মেগাস্থিনিস ও সপ্তজাতিতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর
রাজা সেলুকাসের দূত হিসাবে মেগাস্থিনিস মৌর্বসআট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্থের রাজসভায় আসেন এবং বেশ কিছু বছর তিনি পাটলিপুত্রে অবস্থান করেন। প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ভারতবিষয়ক গ্রন্থ 'ইন্ডিকা' রচনা করেন। যদিও প্রশ্নটি বর্তমানে বিলুপ্ত। কিন্তু এর কিছু কিছু অংশ ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীকালের গ্রিক লেখকরা, জাস্টিন, গুটার্ক, অ্যারিয়্যান ট্যাবো প্রমুখেরা যে বর্ণনা দিয়েছেন ভারত সম্পর্কে সেখানে ইন্ডিকা গ্রন্থের ভাষ্য পাওয়া যায় এবং মৌর্যকালীন ভারতের নানা তথ্য পরোক্ষভাবে পাওয়া যায়। গ্রিক বিবরণী অনুযায়ী, ভারতীয় সমাজ তৎকালীন ৭টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। তবে একটি কথা স্মরণীয়, মেগাস্থিনিস বর্ণ বা জাতি অর্থে কোনো শব্দ ব্যবহার করেননি-তাদের ব্যবহৃত শব্দ হল জেনেস বা মেরোস-যার অর্থ হল সামাজিক গোষ্ঠী।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
মেগাস্থিনিস বা অন্যান্য গ্রিক লেখকদের বর্ণনায় যে ৭টি গোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায়, সেগুলি হল-(1) দার্শনিক, (ii) কৃষক, (ii) পশুপালক ও শিকারী, (iv) শিল্পী ও কারিগর, (v) সৈন্য, (vi) গুপ্তচর এবং (vii) অমাত্য। দার্শনিকগণ সমাজের উচ্চ আসনের অধিকারী। তারা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা-সারমনেস ও গারমনেস। এঁরা হয়ত ব্রাহ্মণ ও শ্রমণর ছিলেন। সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী ছিল কৃষকশ্রেণি। তারা রাজাকে উৎপন্ন ফসলে? এক-চতুর্থাংশ ভাগ হিসাবে দিতেন। তৃতীয় গোষ্ঠী ছিল শিকারী ও পশুপালকগোষ্ঠী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্র অনুযায়ী ব্যাধ, নিষাধ, শবর, পুলিন্দ প্রভৃতি শ্রেণির মানুষরা ছিল। যারা রাষ্ট্রকে কিং কর দিত এবং কৃষিজীবী সমাজের বাইরে অবস্থান করত। শিল্পী ও কারিগররা ছিল চতুর্থ পর্যায়ে। কারিগর ও শিল্পীরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা-রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ যুক্ত ও মুর কারিগর। যারা মুক্ত ছিল রাষ্ট্রকে উপার্জনের একটি অংশ কর হিসাবে দিতেন।।
গ্রিক বিবরণ অনুযায়ী পঞ্চম স্তর ছিল সৈন্য বা যোদ্ধাগোষ্ঠী-এই গোষ্ঠীতে রাজা ও নিকটাত্মীয়রা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে নিযুক্ত তাই এরা করমুক্ত। কিং রাষ্ট্রীয় পরিষেবার বিনিময়ে এঁরা বেতন পেতেন। মৌর্যসমাজে ষষ্ঠ গোষ্ঠী ছিল পরিদর্শক বা গুপ্তচর। গ্রিক লেখকদের মতে, সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিরা এই কাজ করতেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গোপন খবর সংগ্রহ করে রাজাকে পরিবেশন করাই ছিল মূলত এদের কাজ। অমাত্য বা সচিব ছিলেন সপ্তম গোষ্ঠী। এরা সংখ্যায় কম হলেও জ্ঞান। উন্নত চরিত্রের জন্য সম্মানীত সম্প্রদায় হিসাবে সমাজে বিবেচিত হতেন। এই গোষ্ঠীর মত থেকেই উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের নিয়োগ ঘটে থাকে।
গ্রিক বিবরণীতে প্রতিটি গোষ্ঠীর মর্যাদা আলোচিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রতিটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে কীরূপ পরিষেবা দেয় তার ভিত্তিতে। ভারতীয় ঐতিহ্যে সমাজের যে বর্ণ জাতিগত বিভাজন তার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির কোনো সম্পর্ক নেই। মেগাস্থিনিস তথা অন্যান্য গ্রিক লেখকদের বর্ণনা অনুযায়ী ৭টি গোষ্ঠী ওপর-নীচে নয়, বরং যেন পাশাপাশি একের পর এক সাজানো আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় সমাজে বর্ণ জাতি ভিত্তিক শ্রেণিগুলির অবস্থান উচ্চ-নীচ ক্রম অনুযায়ী, অনুভূমিক নয়। আর এইখানেই মেগাস্থিনিসের সীমাবদ্ধতা প্রকট হয়। তিনি গ্রিসে প্রচলিত সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে ভারতীয় সমাজকে এক করে ফেলেছিলেন।
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ -