দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্ম ছিল অথবা,দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্মমত ছিল

দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্ম ছিল অথবা,দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্মমত ছিল

দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্ম ছিল অথবা,দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্মমত ছিল বা, দীন-ই-ইলাহির মূল নীতি কী ছিল?

দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্ম ছিল

দ্বী
ন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্মত ছিল? দ্বীন-ইলাহী ধর্মমতের সঙ্গে প্রচলিত সুন্নি ধর্মমতের কোন সম্পর্ক আছে? - এ বিষয়ে গবেষকদের মধ্যে কোন ঐক্যমত দেখা যায়নি । যদিও সুন্নি মতের আলোকে বিচার করা হয়, তবে দ্বীন-ইলাহিতে ইসলামের স্বীকৃত পাঁচটি মূল আচরণবিধি নেই ৷ দ্বীন-ই-ইলাহিতে কুরআন ও পয়গম্বর এর কোন উল্লেখ নেই ৷ এই জন্য ঐতিহাসিকগণ বলেছেন যে আকবরের প্রবর্তিত ধর্মমতকে সংস্কারপন্থী ইসলাম না বলে ইসলামের অস্বীকৃতি বলাই ভালো ৷ বদায়ুনি এইজন্যই আকবরকে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগকারী বলে ঘোষণা করেছেন ৷ আকবর ঈশ্বরের আদেশের অনুভূতি তত্ত্ব ও মহাধীরূপে পয়গম্বর এর পুনরায় আবির্ভাবের তথ্য কেউ স্বীকার করেননি।

তিনি শেষ বিচারের তত্ত্বকে অস্বীকার করেন ৷ কাজেই তার প্রবর্তিত দ্বীন-ই-ইলাহী কে একশ্রেনীর গবেষক ইসলামের বিচ্যুতি বলেই ব্যাখ্যা করেন ৷ অপরদিকে অমলেশ ত্রিপাঠির ,ডঃ এল রায় চৌধুরী প্রমুখের মতে আকবর তার ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে গোড়া মুসলমান না হলেও সংস্কারবাদী ও সংশয়বাদী মুসলমান ছিলেন ৷ তার প্রবর্তিত দ্বীন-ই-ইলাহী কোন নতুন ধর্ম মত ছিল না, কারণ এই তথাকথিত ধর্ম মতে কোন ধর্ম শাস্ত্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্ম প্রচারক ছিল না । দ্বীন-ইলাহীর যে আচরণ বিধির কথা জানা যায় এতে এমন কিছু ছিল না যা ইসলামের মূলনীতির বিরোধী ।


আকবর তার শিষ্যদের কাছে যে আনুগত্য দাবি করেন তা হল নিরামিষভোজন, দান ইত্যাদি ৷ আকবর আল্লাহর কথাটির অর্থ ঈশ্বরের মঙ্গলময় তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনের জন্য কোন মন্দির বা মসজিদ নির্মাণ করেননি । অধ্যাপক এস.আর শর্মা অকাট্য যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যে," কোন ধর্ম প্রবর্তনের লক্ষ্য আকবরের ছিল না,আকবরের প্রধান নীতি ছিল সর্ব ঈশ্বরবাদ বা সুলহ-ই-কুল ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের ধর্মীয় উত্তেজনা ও হানাহানি কমানোর জন্য আকবর এই নীতি অনুসরণ করেছিলেন ৷ ডঃ ত্রিপাঠির মতে, দ্বীন-ই-ইলাহী ছিল কতগুলি নৈতিক আচরণ বিধির সম্বন্বয় ৷


যারা আচরণবিধি পালনের জন্য দীক্ষা নিতেন তাদের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের কোন হানি তাতে হয়নি ৷ আকবর কারোর উপরে তার ধর্মমত জোর করে চাপায়নি, আলোকিত মনের অধিকারী সম্রাট আকবর বহু ধরনের উৎস থেকে এক সংহতিপূর্ণ ধর্মনীতির উদ্ভাবন করেন ৷ তিনি সহজেই সকলকে এই ধর্মমতের দীক্ষা দিতেন না ৷ শেষ পর্যন্ত দ্বীন-ই-ইলাহিদের দীক্ষা পত্র তার অন্তত অনুরাগী শিষ্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ ৷ বদায়ুনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে দ্বীন-ইলাহিতে দীক্ষা গ্রহণের জন্য আকবর বল প্রয়োগ বা অর্থের প্রলোভন দেখায় নি । যে ২৫ জন তার মধ্যে একমাত্র হিন্দু ছিলেন বীরবল ৷ ঐতিহাসিক সিমেন আকবরের উদার মানবিক ধর্মীয় আদর্শের উচ্চ প্রশংসা করেছেন , তার মতে শুধু মুসলিম দুনিয়া নয় সমগ্র পৃথিবীতে আকবর ছিলেন অনন্য ৷


অনেকে মনে করেন যে দ্বীন-ই-ইলাহি আসলে কোন ধর্ম মত ছিল না, হিন্দু মুসলিম প্রভৃতি সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মমতের বাইরে সম্রাটের প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্যের বাঁধনে আনার জন্যই তিনি এই ধর্মমত প্রবর্তন করেন ৷ এটি ছিল তার রাষ্ট্রনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় । দ্বীন-ইলাহী প্রবর্তনের মধ্যে আকবরের ধর্মপ্রচারকের ভূমিকা খোঁজার চেষ্টা না করে একজন শাসক কর্তৃত্ব বিদেশের মাটিতে তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা করে তোলার হিসাবে বিবেচনা করা উচিত ৷ ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদ বলেছেন যে," মূলত সারা দেশকে ঐক্যশুদ্ধি গঠিত করার জন্য আকবর দ্বীন-ইলাহি কে ব্যবহার করেছিলেন ৷"


যদি আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার ধর্মনীতি চালু করেন তবে তার কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই মুখ ছিল মুখ্য ৷ অপরদিকে ত্রিপাঠির মতে যদি আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দ্বীন-ই-ইলাহি কে প্রচার করেন তার দ্বারা তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি কারণ লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর মধ্যে মাত্র কয়েক জন লোক দ্বীন-ই- ইলাহি গ্রহণ করার ফলে সম্রাট প্রজা ও জনসমর্থন লাভের থেকে বঞ্চিত হয় । তথাপি দ্বীন-ই-ইলাহি দ্বারা আল্লাহ ও সম্রাট এই দুইয়ের প্রতি একান্ত আনুগত্য দাবির দ্বারা আকবর তার প্রতি অনুগামী এক বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পরিমণ্ডল গঠন করেন ৷ ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের পর এই ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আকবর উপলব্ধি করেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে আকবর দ্বীন-ইলাহী প্রবর্তন করেন ৷


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟