Posts

সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক নিরূপণ কর

সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক নিরূপণ কর

সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক নিরূপণ কর

সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক নিরূপণ কর
সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক নিরূপণ কর



কুতুবুদ্দিন আইবকের হাত ধরে ভারতবর্ষে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে ৷ সুলতানি সাম্রাজ্য নামে সুদীর্ঘ ৩২০ বছর তার দায়িত্ব বজায় রেখেছিল । এই সুদীর্ঘ ভারতবর্ষে আদি জনজাতি হিন্দুদের সাহিত্য,সংস্কৃতি,ধর্ম ও জীবন বোধের পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতির অবস্থান এদের এক বিশেষ ধরনের সমন্বয়ে জীবন বোধের জন্ম দেয় ৷ এই সমন্বয় ধারা প্রস্তুত হয়েছিল সাহিত্য, শিল্প,স্থাপত্য ও পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে ৷ এই প্রসঙ্গে ডক্টর সতীশ চন্দ্র বলেছেন,"কয়েক শতাব্দী যাবত দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করেছে অথচ উভয়ের মধ্য কোন বিনিময় গড়ে ওঠেনি।" পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এ কথা চিন্তা করা যায় না আসলে সুলতানি আমলে মুসলিম সুফিবাদ, হিন্দু ভক্তিবাদ ও বৌদ্ধ দর্শন এবং সন্ন্যাসের আদর্শে এক মিলনের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল ৷


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

যদিও এক শ্রিনির ঐতিহাসিক যাদের বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো দীর্ঘকাল হিন্দু মুসলিম পাশাপাশি বসবাস করেও ঐক্যের পরিবর্তে অনৈক্যে বিশেষভাবে ফুটে উঠেছিল ৷ এই ধরনের ঐতিহাসিকদের মধ্যে অন্যতম হলেন জিয়াউদ্দিন বারনি,রমেশ চন্দ্র মজুমদার,কে এম মুন্সী প্রমুখ ৷ ঐতিহাসিক বরণী লিখেছেন যে,"হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছন্ন সম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকট হয়ে উঠেছিল ৷" কে.এম.মুন্সী এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘটিত একাধিক সংঘর্ষের কথা তুলে ধরে অনৈক্য সামনে এনেছেন ৷ ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন," হিন্দু মুসলিম ভাব বিনিময় ছিল নিতান্তই বাহ্যিক তা অভ্যন্তরীণ ছিল না ৷" তবে ভিন্নমত প্রদান করে গবেষক ইউসুফ হোসেন,রামচরণ শর্মা প্রমুখরা এরা সংঘর্ষের চেয়ে সমন্বয়ের ধারাকে সুলতানি যুগের ইতিহাসে প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে অভিমত প্রসন্ন করেছেন ৷


এই সকল সমন্বয়েই মতবাদে বিশ্বাসী ও ঐতিহাসিকরা বলেন ভারতবর্ষের বহু মুসলিম শাসক হিন্দুধর্ম সম্পর্কে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কাশ্মীরের শাসক জয়নাল আবেদীন,বাংলার শাসক হোসেন শাহ বহু হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন মুসলিমরা হিন্দুদের চিকিৎসাবিদ্যা,জ্যোতিষবিদ্যা সংক্রান্ত শিক্ষা যেমন গ্রহণ করেছিলেন ,পাশাপাশি বহু হিন্দু শাস্ত্র ও গ্রন্থ আরবি ও ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেন । বর্ষপঞ্জি সংক্রান্ত শিক্ষার যুগে সংস্কৃত আরবি ফারসি এবং হিন্দি ভাষার মধ্যে পারস্পরিক দেওয়া নেওয়ার গুরুত্ব বেড়েছিল ৷ উর্ধ্বসাহিত্য উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর যোগসূত্র রচনা করেছিলেন ৷ মোহাম্মদ মহসিন এর মতে,"মুসলিম সাহিত্যিকরা হিন্দু সাহিত্য নিয়ে ফরাস ফরাসি সাহিত্য রচনা করেছিলেন ৷" আমির খসরু 'খাজাইন-উল-ফতুহ' হিন্দিতে রচনা করেছিলেন ৷


সামাজিক ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম সমন্বয় সুলতানি যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায় ৷ ঐতিহাসিক আফিফ বলেন,"সুলতানি যুগে হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করতো, সাধারণ মানুষ সত্য পীরের পূজা হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল ৷" ভারতবর্ষের শিল্প স্থাপত্যের দীর্ঘকালের হিন্দু ও বৌদ্ধ রীতির সঙ্গে সুলতানি রাষ্ট্রের পারসিক রীতির প্রবেশ ঘটে ৷ এইভাবে জীবনের সব ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের সমন্বয়ের ফলে ভারতের এক উন্নত সভ্যতা সংস্কৃতি ও জীবন দ্বারা গড়ে উঠেছিল ৷ সুলতানরা গোড়া ইসলামিক নেতাদের পরিবর্তে যোগ্য হিন্দুদের উচ্চ রাষ্ট্রের পদে নিয়োগের শ্রেয় মনে করতেন ৷


জিজিয়া করের ন্যায় কিছু ঘটনা বা আইন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলেও, দীর্ঘকাল পাশাপাশি বসবাসের ফলে দুই সম্প্রদায়ের দূরত্ব ক্রমশ কমে এসেছিল ৷ দুই সম্প্রদায়ের বিদ্বান বিচক্ষণ বিদগ্ধ মানুষেরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠেছিল ৷ স্বল্প কিছু মুসলিম শাসক অবশ্যই হিন্দু মন্দির ও সৌধে আঘাত এনেছিল । যেমন কুতুব মিনারের কাছে একটি জৈন মন্দির কে মসজিদে পরিণত করা হয়েছিল, আজমিরের এক বৌদ্ধ মঠকে মসজিদের রূপান্তরিত করা হয়েছিল ৷


পরবর্তী ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ও হিন্দুর রীতি কে অনুসরণ করে সুলতানি আমলে সামাজিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলিম ভাব বিনিময়ের যে ধারা গড়ে উঠেছিল তার প্রভাব মুঘল যুগেও প্রবাহিত হয়েছিল ৷ আর এই সকল কারণে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক জন মার্শাল মন্তব্য করেছেন," মানব ইতিহাসে দুটি ভিন্ন সভ্যতার এমন মিলন ইতিহাসে বিরল৷"

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক নিরূপণ কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟