দিল্লির সুলতানি কি একটি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র ছিল অথবা,সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র বলা যায়

দিল্লির সুলতানি কি একটি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র ছিল অথবা,সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র বলা যায়

দিল্লির সুলতানি কি একটি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র ছিল 

অথবা,সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র বলা যায়

দিল্লির সুলতানি কি একটি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র ছিল  অথবা  সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র বলা যায়

ধ্যযুগের ভারতে সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে ৷ স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন দেখা যায় যে সুলতানি রাষ্ট্র ধর্মাশয়ী ছিল নাকি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা অভিজাত তান্ত্রিক ছিল ৷ আলোচ্য বিতর্কের সমাধান খোঁজার লক্ষে ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি সুলতানি আমলে কতটা উপযুক্ত ছিল তা জানা দরকার ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ধর্মাশয়ী রাষ্ট্র সাধারণত ধর্মীয় রাজনীতি অর্থাৎ যাজক পুরোহিত বা উলেমাদের দ্বারা সত হয়ে থাকে ৷ একটি ধর্মাশয়ী রাষ্ট্রে ঈশ্বর সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন এবং সেই রাষ্ট্র ধর্মীয় আইন চূড়ান্ত আল্লাহর নামে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন ৷

আরও পড়ুন

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রসঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভিন্ন ভিন্ন মত প্রসন্ন করেছেন ৷ ঐতিহাসিক আর.এস ত্রিপাঠি, ঈশ্বর প্রসাদ, এ.এল.সিবাস্তব প্রমুখ মনে করেন তুর্কি আফগান যুগে ভারত রাষ্ট্র ছিল ধর্মাশয়ী ৷ অন্যদিকে ডঃ মুহাম্মদ হাবিব,সতীশ চন্দ্র প্রমুখ সুলতানি রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ সামরিক এবং অভিজত তান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন ৷ ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনির মতে সুলতানি রাষ্ট্র ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ৷ অন্যদিকে ঈশ্বরের প্রসাদ এর মতে সুলতানদের সীমাহীন ক্ষমতা অবশ্যই ছিল এক বিচারে প্রশাসনিক ধর্মীয় বিচারে সুলতান ছিলেন সর্বসেরা ।

প্রকৃতপক্ষে যেসব ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ধর্মাশয়ী বলে অভিহিত করেছেন তাদের বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,তাদের যুক্তিগুলি যথাযথ ছিল না। বস্তুতপক্ষে খালিফার প্রতি দিল্লির সুলতানদের আনুগত্য ছিল কার্যত বাহ্যিক ৷ তারা ব্যক্তিগত সামরিক প্রতিভার ও শাসন দক্ষতা দ্বারা নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিল এবং সুলতানদের নিয়োগ বা পদ্ধতি কোনটাই খালিফার ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল না । তবে একথা সত্য কেউ কেউ খালিফার অনুমোদন নিয়েছিলেন ৷ এছাড়া তারা মধ্যেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রকে কখনোই ইসলামিক রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেননি । তাই বাস্তবে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশেষত্ব গ্রামীণ প্রশাসনের হিন্দুদের প্রাধান্য থেকে গিয়েছিল এবং হিন্দুরা নিজ নিজ পদে আসিন থেকে গিয়েছিল ৷

সুলতানি যুগের সম্প্রদায়িক দাঙ্গার তথ্য পাওয়া যায় না ৷ এমনকি বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করারও উদাহরণ নেই বললেই চলে ৷ বরণী লিখেছেন যে বল প্রয়োগের চেয়েও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ এবং ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের হাত থেকে নিঃসৃত পাওয়ার লক্ষ্যে সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষ ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ৷ জিয়াউদ্দিন বরনির মতে সুলতানি আমলের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ৷

অধ্যাপক নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মনে করেন শাসকের ব্যক্তিগত উদারতা বা ধর্মান্যতার দ্বারা রাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হত ৷ আসলে দিল্লি সুলতানদের আদেশেই ছিল আইন ৷ তারাই ছিলেন রক্ষক তারাই ছিলেন ভক্ষক ৷ ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে সুলতানরা কোরআনের নির্দেশ মেনে চলতেন না তারা ভোগবিলাস এর মধ্যে জীবন নির্বাহ করতেন ৷ কিন্তু কোরআন ও শরীয়তের নিষিদ্ধ মদ্যপান অবৈধভাবে বহু নারীর সঙ্গে সহবাস সবই সুলতানরা কম বেশি করতেন ৷ সুতরাং সুলতানি আমলে ধর্মীয় আইন বা অনুশাসন সবার উপরে ছিল না ।

সুলতান ইলতুৎমিস এর পূর্ববর্তী সময়ে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে উলেমাদের যথেষ্ট প্রাধান্য থাকলেও পরবর্তী সুলতানদের আমলে উলেমারা রাজনীতি তথা রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থাকে বিশেষ হস্তক্ষেপ করতে পারতেন না ৷ বলবান একবার বলেছিলেন আমার প্রভু ইলতুৎমিস বলতেন যে," সুলতানদের পক্ষে ধর্মবিশ্বাস মেনে কাজ করা সম্ভব নয় ৷" আলাউদ্দিন খলজি,মুহাম্মদ বিন তুঘলক, গিয়াসউদ্দিন বলবন উলামাদের আদেও গুরুত্ব দিতেন না ৷ সুতরাং একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে উলেমাদের যে ভূমিকা থাকে, দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তাও অনুপস্থিত ছিল ৷

পরিশেষে বলা যায় ভারতের সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃত সম্পর্কে অধিকাংশ আধুনিক ইতিহাসবিদের মত হল যে এটি ছিল সামরিক ও অভিজাতান্ত্রিক ৷ সুলতানের ব্যক্তিগত সামরিক দক্ষতার উপর নির্ভর করত তার দায়িত্ব মূলক যা কিছু তারা করতেন তার প্রাধান্য উদ্দেশ্য ছিল সম্রাটের মহানুভব ভাবমূর্তি তুলে ধরা ৷ সুলতানি রাষ্ট্র ছিল একপ্রকার পুলিশ রাষ্ট্র যার প্রধান কাজ ছিল শক্তির দ্বারা রাজ্য জয়,আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও রাজস্ব আদাই ৷ তাই সুলতানরা একটু দক্ষ ও বিশ্বস্ত অভিজাত গোষ্ঠী গড়ে তোলেন ৷ ডঃ মুজিবের মতে প্রকৃতিগতভাবে দিল্লির সুলতানি ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও এক কেন্দ্রিক তাই বলা যায় ভারতের সুলতানি রাষ্ট্র প্রকৃত অর্থে ধর্মস্থায়ী রাষ্ট্র ছিল না।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟