হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের সময় ইঙ্গ মহীশূর সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা কর

হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের সময় ইঙ্গ মহীশূর সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা কর

 হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের সময় ইঙ্গ মহীশূর সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা কর 

হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের সময় ইঙ্গ মহীশূর সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, হায়দার আলী ও টিপু সুলতানের অধীনে মহীশূর কিভাবে ইংরেজদের আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়

ষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে, মহীশূরে হায়দার আনি নামক জনৈক উচ্চাকাঙ্খীর অভ্যুম্মান দক্ষিন ভারতের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিলতর করে তোলেন ৷ এই অবস্থায় অভ্যস্থায় দাক্ষিণ্যাত্যে রাজনীতি ছিল অনিশ্চিত ও অস্থির হায়দ্রাবাদের নিজাম স্বাধীন ভাবে রাজত্ব করলে ও তার অবস্থা ছিল খুবই দুর্বল ৷ নিজামের দুর্বলতার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছিল মারাঠারা কারন নিজামের পক্ষে মারাঠা আক্রমন প্রতিহত করা সম্ভবপর ছিল না ৷ অন্য দিকে আবার ইংরেজ ও ফরাসীরা দাক্ষিণাত্যের অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজ নিজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় অপর হয়ে ওঠে ৷ তবে ইংরেজদের অবস্থা ছিল অনেকটাই অনুকূল নিজ ও তারা মারাঠা মক্তিকে যথেষ্ট ভয় পেত । কিন্তু মারাঠারা শক্তিশালী হলেও তাদের অন্তদন্ধ ও উত্তর ভারতে তাদের রাজ্য বিস্তারের প্রচেষ্টা ইংরেজদের কিছুটা আসস্ত করেছিল । তাই বলা যায় দাক্ষিণাত্যে রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে যে ত্রিমুখী সংঘাত এর সূত্রপাত হয়েছিল তাতে ইংরেজরা একটু সুবিধা জনক অবস্থায় ছিল । কিন্তু মহীশূর ও হায়দারআলি একং টিপু সুলতানের অভ্যুথানে এই সকল রাজনৈতিক অঙ্গকে অনেকটাই ও উলট পালট করে দিয়েছিল ।


দাক্ষিণাত্যে রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রতিদ্ধন্ধিতা হায়দারের অভ্যুত্থানকে মারাঠা বা নিজামের মত ইংরেজরা ও সুনজরে দেখেননি । তবে একথা ঠিক নয় যে, হায়দার প্রথম থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী ছিলেন কিন্তু মূলত দুটি কারনে ইংরেজরাই হায়দারের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন । প্রথমতঃ - ফরাসীদের সঙ্গে হায়দারের হৃদ্যতা ডিটিমদের একেবারেই মনঃপুত ছিল না । তৃতীয় কর্নাটক যুদ্ধের সময় হায়দার ফরাসী দের চার হাজার ঘোড়সওয়ার দিয়ে সাহায্য করেছিলেন ৷ এরপিছনে ইংরেজ বিরোধীতা না থাকলে ও ব্রিটিশরা একে সুনজরে দেখেননি । দ্বিতীয়তঃ - ইংরেজদের সাহায্যপুষ্ট কর্নাটকের নবাব মহম্মদ আলির সঙ্গে হায়দারের কোন সদ্ভাব ছিল না । তিনি মহম্মদ আলির জেষ্ঠ ভ্রাতা ও পরম শত্রু মহফুজ খানকে নিজ রাজ্যে আশ্রয় দান কারেন ৷ মহম্মদ আলির আর এক শত্রু চাঁদা সাহেবের পুত্র রাজা সাহেবকে ঠিনি নিজ কর্মচারী পদে নিয়োগ করেন । ইংরেজরা তাদের মিত্র মহম্মদ আলির প্রতি হায়দারের এহেন বৈরী আচরনে অসন্তুষ্ট ছিলেন ৷ অন্যদিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে হায়দারের ও গুরুতর অভিযোগ ছিল ৷ ভেলোরে ব্রিটিশ সৈন্য সমাবেশকে হায়দার যথেষ্ট সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন । এমতবস্থায় 1766 সালে ইংরেজরা হায়দারের বিরুদ্ধে নিজানের সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ করে হায়দার অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন এই ভাবে এসমশুঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের সূচনা হয় ।


নিজাম ও ইংরেজদের মিলিত বাহিনী মহীশূরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেন । এদিকে নিজামের মিত্র পেশোয়া মাধব রাও মহীশূর রাজ্যের উপর ব্যপক লুন্ঠন চালান । ত্রিশক্তির সম্মিলিত আক্রমনের মুখে পড়ে ও হায়দার মনোবল হারাননি । তিনি কূটনীতির আশ্রয় গ্রহন করে ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রথমে মারাঠাদের মিত্রতা জয় করেন । তারপর হায়দার নিজামের সঙ্গে এক সমঝোতায় এলেন এমতবস্থায় ইংরেজরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ও নিসঙ্গ হয়ে পড়ে । হায়দার ও ইংরেজদের মধ্যে সে যুদ্ধ হয়েছিল এই যুদ্ধে কেউই চূড়ান্ত জয় লাভ করতে পারেনি ।


1768 খ্রীস্টাব্দে নিজাম হায়দারের পক্ষ ত্যাগ করে পুনরায় ইংরেজদের পক্ষে যোগ দেন । হায়দার তখন একাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে সান 1769 খ্রীষ্টাব্দে হায়দার আলি ব্রিটিশ বাহিনী পর্যদুস্ত করে মাদ্রাজের উপকন্ঠে উপস্থিত হন । কোম্পানী কর্তৃপক্ষ মাদ্রাজের পতন আসন্ন দেশে সঞ্জিত হয়ে ওঠেন এবং হায়দারকে সন্ধির প্রস্তাব দেন ‌‌৷ এই সন্ধিতে বলা হয় যে একে অপরের বিজিত অঞ্চল গুলি, ফিরিয়ে দেবে এবং সে কেউ তৃতীয় শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে একে অপরকে সাহায্য করবো।


'মাদ্রাজের সন্ধির দ্বারা ইংরেজ ও হায়দারের মধ্যে কোন সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়নি ৷ কারন এই সন্ধি ছিল কোম্পানীর পক্ষে তীব্র অপমানজনক তাই অচিরেই দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হয় ৷ এদিকে 1770 সালে যখন মাধব রাও মহীশূর আক্রমন করে , তখন ইংরেজ জরা পূর্ব শর্ত অনুসারে কোন সাহায্য পেলেন না । ইংরেজদের এই বিশ্বাসঘাতকতায় হায়দার অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন । তাছাড়া 1770 সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুয়ায়ী মুম্বাই ইংরেজ কর্তৃপক্ষ গোলাবারুদ ও চন্দন কাঠ কেনার একচেটিয়া বিনিময়ের অধিকারে মহীশূরকে গোলাবারুদ প্রভৃতি নানা যুদ্ধের সরঞ্জাম দিতে স্বীকৃত হয় । কিন্তু ইংরেজরা তাদের কথা খেলাপ করলে হায়দার চরম ক্ষুদ্ধ হয় । এদিকে ইংরেজদের সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধের সূত্রপাত হয় দাক্ষিণাত্যে এবং ইংরেজরা ফরাসীদের অন্যতম খাঁটি মাহে দখল করে নেয় ৷ (1779 খ্রীস্টাব্দে)। ৬: নরেন্দ্র কৃষ্ণ-সিনহার (এস.কে. সিস) মতে ইংরেজদের মাহে অধিকার দ্বিতীয় ইস মহীশূর যুদ্ধের মেটা প্রস্তুত করে।


প্রথম ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধে ইংরেজদের ব্যর্থতার সুযোগে হায়দার ইংরেজদের মিত্র রাজ্য কর্নাটকের উপর আক্রমন হানেন এবং রাজধানী আকর দখল করে নেন ৷ ফলে দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয় ৷ ইংরেজরা বিপদ উপলব্ধি করে মারাঠাদের সঙ্গে "সলবাই" এর সন্ধি (1782 শ্রীষ্ঠান্থে) স্বাক্ষর করলে বিবাদ মিটিয়ে নেন এবং নিজামকে সপক্ষে টেনে আনেন । মিত্রহীন হায়দার একাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে মেতে থাকেন ৷ কিন্তু ব্রিটিশ সেনাপতি স্যার আয়ার কূটের যের সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলে "ত্রিনোমালি ও পোর্টোনোডার" যুদ্ধে হায়দার পরাজিত হয় । ইতি মধ্যে কর্কটরোগ হায়দারের মৃত্যু ঘটে।


হায়দারের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র টিপু সুলতান ফরাসী সাহায্য ব্যতিত একাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান । শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা টিপুর সঙ্গে "ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি" (1784 শ্রীযাচ্ছে) স্বাক্ষর করেন । এই সন্দির শর্তানুসারে উভয় পক্ষ পরস্পরের অধি কৃত স্থান গুলি ফেরত দেয় ওয়ারেন হেস্টিংস এই সন্ধিকে "অপমান জনক শান্তি" বলে অভিহিত করেন । ঐতিহাসিক মহীবুল হাসান এই সন্ধিকে "টিপুর কূটনৈতিক জয়" বলে অভিহিত করেন।


টিপু ও ইংরেজদের মধ্যে স্বাক্ষরিত ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি ছিল একটি শূন্য গর্ব চুক্তি (hollowed trace) এর দ্বারা দুপক্ষের কোন বিরোধ মীমাংসা হয়নি ৷ ম্যাঙ্গালোরের চুক্তির পর ইংরেজরা টিপুর বিরুদ্ধে নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে চক্রান্ত করতে থাকে । বড়লাট কর্নওয়ালিস দাক্ষিণাত্যে নিজামের সঙ্গে এক সামরিক চুক্তিতে আবন্ধ হন । টিপু ও হাতগুটিয়ে বসে ছিলেন না ৷ তিনি ইংরেজদের শত্রু ফরাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে ৷ এরপর 1790 খ্রীস্টাব্দে টিপু ইংরেজদের মিত্র রাজ্য ত্রিবাঙ্গুর আক্রমন করলে তৃতীয় মহীশূর যুদ্ধের সূচনা হয় । দুবছর ধরে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের পর টিপু ইংরেজ, মারাঠা ও নিজাম ত্রিশক্তি জোটের আক্রমনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বাধ্য হয়ে "শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি" (1793 খ্রীস্টাব্দে) স্বাক্ষরে বাধ্য হন । এই সন্ধির দ্বারা 3 কোটি ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতি পূরনের টাকার জামিন হিসাবে তার দুই পুত্রকে ইংরেজদের হাতে তুলে দেন ৷


টিপুর পক্ষে "শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি" মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না । মহীশূরে অভ্যন্তরীন সংস্কার ও সেনাবাহিনী সুসংহত করে তিনি নিজ স্বতা বৃদ্ধি করেন ৷ ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর জেনারেল ওয়েলেসলি টিপু কে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহনের নির্দেশ দিলে টিপু ঘৃনাভরে তা প্রত্যাখান করেন । এরপর ইংরেজ ও নিজামের যুগ্ম-বাহিনীর মহীশূর আক্রমণ করেন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ৷ সদাশির ও মলভেরি যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে টিপু রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমে আশ্রয় নিলে ইংরেজদের হাতে তিনি পরাজিত ও নিহত হন ৷ এই ভাবেই দাক্ষিণাত্যে ইংরেজদের প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ স্বাধীন মহীশূর রাজ্যের পতন ঘটে ৷



📛সম্ভাব্য প্রশ্ন গুলি হলঃ--

  • - হায়দার আলী এবং টিপু সুলতানের অধীনে মহীশূর
  • - 18 শতকের ভারতে ব্রিটিশদের ভয়
  • - মাইসোরীয় সামরিক কৌশল
  • - হায়দার আলী এবং ব্রিটিশদের মুখোমুখি
  • - টিপু সুলতানের কূটনৈতিক কৌশল

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟