আকবরের সুলহ-ই-কুল নীতির তাৎপর্য।
![]() |
মুঘল সম্রাট আকবর ছিলেন ভারত তথা বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান শাসক তা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ করে সুলহ-ই-কুল অর্থাৎ ধর্ম সমন্বয়ের নীতি এবং দ্বীন-ইলাহী নামে ধর্মমতের প্রচার মুঘল যুগের শাসকদের ধর্মনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল ৷ সুলহ-ই-কুল কথার অর্থ হলো বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ বা সবাইকে ভালোবাসা । মুঘল সম্রাট আকবর সর্বেশ্বরবাদ ও সুলহ-ই-কুল নীতি ঘোষণা করেছিলেন । সম্রাট আকবরের এই সুলহ-ই-কুল নীতি সমালোচনার ঝড় তুলেছিল । এই ঘোষণা অচিরেই গুরুত্বপূর্ণ আদর্শগত ফলাফলের সূচনা করেছিল । শুধু তাই নয় এই ঘোষণা নীতি ও ধর্মের বিষয়েও ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
অভ্যন্তরীণ দিক থেকে এই নীতির বা সর্বেশ্বর বাদের ঘোষণা ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরেই শিয়া পন্থীদের মধ্যে এক এক ধারনা সৃষ্টি করেছিল । একথা অনস্বীকার্য যে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ধর্ম নিয়ে নানারকম তর্ক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল । যুক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রতি একটি নতুন আগ্রহের জন্ম হয়েছিল এই সর্বৈববাদী ধারণার উদ্ঘাটনের মাধ্যমে, যা একদিকে মৌলবাদীদের হতাশ করেছিল । এটি একটি নতুন ইসলামিক চিত্রকলার ধারার উত্থানের দিকে পরিচালিত করে । ব্রাহ্মণ্যবাদ ও বেদান্ত অধ্যয়নের প্রতি ইসলামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কারণে তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল হিন্দুদের কাছে সত্য তুলে ধরা ।
সম্রাট আকবর নিজে বেশ কিছু সংস্কৃত ভাষার সাহিত্য অনুবাদ করতে শুরু করেন । এর মধ্যে অথর্ববেদ, যোগবশিতা, মহাভারত এবং রামায়ণ উল্লেখযোগ্য । কিন্তু যোগবশিতা অনুবাদ করার প্রাথমিক কারণ ছিল তার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর । আবুল ফজল তার আইন-ই-আকবরীতে বেশ কয়েকটি হিন্দু সম্প্রদায়ের দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, আইন, বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন । ফলস্বরূপ, ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে । কর্মবাদ অত্যন্ত মূল্যবান ছিল বা যথেষ্ট প্রশংসা করা হয়েছিল । পরবর্তীকালে, জাহাঙ্গীরের শাসনামলে, বেদান্তের দর্শন রহস্যবাদ বা অতীন্দ্রীয়বাদের বা তাসাউফের সাথে যুক্ত হয় ।
হিন্দু ধর্মের স্বীকৃতি মুঘল যুগে চরম পরিণতি লাভ করেছিল দারাশুকো-এর সময়কালে । দারা ছিলেন শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র । দারার লেখা মাজমা- উল বাহারেন গ্রন্থে (দুই সমুদ্রের মিলন) তিনি হিন্দু ও মুসলমান বা ইসলামবাদীদের ঈশ্বরের অনুসন্ধানের অনেক মিল লক্ষ্য করেছেন । প্রক্রিয়াটি 1657 সালে শিরু-অন-আসরা রচিত বইটি সম্পূর্ণ হয়েছিল এই গ্রন্থে ৫২ টি উপনিষদের অনুবাদগুলি যৌথভাবে রচিত হয়েছিল । এই 1801 খ্রিস্টাব্দে অ্যাকুয়েটিল ডুপেরন বইটি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করার কারণে এই ঘটনার গুরুত্ব কমানো অসম্ভব । পরবর্তীতে আকবরের সুল-ই-কুল নীতি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে । সমালোচকদের মতে সর্বেশ্বরবাদ একটি সুক্ষ অতীন্দ্ৰীয় শক্তি যা গোপন থাকাই দরকার কিন্তু সম্রাট আকবর এই তত্ত্বকে জনসম্মুখে এনে ভুল করেছিলেন ।
ধর্মের বিষয়ে আকবরের এই উচ্চারণ প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে এবং সাম্রাজ্যের সকল দায়িত্ব পালনে ধর্মনিরপেক্ষতার অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে আকবর ভারত ও বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন ।