দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্ম ছিল অথবা,দ্বীন-ই-ইলাহী কি নতুন ধর্মমত ছিল বা, দীন-ই-ইলাহির মূল নীতি কী ছিল?

তিনি শেষ বিচারের তত্ত্বকে অস্বীকার করেন ৷ কাজেই তার প্রবর্তিত দ্বীন-ই-ইলাহী কে একশ্রেনীর গবেষক ইসলামের বিচ্যুতি বলেই ব্যাখ্যা করেন ৷ অপরদিকে অমলেশ ত্রিপাঠির ,ডঃ এল রায় চৌধুরী প্রমুখের মতে আকবর তার ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে গোড়া মুসলমান না হলেও সংস্কারবাদী ও সংশয়বাদী মুসলমান ছিলেন ৷ তার প্রবর্তিত দ্বীন-ই-ইলাহী কোন নতুন ধর্ম মত ছিল না, কারণ এই তথাকথিত ধর্ম মতে কোন ধর্ম শাস্ত্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্ম প্রচারক ছিল না । দ্বীন-ইলাহীর যে আচরণ বিধির কথা জানা যায় এতে এমন কিছু ছিল না যা ইসলামের মূলনীতির বিরোধী ।
আকবর তার শিষ্যদের কাছে যে আনুগত্য দাবি করেন তা হল নিরামিষভোজন, দান ইত্যাদি ৷ আকবর আল্লাহর কথাটির অর্থ ঈশ্বরের মঙ্গলময় তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনের জন্য কোন মন্দির বা মসজিদ নির্মাণ করেননি । অধ্যাপক এস.আর শর্মা অকাট্য যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যে," কোন ধর্ম প্রবর্তনের লক্ষ্য আকবরের ছিল না,আকবরের প্রধান নীতি ছিল সর্ব ঈশ্বরবাদ বা সুলহ-ই-কুল ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের ধর্মীয় উত্তেজনা ও হানাহানি কমানোর জন্য আকবর এই নীতি অনুসরণ করেছিলেন ৷ ডঃ ত্রিপাঠির মতে, দ্বীন-ই-ইলাহী ছিল কতগুলি নৈতিক আচরণ বিধির সম্বন্বয় ৷
যারা আচরণবিধি পালনের জন্য দীক্ষা নিতেন তাদের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের কোন হানি তাতে হয়নি ৷ আকবর কারোর উপরে তার ধর্মমত জোর করে চাপায়নি, আলোকিত মনের অধিকারী সম্রাট আকবর বহু ধরনের উৎস থেকে এক সংহতিপূর্ণ ধর্মনীতির উদ্ভাবন করেন ৷ তিনি সহজেই সকলকে এই ধর্মমতের দীক্ষা দিতেন না ৷ শেষ পর্যন্ত দ্বীন-ই-ইলাহিদের দীক্ষা পত্র তার অন্তত অনুরাগী শিষ্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ ৷ বদায়ুনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে দ্বীন-ইলাহিতে দীক্ষা গ্রহণের জন্য আকবর বল প্রয়োগ বা অর্থের প্রলোভন দেখায় নি । যে ২৫ জন তার মধ্যে একমাত্র হিন্দু ছিলেন বীরবল ৷ ঐতিহাসিক সিমেন আকবরের উদার মানবিক ধর্মীয় আদর্শের উচ্চ প্রশংসা করেছেন , তার মতে শুধু মুসলিম দুনিয়া নয় সমগ্র পৃথিবীতে আকবর ছিলেন অনন্য ৷
অনেকে মনে করেন যে দ্বীন-ই-ইলাহি আসলে কোন ধর্ম মত ছিল না, হিন্দু মুসলিম প্রভৃতি সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মমতের বাইরে সম্রাটের প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্যের বাঁধনে আনার জন্যই তিনি এই ধর্মমত প্রবর্তন করেন ৷ এটি ছিল তার রাষ্ট্রনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় । দ্বীন-ইলাহী প্রবর্তনের মধ্যে আকবরের ধর্মপ্রচারকের ভূমিকা খোঁজার চেষ্টা না করে একজন শাসক কর্তৃত্ব বিদেশের মাটিতে তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা করে তোলার হিসাবে বিবেচনা করা উচিত ৷ ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদ বলেছেন যে," মূলত সারা দেশকে ঐক্যশুদ্ধি গঠিত করার জন্য আকবর দ্বীন-ইলাহি কে ব্যবহার করেছিলেন ৷"
যদি আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার ধর্মনীতি চালু করেন তবে তার কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই মুখ ছিল মুখ্য ৷ অপরদিকে ত্রিপাঠির মতে যদি আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দ্বীন-ই-ইলাহি কে প্রচার করেন তার দ্বারা তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি কারণ লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর মধ্যে মাত্র কয়েক জন লোক দ্বীন-ই- ইলাহি গ্রহণ করার ফলে সম্রাট প্রজা ও জনসমর্থন লাভের থেকে বঞ্চিত হয় । তথাপি দ্বীন-ই-ইলাহি দ্বারা আল্লাহ ও সম্রাট এই দুইয়ের প্রতি একান্ত আনুগত্য দাবির দ্বারা আকবর তার প্রতি অনুগামী এক বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পরিমণ্ডল গঠন করেন ৷ ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের পর এই ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আকবর উপলব্ধি করেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে আকবর দ্বীন-ইলাহী প্রবর্তন করেন ৷