পাবনা বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর অথবা পাবনা বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টিকা অথবা পাবনা বিদ্রোহ
১৭৫৭ র ২৩ শে জুন থেকে ১৯৪৭ এর ১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৯০ বছর ১ মাস ২২ দিন ব্রিটিশ শাসনে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক বিদ্রোহ লড়াই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে যার মধ্যে কৃষক বিদ্রোহ হিসেবে বাংলাদেশের পাবনা বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ৷ জমিদারদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই বিদ্রোহ অধুনা বাংলাদেশে ইউসুফ গাই পরগনা গোনায় প্রথম সূচিত হয় ৷ যেটি বৃহত্তর প্রাবনা জেলায় এবং সিরাজগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত জমিদারগণ অবৈধ পন্থার কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে আবহাওয়ার ও বর্ধিত হারের খাজনা আদায়ের চেষ্টা করত ৷ আর খাজনা না দিতে পারার অজুহাতে প্রায় তারা কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতো ৷ ১৮৫৯ সালে দশম আইন অনুযায়ী তিনটি কারণে জমিদার খাজনা বৃদ্ধি করতে পারতেন যথা -
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
- যদি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জমির খাজনার তুলনায় রায়ত ও কম খাজনা প্রদান করে ৷
- যদি উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় ৷
- যদি কৃষক তার জমির পরিমাণে তুলনায় কম খাজনা প্রদান করে ।
পাবনা বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল উব্কান্তি গ্রামের ঘটনা ৷ যেখানে ৪৩ জন কৃষক বর্ধিত রাজস্বকে অবৈধ বলে আদালতে অভিযোগ জানায় ৷ কিন্তু ১৮৭২ এর রায় জমিদারের পক্ষে যায় । যদিও রাজশাহীর দেওয়ানি জর্জ উক্ত রায় নাকোজ করেন এবং অর্থকরী ফসল হিসাবে পাটের উদ্ভব পাবনা বিদ্রোহ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ৷ পাটকে কেন্দ্র করে এই নতুন গ্রামীণ মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় যারা জমিদারদের প্রতিপক্ষ হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে এই অবস্থায় ১৮৭৩ সালে পাঠের বাজারে ধস নামায় জমিদারগণ খাজনা কমায়নি । অন্যদিকে কৃষকরা ক্রয় ক্ষমতা হারানোর ফলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা দেখা দেয় ৷ এই পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জের কয়েকজন জমিদার খাজনার হার বাড়িয়ে দেয় এবং তাতেই বিদ্রোহের সূচনা ঘটে ৷
১৮৭৩ সালে মে মাসে "দি পাবনা রায়ত লিগ" গঠিত হয় এবং দিনে দিনে তার কার্যক্রম জেলার বৃহত্তর অংশে ছড়িয়ে পড়ে ৷ এই লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন ঈশান রায়,শম্ভুনাথ পাল,মত্রুদ্দি মোল্লা । তারা তাদের পরগণাকে জমিদার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেন ৷ জমিদারদের লাঠিয়াল দের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য একটি বিদ্রোহী বাহিনী গড়ে তোলা হয় এবং কয়েকজন বিশ্বস্তকে বাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয় । প্রারম্ভিক পর্বে পাবনার আন্দোলন অহিংস পথে চলেছিল কিন্তু ক্রমে লীগের শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে তা সহিংস বিদ্রোহের রূপ দেয় । এই অবস্থায় সর্বসাধারণের শান্তি বিবৃত হলে সরকার জেলার শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য স্যার জর্জ ক্যাম্বেল ১৮৭৩ সালে ৪ঠা জুলাই পাবনায় উপস্থিত হন এবং জমিদার ও কৃষকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার নির্দেশ দেন ৷ কৃষকদের অধিকারের মান্যতা দেওয়া হয় ৷ কিন্তু আন্দোলন চলতে থাকে জমিদারদের পূর্ণ উচ্ছেদের দাবিতে ৷ অবশেষে পুলিশ কার্যক্রম এবং ১৮৭৩ থেকে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষজনিত কারণে পাবনার কৃষক বিদ্রোহ নির্মিত হয়ে পড়ে ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
পাবনা বিদ্রোহ সম্পর্কে আপনার সব প্রশ্নের উত্তরঃ
পাবনা বিদ্রোহ কাকে বলে?
পাবনা বিদ্রোহ ছিল ১৮৭৩-৭৬ সালের মধ্যে বাংলার পাবনা জেলায় সংঘটিত এক কৃষক বিদ্রোহ, যা জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়।
পাবনা বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
১৮৭৩ সালে শুরু হয়ে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
পাবনা বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?
জমিদারদের অতিরিক্ত খাজনা আদায়, কৃষকদের ওপর নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতা এবং আইনগত সুরক্ষার অভাবের কারণে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
পাবনা বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
স্বরূপ দত্ত এই বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন।
পাবনা বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখ।
স্বরূপ দত্ত ও শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী।
পাবনা বিদ্রোহের খবর প্রকাশিত হয় কোন পত্রিকায়?
‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় পাবনা বিদ্রোহ সম্পর্কিত খবর প্রকাশিত হয়।
পাবনা বিদ্রোহের গুরুত্ব কী?
এই বিদ্রোহ কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং পরবর্তীতে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পথ সুগম করে।
পাবনা বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?
ব্রিটিশ সরকার ‘রেন্ট কমিশন’ গঠন করে এবং জমিদারদের অবৈধ খাজনা আদায় নিষিদ্ধ করা হয়। কৃষকদের অধিকার কিছুটা স্বীকৃতি পায়।
পাবনা বিদ্রোহ pdf
পিডিএফ নিতে নিজেদের লিঙ্কে ক্লিক করে আমাদের জিমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন