করো। অথবা, আদি-মধ্যযুগে গিল্ডব্যবস্থা (৬০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ)।

আদি মধ্যযুগে ভারতে গিল্ডের গুরুত্ব নিরূপণ করো। অথবা, আদি-মধ্যযুগে গিল্ডব্যবস্থা (৬০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ)।

 আদি মধ্যযুগে ভারতে গিল্ডের গুরুত্ব নিরূপণ করো। অথবা, আদি-মধ্যযুগে গিল্ডব্যবস্থা (৬০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ)।


আদি মধ্যযুগে ভারতে গিল্ডের গুরুত্ব নিরূপণ করো।

আদি মধ্যযুগে ভারতে গিল্ডের গুরুত্ব :- 

প্রাচীন ভারতের ন্যায় আদি-মধ্যযুগেও গিল্ডব্যবস্থা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন লেখমালা, ধর্মসূত্র ও তথ্যসমূহে। এই ব্যবস্থা মূলত ব্যবসায়ী ও বণিক সম্প্রদায়ের স্বার্থসংরক্ষণে গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকেই উত্তর ভারতে কারিগরি শিল্পে পেশাদারি সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছিল। এইসময় থেকে প্রত্যেক হস্তশিল্প এমনকি বৃহদায়তন শিল্পের ক্ষেত্রেও নিজস্ব ও স্বতন্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এই সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল আঞ্চলিক চরিত্রযুক্ত।। দ্বাদশ শতক থেকে কারিগরি সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রেণি অর্থে শ্রমনির্ভর বা বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত সম্প্রদায় অপেক্ষা জাতিগোষ্ঠীভুক্ত শ্রেণির প্রাধান্য বিস্তারিত হয়। এই সমাজে ৩৬টি মিশ্রজাতির অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। বেগুলি 'সংকর' বা 'মিশ্রজাতি' বলে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ও বৃহস্পর্ম পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে এই জাতিগুলি হল-কর্মকার (যারা লোহার কাজ করে), কুম্ভকার (যারা মাটির কাজ করে), কংসকার (কাঁসারি), শঙ্কাকার (শাঙ্গিক), মালাকার (পুষ্পবিক্রেতা), স্বর্ণকার (যারা সোনার কাজ করে), ভৈলকার (তেলবিক্রেতা), চর্মকার (চর্মশিল্পী) প্রভৃতি। তবে আদি-মধ্যযুগীয় কালপর্বে এই নতুন সংগঠনগুলির সদস্য সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, ভায় ফলে পুরানো সংঘগুলি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। এই সমস্ত শ্রেণি বা গিল্ডগুলির কাজকর্মকে তত্ত্বাবধানের জন্য কার্যচিন্তক, হিতোবাদী নামক কর্মচারী নিযুক্ত থাকত।

প্রায় নবম শতক নাগাদ গুর্জর প্রতিহার রাজ্যে গিল্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গোপগিরির (গোয়ালিয়র) দুটি লেখ থেকে ২০ জন তৈলিক প্রধান এবং ১৪ জন মালাকার প্রধানদের নাম পাওয়া যায়। তবে প্রাচীন ভারতে শিল্পী, কারিগরি, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি জীবিকার স্বার্থে যে উন্নত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিল আদি-মধ্যযুগে সেই ব্যবস্থার প্রাধান্য বিনষ্ট হয়। ভক্তপ্রসাদ মজুমদার তাঁর 'The Decline of Guilds in Early Medieval India' গ্রন্থে বলেছেন, আদি-মধ্যযুগে ভূমিদান ব্যবস্থার ব্যাপকতা বৃদ্ধির ফলে জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার সৃষ্টি হয় আর তার ফলেই নব উন্নীত ভূস্বামী শ্রেণি জমিতে এরিক সংখ্যক কৃষক নিয়োগ করতে থাকে। যার ফলে শিল্প সংগঠনগুলিতে শ্রমিকের অভাষ ওড়ে এবং শ্রেণি সংগঠনগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে।

পূর্বে গিল্ডগুলি ব্যাঙ্কের ন্যায় কার্য সম্পন্ন করত। এখানকার সদস্যরা গিল্ডে তাদের আমানত জমা রাখত এবং প্রয়োজনে গিল্ড থেকে তারা ঋণ গ্রহণ করতে পারত। ফলে ভার্যক্ষেত্রে তাদের সুবিধা হত। কিন্তু আদি-মধ্যযুগীয় কালপর্বে গিল্ডের পরিবর্তে সংঘের প্রাণানদের কাছে তাদের আমানত জমা রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, গিল্ডের আর্থিক সমুশি হ্রাস পায়। ক্রমাগত গিল্ডগুলিতে রাজকীয় হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে তার গঠনগত পরিবর্তন দেখা যায়। সর্বোপরি আর্থিক দুর্বলাতাজনিত কারণে গিল্ডব্যবস্থা বহু অংশে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟