এথিনিও গণতন্ত্র সম্পর্কে কি জানো
![]() |
আধুনিক পৃথিবীর গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বারে বারে আলোচিত হয় প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্র এথেন্সের কথা ৷ কারণ গণতন্ত্রের আদি উৎস স্থল হিসেবে অধিকাংশ পন্ডিত এথেন্সের গণতন্ত্রকেই তুলে ধরে ৷ এথেন্সের গণতন্ত্র কোন একটি নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সময়ে বা কোন এক বিশেষ ব্যক্তি প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠেনি । চেষ্টার মাধ্যমে বহু পরীক্ষা চেষ্টার মধ্যে দিয়ে এথেনীয় গণতন্ত্র সমৃদ্ধি লাভ করে ৷ অর্থনৈতিক সামাজিক রাজনৈতিক এথেন্স তন্ত্রের মূল ভিত্তি প্রস্তুত করে ৷ ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করার লোককে শাসক যে সংস্কার সাধনে প্রবাসী ছিল তার মধ্য দিয়ে এথেন্স গণতন্ত্রের পথে বিকশিত হয় ৷
এখানেও গণতন্ত্র ছিল প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কেননা নাগরিকরা একটি নিরীহত স্থানে সরাসরি রাষ্ট্র পরিচালনার যেমন গ্রহণ করতেন তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনার অংশ নিতেন ৷ অ্যকলেথিয়া এবং গণ আদালতে নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো ৷ রাষ্ট্রের নীতি ও কর্মসূচি প্রকৃত নির্যাত ছিল নাগরিকরা ৷
![]() |
অস্ট্রিয়ান পার্লামেন্ট ভবনের সামনে এথেন্সের পৃষ্ঠপোষক দেবী এথেনার মূর্তি । অন্তত অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে এথেনা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আন্তর্জাতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। |
লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ছিল এথিনিও গণতন্ত্রের একটা বৈশিষ্ট্য ৷ লটারির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসক বাছাই করা হতো ৷ ফলে শাসন কার্য পরিচালনার সুযোগ একটি পরিবার বা পুত্র ৷ অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সেই সুযোগ সবার জন্য সমভাবে প্রদান করা হয়েছিল ৷ গণবিতর্ক ছিল এথিনিও গণতন্ত্রের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য ৷ রাষ্ট্রীয় রীতি নির্ধারণের জন্য এক্লেসিয়ার অধিবেশন বিতর্ক সভা হত সেখানে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের মধ্য দিয়ে উপস্থিত নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো ৷ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের জন্য নির্যাতন ব্যবস্থা এথেনীয় গণতন্ত্রকে অনেক বেশি কার্যকারি করে তুলেছিল ৷
এথেন্সের গণতন্ত্রের কোন প্রকার স্থায়ী আমলাতন্ত্র ছিল না ৷ নাগরিকদের কোন প্রত্যক্ষ পদ ছিল না ৷ যুদ্ধের সময় ট্রেনিং সর্বপ্রথম ভূমিকা আরোপ করেন ৷ এতে নিয়োগ গণতন্ত্র সম্পর্কে হেরোডোটাস বলেন, "এথেন্সের গণতন্ত্র ছিল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আদর্শ স্বরূপ ৷" সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ব্যক্তি স্বাধীনতা এখানেও গণতন্ত্রের মূল বৃদ্ধি ৷ সেই কারণে গবেষক ডি সায়কফন এথেনীয় গণতন্ত্রকে "The clacical athemian democracy" বলেও আখ্যায়িত করেছেন ৷
![]() |
1850 এর লিথোগ্রাফ 1848 সালে ফ্রান্সে সার্বজনীন পুরুষ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাকে চিহ্নিত করে |
তবে এথেনীয় গণতন্ত্রকে অনেকে প্রকৃত গণতন্ত্র হিসাবে মেনে নেয়ার পক্ষপাতি নয় ৷ এই সকল গবেষকদের মধ্যে অর্থনীতি গণতান্ত্রিকী কারণ হলো প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক গণতন্ত্র ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র না থাকায় রাজনৈতিক গণতন্ত্র পঙ্গু উপায় হয়ে পড়েছিল ৷ গবেষকদের মতে সে যুগে গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ছিল মূলত এটিকার স্বামী এবং এথেন্সের বণিক সম্প্রদায় তের হাতে ৷ এই রাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ৷ এথেন্স এর বিপুল সংখ্যক শিলুক ক্রীতদাস যার সমস্ত ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল ৷ এটি আগেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না ।
এথেন্সের নারীদের ভোটাধিকার ছিল না ৷ বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়নি । এথেন্স একটি সময় সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করে মিত্র রাষ্ট্রগুলিকে এবং সেখান থেকে জনগণকে প্রদানত করেছিল যা ছিল সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী ৷ এথেন্সের নারী ক্রীতদাস এবং বিদেশীদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ফলে এই গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার মাত্র ¼ মার্কসীয় ঐতিহাসিকদের মতে এথেনীয় গণতন্ত্র ছিল দাস মালিকদের শাসন ৷
![]() |
1901 সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের উদ্বোধনকে চিত্রিত করা চিত্রকর্ম, যা 20 শতকের প্রথম দিকে গণতন্ত্রের প্রথম তরঙ্গের অংশ হয়ে ওঠে। |
এথেনীয় গণতন্ত্রের সমালোচকরা আরো বলেন একে গণতন্ত্রের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সুবিধা প্রাপ্ত শ্রেণীর সংখ্যা ৷ যত সম্ভব কর্মকাররা অর্থাৎ বেতনভুক্ত মানুষের সংখ্যা না বাড়ানো একটা সময় পর্যন্ত পিতা-মাতার মধ্যে পিতা এথিনিও হলে তার সন্তান এথেন্সের নাগরিকত্ব পেতো ৷ কিন্তু সেই আইনে বলে পিতা মাতা উভয়ই এথেনীয় হলে তবে সন্তান এথেনীয় নাগরিকত্ব পাবে ৷ এই প্রক্রিয়া ছিল নাগরিকতা সংকুচিত করার প্রয়াস মাত্র যাকে আদৌ গণতন্ত্রসম্মত বলা যায় না ।
তবে সমালোচকরা এথেন্সের ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন তার মতে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে ৷ তবে এটা ভুললে চলবে না যে আজকের গণতন্ত্রের চরম বিকাশের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কয়েক হাজার বছর পূর্বের গণতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করতে যাওয়া সঠিক হবেনা ৷ কারন সেই সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা খুব বেশি সচ্ছল ছিল না ৷ চরম একনায়ক তান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে যে গণতান্ত্রিক পরিষদ গড়ে উঠেছিল তা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ৷ ক্রীতদাস ব্যবস্থা ছিল সেই সময় বিশ্ব অর্থনীতির অপরিহার্য অঙ্গ । তাই এতে অস্বীকার করা সহজ ছিল না তাই সক্রেটিস,প্লেটো,অ্যারিস্টটল জেনফল প্রমুখরা এথেনীয় গণতন্ত্রের ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার কথা বললেও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের জনগণের মতকে চরম প্রাধান্য প্রদান, লটারির মাধ্যমে শাসন ক্ষমতা সকলের মধ্যে সম্প্রসারিত করা এবং মুখোমুখি বিতর্ক করার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের নীতি পর্যালোচনা করা ৷ এই সমস্ত কিছুই মধ্য দিয়ে প্রাচীনকাল যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল তা যথেষ্ট প্রশংসা যোগ্য ৷