কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পেছনে কনিষ্কের অবদান আলোচনা ?

কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পেছনে কনিষ্কের অবদান আলোচনা ?

কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পেছনে কনিষ্কের অবদান আলোচনা ?

কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পেছনে কনিষ্কের অবদান আলোচনা ?


ভারত ইতিহাসে একটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও আলোচিত যুগ হল মৌর্যোক্টর যুগ। এই যুগে যে সমস্ত বিদেশী শক্তি ভারতবর্ষ শাসন করে এদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে তাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে একটি অন্যতম শত্ত্বি ছিল কুষাণরা। এই বংশের যেসব শাসকদের হাত ধরে কুষাণ সাম্রাজ্য সমৃদ্ধির চরম শিখরে। পৌঁছেছিল তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন কণিষ্ক। তিনি ছিলেন এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। যাঁর আমলে কুষাণ সাম্রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে। অশোকের পরেই তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রতিষ্ঠিত শাসক। যাঁর সময়কালে।


কুষাণ সাম্রাজ্য রাজ্য বিজয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্র, সমাজ অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক; অর্থাৎ সামগ্রিক দিক সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছিল। বিম কদফিসিসের পর প্রথম কণিষ্ক কুষাণ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তবে তাঁর সিংহাসন আরোহণকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিকই ৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দকে তাঁর সিংহাসনারোহণ কাল বলে মেনে নিয়েছেন । বিম কদফিসিস যে রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন কণিষ্ক সেই পরিকল্পনাকে আরও সম্প্রসারিত করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কণিষ্কের সিংহাসন আরোহণের সময় আফগানিস্তান, সিন্ধুর এক বিরাট অংশ, পাঞ্জাব, পার্থিয়া এবং ব্যাকট্রিয়ার কিছু অংশ কুষাণ প্রজাভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে কণিষ্ক এই সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করেন। মুদ্রা ও এইতা নিদর্শন থেকে তাঁর নিম্বিজয় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আলবিভূণির বিবরণী একে জানা যায় যে, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সন্নিহিত অঞ্চলে তাঁর ভূধিকার বিস্তৃত প্রায়ছিল। আবার অন্যদিকে হিউয়েন সাঙ লিখেছেন যে, গান্ধার ও পুরুষপুর তাঁর প্রেম্যের অন্তর্গত ছিল। চিনা ও তিব্বতি ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে তাঁর পূর্ব ভারত চা সম্পর্কে জানা যায়। কলহনের রাজতরঙ্গিানী থেকে কাশ্মীর জয়ের কথা জানা যায়। এবার কেবলমাত্র ভারতের অভ্যন্তরে রাজ্যজয় করে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না ভারতের প্ররেও তিনি সামরিক অভিযান প্রেরণ করেছিলেন এবং অনেকক্ষেত্রে সাফল্য লাভও ওছিলেন।


যে-কোনো বিশাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার যে একটি অতি হল্লখযোগ্য ভূমিকা থাকে সেটি কণিষ্ক ভালোভাবেই অনুভব করেছিলেন। তাই এই বিশাল শ্রজা পরিচালনা ও সুরক্ষিত করার জন্য একটি সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। শাসনিক কার্যের সুবিধার জন্য কণিষ্ক তাঁর সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন। তিনি এক-একটি বিভাগের শাসনকার্য কখনও একজন কখনও যা দুজন প্রশাসকের হাতে তুলে এজন। যারা মহাক্ষত্রপ এবং ক্ষত্রপ নামে পরিচিত ছিল। লিমক এবং বেম্পসি নামে উত্তর-পশ্চিম ভারতে কণিন্ধের অধীনস্থ দুজন ক্ষত্রপের নাম জানা যায়। আবার বারাণসী ও মথুরা অঞ্চলে মহাক্ষত্রপ খরপল্লান শাসনকার্য পরিচালনা করতো। কণিষ্ক তাঁর যীপরিষদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ নিতেন। মাঘর ছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী। জীমের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন অশ্বঘোষ আর চিকিৎসক ছিলেন চরক। কণিষ্কের অধীনে কৃষ্ণে সেনাবাহিনীও ছিল। কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পিছনে যে গুরুত্বপূর্ণ দিকটির গান ছিল সবথেকে বেশি সেটি হল অর্থনীতি। যা কুষাণ সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। কণিতের সময় কৃষি, শিল্প বিশেষত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সুধি পরিলক্ষিত হয়েছিল। জঙ্গল কেটে সাফ করে জমি ও অনাবাদি জমিতে চাষআবাদ হয়েছিল। তবে কণিন্ধের সময়ে অর্থনীতির যে ক্ষেত্রটি সবথেকে বেশি উন্নতি ঘটেছিল সটি হল বাণিজ্যিক ক্ষেত্র। বিম কদফিসিস-এর সময় চিন ও রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে সে বণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেটি কণিষ্কের হাত ধরে আরও দৃঢ় হয়েছিল। এই যুগে সুশিল্প ছিল যথেষ্ট উন্নত এবং সুতি ও রেশম বস্তু ছিল উল্লেখযোগ্য রপ্তানি দ্রব্য। আবার বাণিজ্যিক লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম ছিল মুদ্রা। কণিষ্ক তাঁর পূর্বের শাসকদের মতো পন্থিরা নির্মাণের ধারা বজায় রেখেছিলেন এবং এর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছিলেন। আর এই বির প্রচলন হয়েছিল ভারত-রোম বাণিজ্যের স্বার্থে। আধার ছোটোখাটো বেচা-কেনার জন্য বহু সংখ্যক তাম্রমুদ্রার প্রচলন করা হয়েছিল।



কণিষ্ক ছিলেন জন্মসূত্রে বিদেশী কিন্তু ভারতকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন স্বদেশরূপে। মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুরাগী ছিলেন, কিন্তু তিনি সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কারণ তাঁর মুদ্রায় যেমন বুদ্ধের মূর্তি উৎকীর্ণ আছে, তেমনই আবার অন্য দেব-দেবীর মূর্তিও খোদিত আছে। যা থেকে তাঁর ধর্ম সম্পর্কে উদার মানসিকতার পরি পাওয়া যায়। কনিষ্ক তাঁর রাজধানী পূরুষপুরে বুন্দের পৃতাস্থি প্রোথিত করে তার ও এক বিশাল চৈতা নির্মাণ করেন, যার উল্লেখ হিউয়েন সাঙ্ এবং আলবিরুণির বিরো পাওয়া যায়। বৌদ্ধধর্মের প্রতি কণিদ্ধের নিষ্ঠার অন্যতম নিদর্শন হল চতুর্থ যৌৎসঙ্গ আহবান, যেটি কুষাণযুগে কনিষ্কের আমলে এক অনন্য নজির ছিল, যাতে প্রায় ৫০০ ৯ি ম যোগদান করেন এবং সভাপতিত্ব করেন বসুমিত্র। এই সম্মেলন থেকে বৃহৎ মূল্যভ সংকলন গ্রন্থ উঠে আসে, তার নাম মহাবিভাষা এবং এই সম্মেলন ছিল মূল সর্বাত্তিবাদীদের।


কুষাণ সাম্রাজা কণিদ্ধের আমলে আর একটি দিক থেকে সমৃদ্ধ হয়েছিল আর সেই হল শিল্প ও সাহিত্যবিষয়ক। কণিষ্ক ছিলেন বিদ্যোৎসাহী, শিল্প ও সাহিত্যের অনুরা পৃষ্ঠপোষক। কুষাণ আমলে সংস্কৃত ভাষার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল, তার পিছনে এই বংশে শ্রেষ্ঠ শাসক কণিতের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। বিখ্যাত বৌদ্ধপন্ডিত বসুমিত্র, নাগার্জু কবি, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ অশ্বঘোষ তাঁর রাজসভা অলংকৃত করেন। তাঁর সময়ে বুদ্ধদের জীবন নিয়ে যেমন বুদ্ধচরিত রচিত হয়েছে তেমনই নাগার্জুন মাধ্যমিক দর্শনের প্রবক্ত করেছিলেন। নাগার্জুনের মধ্য দিয়ে দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে সেতু রচিত হয়েছিল অপরদিকে চরক ও সুশ্রুতের রচনা যথা-চরকসংহিতা ও সুশ্রুতসংহিতা আয়ুর্বেদ শাজে। ভিত্তি রচনা করে। কণিদ্ধের সময়ে মথুরা ছিল ভাস্কর্য শিল্পের একটি অন্যতম প্রথা অনুশীলন কেন্দ্র। মথুরার সমস্ত ভাস্কর্যগুলি নির্মিত হয়েছিল সিক্রি থেকে আনা ক চুনাপাথর দ্বারা। এখান থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছে কণিস্কের ভগ্ন মস্তক মূর্তি। মূর্তিটি ময়া সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে। আবার কণিদ্ধের রাজত্বের প্রথমদিকে নির্মিত দণ্ডায়ন বোধিসত্ত্ব মুর্তিটি সারনাথ জাদুঘরে রাখা আছে। যমুনা নদীর তীরে তিনি বহু সংখ্যক ভূ নির্মাণ করেন এবং পেশোয়ারে তিনি যে চৈতা নির্মাণ করেন তা বহুকাল পর্যটকদে বিস্ময়ের কারণ ছিল।


সর্বশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে কুষাণগণ তাঁদের নিজস্ব যে একটি জগৎ যাঁ করেছিলেন, সেই জগৎ ও নতুন কিছু চিন্তাধারার সন্নিবেশ ঘটিয়ে সেই জগৎকে আর বৃহত্তর জগতে উত্তরণের দায়িত্ব যিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি ছিলেন কুম সম্রাট কণিষ্ক। তিনি একদিকে যেমন রাজ্য বিজয়ের সঙ্গ্যে তাঁর প্রশাসনিক বিভাগকে করে তুলেছিলেন, তেমনই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে রাজকোষকে পূর্ণতা দিয়েছিলেন অপরদিকে আবার শিল্প স্থাপত্য ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। যার মধ্য দিয়ে তিনি কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধিকে ব্যা বৃদ্ধি করেছিলেন এবং বিদেশী থেকে ক্রমশ ভারতীয় হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলে




তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কুষাণ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পেছনে কনিষ্কের অবদান আলোচনা ? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟